৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কারাগারে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান

কারাগারে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান -


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা ষড়যন্ত্রের মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে মাহমুদুর রহমানের ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে ডিভিশন দিতে নির্দেশ দেন।
এদিকে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীরা জানান, আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর তারা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল ও জামিন আবেদন করবেন। তারা বলেন, আমরা আশা করি আপিলে মাহমুদুর রহমান জামিন পাবেন এবং তাকে খালাস দেয়া হবে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন শুক্রবার দেশে ফেরা মাহমুদুর রহমান। আদালতের আদেশের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি প্রিজনভ্যানে করে তাকে কারাগারে নেয়া হয়। এসময় আইনজীবীরা ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এদিকে আত্মসমর্পণের আগে মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আজকে আত্মসমর্পণ করেছি। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে। এ মামলা পুরোটাই সাজানো ও সম্পূর্ণ মিথ্যা। তৎকালীন সরকার ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা চালু রাখতে আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে। আদালতে মাহমুদুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন ও সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ।
আদালতে শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, ২০১৫ সালে এই মামলার জন্ম হয়। এটা একটা পাতানো মামলা। এখানে মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, গত ১৬ বছর একটি সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। ওই সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন ছিল না। জোর করে তারা ক্ষমতায় ছিল। মাহমুদুর রহমান দৃঢ়ভাবে ওই সরকারের সমালোচনা করতেন। সেই কারণে মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বহুবার কারাগারে যেতে হয়েছে। তাকে হত্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শুধু তাই না, একটা পর্যায়ে তাকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। আইনজীবীরা বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করছেন। আমরা আশা করছি আদালতের আদেশ দ্রুত পাবো এবং জেলখানায় তিনি যতদিন থাকবেন, ডিভিশন পাবেন।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, এ আদালত থেকে গত বছর মাহমুদুর রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এক ধারায় পাঁচ বছর আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাজার পরিমাণ বেশি হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এ আদালত এ মামলায় জামিন দিতে পারেন না। আমরা অতিদ্রুত মহানগর দায়রা আদালতে মাহমুদুর রহমানের জামিন আবেদন করব। আশা করি তিনি জামিন পাবেন।

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নগর সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, আদালতের আদেশের সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে, খুব দ্রুত আপিল করা হবে। আশা করি দুই-এক দিনের মধ্যে আপিল আদালতে খালাস চেয়ে আবেদন করা হবে।
গত বছরের ১৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য চারজন হলেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
এদিকে এই মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ২২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সাজা স্থগিত করা হলো। তবে তাদের আত্মসমর্পণ করে আপিল করতে হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন থানায় এ মামলা করেন। অসুস্থ মাকে দেখার জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছেন মাহমুদুর রহমান।

মাহমুদুর রহমানের মুক্তিদাবিতে মিছিল-সমাবেশ
মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজায় কারাগারে পাঠানো দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানের মুক্তিদাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, নায়েবে আমির মজিবুর রহমানসহ অন্য নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
খুলনা ব্যুরো জানায়, ড. মাহমুদুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন খুলনার সাংবাদিক সমাজ। গতকাল দুপুরে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা ও আমার দেশ পরিবারের যৌথ উদ্যোগে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পিকচার প্যালেস মোড় ঘুরে প্রেস ক্লাবের সম্মুখে সমাবেশে মিলিত হয়।
এমইউজে খুলনার সভাপতি মো: আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানার পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা দেন বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন, সাবেক সহসভাপতি মো: রাশিদুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী সদস্য শেখ দিদারুল আলম ও এইচ এম আলাউদ্দিন, আবুল হাসান হিমালয়, মিজানুর রহমান মিলটন, আশরাফুল ইসলাম নূর, অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও কে এম হুমায়ুন কবীর।
বক্তারা বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও চক্রান্ত ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। ভারতে আশ্রয় নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এ মাটি থেকে ভারতীয় আগ্রাসনের শেকড় উপড়াতে ও লুটেরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মাদের কবর রচনা করতে সাহসী কলমযোদ্ধা মাহমুদুর রহমানকে কারামুক্ত করার এবং আমার দেশ চালু করে জনগণের হাতে পৌঁছে দেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
বগুড়া অফিস জানায়, মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি ও কারাগারে প্রেরণের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে বগুড়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আহবায়ক ওয়াসিকুর রহমান বেচানের সভাপতিত্বে সাংবাদিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বগুড়া প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব সবুর শাহ্ লোটাস, যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল হাসান রানু, আব্দুর রহিম বগরা, মির্জা সেলিম রেজা, গনেশ দাস, এফ শাহজাহান, রেজাউল হক বাবু, মমিনুর রশীদ শাইন, আতাউর রহমান মিলন, আব্দুর রহিম প্রমুখ।

অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিতে হবে : হেফাজত
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহবান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, এটা অবিশ্বাস্য যে, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মিথ্যা মামলার বানোয়াট সাজায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সরকার চাইলে স্ব-উদ্যোগে নির্বাহী আদেশবলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা-১ অনুযায়ী মাহমুদুর রহমানের কথিত দণ্ড স্থগিত করে ভুয়া মামলার কার্যক্রম বাতিল করে তাকে সসম্মানে নতুন এই বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দিতে পারত। কিন্তু তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলার বানোয়াট সাজায় জেলে ঢোকানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।
তারা আরো বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও স্বৈর-ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশপ্রেমিক ঈমানদীপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সবার জন্য অনুপ্রেরণা। গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে উপর্যুপরি জেল-জুলুম ও নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। আজকের এই মুক্ত বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতেই তাকে জেলে যেতে হলো। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এরচেয়ে লজ্জার আর কিছু হয় না। সরকারকে এর জবাব দিতে হবে এবং একইসাথে অবিলম্বে নির্বাহী ক্ষমতাবলে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement