০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

রেমিট্যান্সে সেপ্টেম্বরে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি ৮০.২১ শতাংশ

-

ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। গত মাসে (সেপ্টেম্বরে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮০ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। গত আগস্টেও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৯ শতাংশ। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রবাসী বাংলাদেশীরা বৈধপথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে হুন্ডি তৎপরতা কমে গেছে। যার প্রভাবে দেশে রেমিট্যান্সের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। সেপ্টেম্বরে সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪০ কোটি ডলার এবং অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগে পদে পদে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) হুন্ডি তৎপরতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধাগ্রস্ত হতো। বিশেষ করে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া যেত না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জিএফআইর মতে, গত ১৫ বছরে ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বেড়ে গেছে সুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমানো টাকার পরিমাণ। কিন্তু দেশ-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের চিত্র বের হয়ে এলেও কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিএফআইইউ। উপরন্তু এস আলমের বিরুদ্ধে যেন টাকার পাচার সংক্রান্ত কোনো রকম তদারকি না করা হয় সেজন্য উচ্চ আদালত থেকে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। নির্বিঘেœ টাকা পাচার বেড়ে যাওয়ায় প্রতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এক বিলিয়নের ওপরে কমে যাচ্ছিল। এভাবে ৪৮ বিলিয়নের রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নে নেমে এসেছিল।

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের স্থানে গভর্নর হিসেবে মনোনীত করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুরকে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করার পরই বিভিন্ন বিভাগ ঢেলে সাজাতে থাকেন। বিএফআইইউ চিফ মাসুদ বিশ্বাস পদত্যাগ করেন। ডেপুটি হেড অব বিএফআইইউকে বদলি করে দেয়া হয়। এর ফলে নতুন উদ্যমে বিএফআইইউতে কাজ শুরু হয়েছে। তবে ব্যাংক খাতে বড় লুটেরা এস আলম ও তার পিএস আকিজ উদ্দিনের সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তা এখনো তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে একজন চুক্তিভিত্তিক ডেপুটি গভর্নর ও অন্য বিভাগের কয়েকজন চিহ্নিত এস আলমের সুবিধাভোগী নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক এখনো তৎপর রয়েছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। এরপরও এস আলম, আকিজউদ্দিনসহ বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিতসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এর ফলে হুন্ডি তৎপরত কমে আসছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হয়েছেন। সব মিলেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২২২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত বছরের আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এতে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৮০ দশমিক ২১ শতাংশ।
ব্যাংকভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে ৪০ কোটি ২৯ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল অগ্রণী ব্যাংক ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে ট্রাস্ট ব্যাংক সাড়ে ২৪ কোটি ডলার। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল