২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
জাতিসঙ্ঘে ড. ইউনূসের ভাষণ

বিশ্বমঞ্চে বিপ্লবের বীরত্বগাথা

জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস হনয়া দিগন্ত -


বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বীরত্বগাথা তুলে ধরলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় দেয়া যুগান্তকারী ভাষণে তিনি গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অবদান তুলে ধরেন।
সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণ-অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের এই আন্দোলন আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।

নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে সাধারণ আলোচনায় তিনি এ ভাষণ দেন। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বাংলাদেশের ছাত্ররা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে কিভাবে সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এবং মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করেছে তা তুলে ধরেন। ছাত্রদের নেতৃত্বে জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।’
গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কিভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।

বাংলাদেশের তরুণরা যে প্রজ্ঞা, সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে তা আমাদের অভিভূত করেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করেও বুক পেতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল এই তরুণরা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল তরুণরা। স্কুলপডুয়া কিশোর-কিশোরীরাও নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। তিনি বলেন, আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে। তপ্ত রোদ, বৃষ্টি, মৃত্যুভয়কে তোয়াক্কা না করে তারা সত্য ও ন্যায়সঙ্গত আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে দীর্ঘকালব্যাপী রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিচালনা করার অশুভ ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করেছিল। জনগণের এই আন্দোলনে আমাদের জানা মতে আটশত-এরও বেশি জীবন আমরা হারিয়েছি স্বৈরাচারী শক্তির হাতে।
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে আরো বলেন, ছাত্র-জনতার অদম্য সঙ্কল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এসেছে। তাদের এই সম্মিলিত সঙ্কল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে যুবসমাজ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে এবং প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে আমাদের গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল, সেই মূল্যবোধকে বহু বছর পরে আমাদের ‘জেনারেশন জি’ (জেন জি) নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে। এরকমটি আমরা দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময়েও।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক যুবসমাজের ভূয়সী প্রশংসা করে তার ভাষণ শেষ করেন। তিনি বলেন, তরুণরা প্রমাণ করেছে মানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার অভিপ্রায় কোনো উচ্চাভিলাষ নয়। বরং এটা সবার নিশ্চিত প্রাপ্য। বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় বিশ্ববাসীকে স¤পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের ছাত্র-জনতা তাদের অদম্য সঙ্কল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি বিশ্বসম্প্রদায়কে নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সমতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যে রাষ্ট্রকাঠামো দুঃসহ হয়ে গেছে, তার পুনর্গঠনের জন্য আমাদের তরুণেরা এবং দেশের আপামর জনসাধারণ একমত হয়ে আমার ও আমার উপদেষ্টা পরিষদের ওপর আস্থা রেখে সরকার পরিচালনার এক মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছে। তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা গভীর বিস্ময় ও হতাশার সাথে দেখতে পাচ্ছি কিভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। কিভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, কিভাবে জনগণের অর্থসম্পদকে নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল, কিভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এককথায়, প্রত্যেকটি পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এরকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য। ড. ইউনূস তার ভাষণে উল্লেখ করেন বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সকল রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবে, ভয়-ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
জাতিসঙ্ঘসহ বহুপক্ষীয় বিশ্বকাঠামোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে সব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পক্ষভুক্ত সেগুলো প্রতিপালনে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ভাষণে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বহুমুখী সঙ্কটে জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ এবং সঙ্ঘাতের ফলে ব্যাপকভিত্তিতে মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর উদ্বেগ ও নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয় বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য। ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়বদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী এবং শিশুদের সাথে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি আনতে পারবে, তাই জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবাইকে এর বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, গত আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই যুদ্ধের প্রভাব সর্বব্যাপী। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। আমরা তাই উভয়পক্ষকেই সংলাপে বসে বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার ঢাকার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার কথা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানালেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করে বলেছেন, জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশের সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব এ সমর্থন ব্যক্ত করেন। জাতিসঙ্ঘের আবাসিক টিম আপনাকে সহায়তা করতে চায় উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, সদ্য গৃহীত জাতিসঙ্ঘের ‘প্যাক্ট অব দ্য ফিউচার’ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং এর প্রণোদনামূলক অর্থায়ন দেশটির জন্য বিশেষ সহায়ক হবে। গুতেরেস বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেন, তারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই আন্দোলন শেখ হাসিনার নির্মম স্বৈরাচারের অবসান ঘটায়। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে উপস্থিত হতে পেরেছি কারণ তরুণরা নতুন বাংলাদেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে।’ বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের ওপর এর প্রভাব, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং গণ-আন্দোলনের সময় সংঘটিত নৃশংসতার তদন্তে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান মিশনের বিষয়ে আলোচনা হয়।

সংস্কার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্লিংকেনের
বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করতে ওয়াশিংটন একসঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে চুরি হয়ে যাওয়া কোটি কোটি টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করবেন। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৈঠক করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভালো অংশীদার হতে চাই। আমরা বাংলাদেশের জন্য দ্রুত কাজ করব। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপরিসীম’ শ্রদ্ধা রয়েছে এবং দেশের সঙ্কটপূর্ণ সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করায় তার প্রশংসা করেন তিনি।

নতুন যাত্রায় মার্কিন ব্যবসায়ীদের অংশীদারিত্ব চান ড. ইউনূস
বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের অংশীদারত্ব চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বহুমুখী সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সাথে এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, আমি এখানে আপনাদের কথা শুনতে এসেছি এবং আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশ কিভাবে আরো উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ চাই। আমাদের এই নতুন যাত্রায় আপনাদের অংশীদারত্ব চাই।
‘ইউএস-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)।

এ সময় ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ শুধু ১৭ কোটি মানুষের উদীয়মান বাজার নয়। এটি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ভোক্তা বাজারের একটি হিসেবে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনের ৩০০ কোটি মানুষের বাজার ধরার সম্ভাবনাময় জায়গায় রয়েছে। নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো দেশই সমস্যামুক্ত নয়। বাংলাদেশও সমস্যামুক্ত নয়। তবে আমি একটি বিকাশমান বাংলাদেশ দেখি, যে দেশটি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির অধীনে সরবরাহ কাঠামো বৈচিত্র্যকরণের দিকে নজর দিচ্ছে, বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে সেই লক্ষ্য পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে ওঠার উপযুক্ত। আপনাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সরবরাহ কাঠামো বৈচিত্র্যকরণে আমরা সবকিছু করব। ড. ইউনূস আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান রফতানির দেশ এবং আমাদের বিদেশী বিনিয়োগের শীর্ষ উৎস। কিন্তু বাণিজ্য অস্বাভাবিক রকমের কম।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি, আপনাদের কিছু কোম্পানি মুনাফা দেশে ফেরত পাঠাতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। স্পষ্টভাবে বললে, কয়েক বছর ধরে আমরা একটি বৈদেশিক হিসাব ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই পরিস্থিতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাদের সরকার এখন এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোরব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর হ্রাস না পায়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইউএসবিবিসির সভাপতি অতুল কেশাপ বক্তব্য দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement