২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

লেবাননে ইসরাইলের হামলা চলছেই

এক দিনে নিহত ৯২
-


লেবাননে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশজুড়ে হওয়া সর্বশেষ হামলায় আরো ৯২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দেড় শতাধিক মানুষ। এতে করে গত কয়েক দিনে লেবাননে ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে গেল। গতকাল শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদ মাধ্যমটি বলছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় লেবাননে শেষ ২৪ ঘণ্টায় আরো ৯২ জন নিহত হয়েছেন বলে লেবানিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বেশ কয়েকটি বিবৃতিতে তারা বলেছে, ইসরাইলি হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রামে ৪০ জন, পূর্বাঞ্চলের দুটি এলাকায় ৪৮ জন এবং মধ্য মাউন্ট লেবানন গভর্নরেটের আগে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরাইলি হামলায় এদিন মোট ১৫৩ জন আহত হয়েছেন।
সব মিলিয়ে গত সোমবার থেকে ইসরাইলের বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননে ৭০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু লেবাননে উত্তেজনা কমানোর ক্রমবর্ধমান আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘পূর্ণ শক্তি’ দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ না হিজবুল্লাহ সীমান্তজুড়ে রকেট নিক্ষেপ বন্ধ না করে, ততক্ষণ হামলা চলবে।

অন্যদিকে ইসরাইলের সেনাবাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ২২০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। সেনাবাহিনী বলেছে, উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের আদেশ অনুসরণ করে ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো গত দিনে এসব ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’ আক্রমণ করে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার এই লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে সামরিক ভবন, ইসরাইলে গোলাবর্ষণে ব্যবহৃত লঞ্চার এবং দক্ষিণ লেবাননে সন্ত্রাসবাদী (হিজবুল্লাহ) সংগঠনের অস্ত্রের গুদামও রয়েছে।
গত সোমবার থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের দাবি, হিজবুল্লাহকে লক্ষ করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। গত সোমবার থেকে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংঘাত নিরসনে সমাধানের পথ বের করতে গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ১১টি দেশ ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে তিন সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রস্তাব দেয়।

জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ইসরাইলি দূত ড্যানি ড্যানন শুরুতে প্রস্তাবটি প্রসঙ্গে বলেন, তার দেশ একে স্বাগত জানায়। তার মন্তব্যের পর প্রস্তাবটি আশার আলো দেখতে পেয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার ইসরাইলি রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিন জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পর নেতানিয়াহু বলেন, সব লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লেবাননে ইসরাইল থামবে না। এসব লক্ষ্যের মধ্যে প্রধান একটি লক্ষ্য হলো ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফেরা নিশ্চিত করা। হোয়াইট হাউস পরে বলেছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরাইলের সাথে ‘সমন্বিতভাবে’ করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্কে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার লেবাননে সংঘাত নিরসনে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ সঙ্ঘাত ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ এক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
প্রায় এক বছর আগে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যেও উত্তেজনা ছড়ায়। তখন থেকে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের হিসাব অনুসারে, লেবাননে গত সোমবার থেকে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ আগেই বাস্তুচ্যুত ছিল।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বৃহস্পতিবার তারা লেবাননের দক্ষিণে এবং দেশটির পূর্বে বেকা উপত্যকায় হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তারা লেবানন ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী অবকাঠামোতেও হামলা করেছে। ইসরাইলের দাবি, হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করতে ওই সব হামলা চালিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা কিরইয়াত আতা বসতি লক্ষ্য করে ৫০টি রকেট এবং সাফেদ শহর লক্ষ্য করে ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। দুটো এলাকাই ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলাজনিত সতর্কসঙ্কেত বাজার পর তারা এটি প্রতিহত করে। ইসরাইলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেরজি হালেভি বুধবার বলেছেন, লেবাননে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে ইসরাইলে প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ‘শত্রুপক্ষের এলাকায় প্রবেশের’ পথ তৈরি হবে।

ইরান বসে থাকবে না : আরাকচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইসরাইলের আগ্রাসী ও স্বৈরতান্ত্রিক কার্যক্রম ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে একহাত নিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, লেবাননের সাথে ইসরাইল সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করলে ইরান বসে থাকবে না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘লেবাননে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে ইরানের বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই।’ নিউ ইয়র্কে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে আলোচনার সময় তিনি এই কথা বলেন। আরাকচি সামনের মাসে (অক্টোবর) রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ব্রিকস সম্মেলনে গাজা ইস্যু তোলার প্রস্তাবও করেছেন।

জাপানীদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশই নিজেদের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে। এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে জাপানও। জাপানের প্রধানমন্ত্রী পরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি জানিয়েছেন, লেবাননে বসবাস করা জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা যাচাই করছি। পাশাপাশি নাগরিকদের দেশটি ছাড়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তা ছাড়া জাপানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জর্ডানে একটি সামরিক প্লেন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে জাপান সরকার। সেখান থেকে লেবাননে আটকে পড়াদের নিয়ে আসা হবে। এর আগে বিশ্বের অসংখ্য দেশ নিজেদের নাগরিকদের লেবানন সফরের ব্যাপারে সতর্ক করে ও দেশটি ছাড়ার আহ্বান জানায়। যার মধ্যে অন্যতম হলো ইতালি, বেলজিয়াম, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া।

লেবানন ‘নতুন গাজা’ হতে পারে না : ম্যাক্রোঁ
লেবাননে চলমান এই সংঘাত নিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, লেবানন ‘নতুন আরেকটি গাজা’ হয়ে উঠতে পারে না। এ ছাড়া ইসরাইলকে অবশ্যই লেবাননে তাদের হামলা বন্ধ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ইসরাইলকে অবশ্যই তাদের হামলা বন্ধ করতে হবে এবং হিজবুল্লাহকেও অবশ্যই তার প্রতিশোধ নেয়া বন্ধ করতে হবে।’
কানাডায় তার সফরের সময় ম্যাক্রোঁ বলেন, লেবাননের ‘নতুন গাজা হয়ে ওঠার’ বিরোধিতা করে ফ্রান্স। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ‘অতিশয় বেদনাদায়ক’ সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি এ কথা বলেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement