০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের

লেবাননে স্থল অভিযান শুরু ইসরাইলের
-

ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরাইলের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। ইসরাইলজুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানোর নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বার্তায় দেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় সেনা কমান্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে। বার্তায় বলা হয়েছে, ‘সাইরেন শুনলে আপনাকে অবশ্যই একটি সুরক্ষিত এলাকায় যেতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।
লেবাননে ইসরাইলের বোমা হামলায় ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর এর বদলা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তেহরান।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরুর পর ইসরাইলের আইডিএফ মুখপাত্র ডেনিয়েল হেগারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সচল আছে। আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম’। ইসরাইলি জনগণকে রক্ষায় যা যা করা দরকার তা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে (জনগণকে) জীবন রক্ষাকারী নির্দেশনা মানতে হবে। আপনাদের নিরাপত্তা জারি করা প্রতিটি নির্দেশের যথাযথ অনুসরণ করতে হবে।

লেবাননে স্থল অভিযান শুরু ইসরাইলের : দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত এলাকায় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে স্থল অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্তের নিকটবর্তী দক্ষিণ লেবাননের গ্রামগুলোতে মঙ্গলবার ভোরে এ অভিযান শুরু হয়েছে। তাদের ভাষায়, এ স্থল অভিযান কেবল হিজবুল্লাহর অবস্থানে ‘সীমিত’ রাখা হয়েছে, যারা উত্তর ইসরাইলের বাসিন্দাদের জন্য সম্প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান বাহিনী ও গোলন্দাজ বাহিনী এ অভিযানে স্থলবাহিনীকে সহায়তা করছে। লেবাননের সীমান্তবর্তী শহর আইতা আল-শাবের বাসিন্দাদের বরাতে রয়টার্স লিখেছে, ভারী গোলাবর্ষণের পাশাপাশি মাথার ওপর হেলিকপ্টার ও ড্রোনের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তারা। লেবাননের সীমান্তবর্তী শহর রেমিশে দফায় দফায় ফ্লেয়ার ছোড়া হয়, যাতে রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে।
লেবাননে ইসরাইলের স্থল অভিযানে মার্কিন সমর্থন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করেছে। সোমবার রাতে লেবাননে প্রবেশের দাবি করে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এ অভিযান ‘সীমিত, স্থানীয় এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক’, যা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে। তবে এ আক্রমণ হিজবুল্লাহসহ ইরান-সমর্থিত অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতের ঝুঁঁকি আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে আলোচনায় ইসরাইলের স্থল আক্রমণকে সমর্থন করে বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহর অস্ত্র মজুত ও আক্রমণের উপকরণ সরানো দরকার।

লেবাননে ইসরাইলে স্থল অভিযানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও জাপান। আমিরাত লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান লেবাননের জনগণের জন্য জরুরি ত্রাণ হিসেবে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আল-খুলাইফি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বলেছেন, লেবাননে আক্রমণ আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি লেবাননের জনগণকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব। জাপানও ইসরাইলি আক্রমণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সংঘাতের অবিলম্বে সমাপ্তির আহ্বান জানিয়েছে। জাপান সরকার লেবাননে তাদের ৫০ জন নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও পদক্ষেপ নিয়েছে।

লেবাননে ইসরাইলি সেনাদের প্রবেশের তথ্য মিথ্যা : হিজবুল্লাহ
লেবাননের ভেতর সীমিত আকারে স্থল হামলা শুরু হয়েছে বলে মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতি জানায় দখলদার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তবে স্থল হামলা চালানোর এ দাবি মিথ্যা বলে পাল্টা দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। মঙ্গলবার সকালে এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। তারা বলেছে, আমাদের যোদ্ধা ও ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে সরাসরি কোনো সংঘর্ষ হয়নি। তবে আমরা এমন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি। এর আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছিল, ইসরাইলি সেনারা লেবাননে প্রবেশ করেছে। তবে যতটুকু তারা এগিয়েছে সেটুকু জায়গা হেঁটে যাওয়া যাবে। সূত্রটি আরও জানায়, হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের সরাসরি কোনো সংঘর্ষ হয়নি এবং গাজায় যেমন স্থল হামলা চালানো হয়েছিল এটি তেমন নয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে হিজবুল্লাহর মিডিয়া রিলেসন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আফিফ বলেছেন, ‘উগ্র ইহুদিবাদীরা লেবাননে দখলদার সেনাদের প্রবেশের যত দাবি করেছে তার সব মিথ্যা।’ ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘ভুয়া’ স্থল হামলার ব্যাপারে মঙ্গলবার সকালে বলে, ‘কয়েক ঘণ্টা আগে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো লক্ষ্য করে দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে ‘নির্দিষ্ট এবং সীমিত’ স্থল অভিযান শুরু করেছে সেনারা। ব্লু লাইনের কাছে অবস্থিত হিজবুল্লাহর এ অবকাঠামোগুলো ইসরাইলি শহরগুলোর জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’ তবে স্থল হামলা শুরুর দাবি জানানোর আগে লেবাননের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে দখলদার ইসরাইলের সেনারা।

লেবাননের মানবিক সঙ্কট : লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, তার দেশ ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময় পার করছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরাইলি আক্রমণে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতিসঙ্ঘের সহায়তা চেয়েছেন এ লেবানিজ নেতা। জাতিসঙ্ঘ এরই মধ্যে লেবাননের জন্য ৪২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের জরুরি সহায়তা তহবিল ঘোষণা করেছে। তবে সংস্থাটির মানবিক সমন্বয়কারী ইমরান রিজা বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ না হলে কোনো পরিমাণ সহায়তাই যথেষ্ট হবে না।

ইসরাইলের ‘নর্দান অ্যারোস’ অভিযান : ইসরাইল ‘নর্দান অ্যারোস’ নামে এ স্থল অভিযান শুরু করেছে, যা ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর লেবাননে প্রথম বড় ধরনের সামরিক অভিযান। ইসরাইলি বাহিনীর দাবি, এ আক্রমণের উদ্দেশ্য হিজবুল্লাহকে লিটানি নদীর উত্তরে ঠেলে দেয়া, যা ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। ইসরাইল জাতিসঙ্ঘের রেজলুশন ১৭০১ মেনে চলার কথা বললেও, আক্রমণের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট সোমবার উত্তর ইসরাইলের স্থানীয় কাউন্সিলপ্রধানদের বলেছিলেন, লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে শিগগিরই যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায় শুরু হবে। এক বছরের সীমান্ত যুদ্ধে হিজবুল্লাহর রকেট হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত ইসরাইলিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণেও এ অভিযান সহায়ক হবে।
বলপ্রয়োগের আহ্বান এরদোগানের : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি হামলা বন্ধ করতে না পারলে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদকে বলপ্রয়োগের সুপারিশ করতে হবে। সোমবার আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি। লেবাননে ইসরাইলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানান এরদোগান। রয়টার্স ও বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

লেবাননে ৯৫ জনকে হত্যা : বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে আরো বিমান হামলা চালানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে। সোমবার লেবাননে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৯৫ জন নিহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলার কারণে দেশজুড়ে ১০ লাখ মানুষ এরই মধ্যে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়ে থাকতে পারে। তার মতে, এটাই ‘সবচেয়ে বড়’ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা।


আরো সংবাদ



premium cement