২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
নয়া দিগন্তকে সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান

সম্ভাবনাময় ওষুধ শিল্প প্রসারে ডিজিডিএকে ঢেলে সাজাতে হবে

নয়া দিগন্তকে সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান -


সম্ভাবনাময় ওষুধ শিল্প বিকাশে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে (ডিজিডিএ) ঢেলে সাজাতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট প্ল্যান্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান। নয়া দিগন্তের সাথে সাক্ষাৎকারে ওষুধ প্রশাসনের সাবেক পরিচালক (এখন ওষুধ প্রশাসনে একজন মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেন, আগে এই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ছিলেন পরিচালক) বলেন, ৩০ হাজার কোটি টাকার ওষুধের বাজার সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে আরো সমৃদ্ধ হবে এবং আরো উন্নতমানের ও উচ্চ প্রযুক্তির ওষুধ তৈরিতে সক্ষম হবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নয়া দিগন্তের বিশেষ সংবাদদাতা হামিম উল কবির।

সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার চাহিদার ৯৭ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের জন্য এটা বিরাট সাফল্য, বিদেশীরা এটা শুনে খুব অবাক হয়। যেখানে মালয়েশিয়ার মতো দেশ তাদের প্রয়োজনের সব ওষুধ এখনো উৎপাদন করতে পারে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই এবার বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তির ওষুধগুলো তৈরি করে নিজের প্রয়োজন মেটাক এবং বিদেশে রফতানি করুক। সেজন্য ডিজিডিএকে প্রস্তুত হতে হবে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটির সমর্থন ছাড়া ওষুধ ব্যবসায়ীরা যতই চেষ্টা করুক তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন না। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে গতিশীল করতে হলে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রথমেই বলতে চাই, সততার কোনো বিকল্প নেই।

আল্লাহ ও পরকালের শাস্তির ভয় থাকলে কেউ অসৎ হতে পারে না। সেজন্য সৎ ও যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে হবে সর্বত্র। এর সাথে ওষুধ প্রশাসনের পুরো সিস্টেমকে স্বচ্ছ রাখতে হবে। স্বচ্ছতার পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের কাজকে গতিশীল রাখতে হলে সব কিছু অনলাইনের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করা উচিৎ।’ তিনি বলেন, ওষুধ প্রশাসনে ওষুধ কোম্পানির কোনো কিছু অনুমোদনের জন্য দ্রুত ছাড়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই ছাড়পত্র দেয়ায় যত বেশি বিলম্ব ঘটবে ততো বেশি দুর্নীতি বাড়বে। প্রতিটি অনুমোদনের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। ওষুধের লাইসেন্স, ব্লকলিস্ট, প্যাকেজিং ম্যাটারসহ সবই অনলাইনে দিয়ে দিতে হবে সময় নির্দিষ্ট করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্যই অনুমোদন দিতে হবে, অনুমোদন দিতে না পারলে কী কারণে দেয়া সম্ভব হয়নি তা অনলাইনেই নির্দিষ্ট করে বলে দিতে হবে। কারণটি ফাইলে সুনির্দিষ্ট করে লিখে দিতে হবে যেন ওষুধ কোম্পানির লোকজন তাদের ‘ল্যাকিংস’ ঠিক করে নিতে পারে এবং আবারো প্রয়োজনে অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারে। ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, প্রক্রিয়াটি যেন সবাই দেখতে পারে অনলাইনে সে ব্যবস্থা করতে হবে যেন অন্যরাও জেনে নিতে পারেন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াটি কী হবে। দ্রুত অনুমোদনের জন্য একটি ফাইল এক টেবিলে যেন ৩ দিনের বেশি পড়ে না থাকে, তা বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে।

তিনি বলেন, ওষুধ প্রশাসনে দুর্নীতি রয়েছে তা বাংলাদেশের সবার মুখে মুখে কিন্তু কেউ মুখ খোলেন না। তিনি বলেন, নিডবেজড করাপশান (প্রয়োজন মেটাতে দুর্নীতি) শেষ করা সম্ভব কিন্তু গ্রিডবেজড করাপশান (লোভভিত্তিক দুর্নীতি) দূর করা কিছুটা কঠিন, তবে সরকার অথবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন চাইলে এটাও দূর করা সম্ভব। গ্রিডবেজড করাপশান দূর করতে হলে ইডিওলজিকেল মটিভেশান (আদর্শিক প্রেরণা) দরকার।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, এই গ্রিডবেজড করাপশান দূর করতে হলে ওষুধ প্রশাসনে প্রত্যেকটা কাজের জন্য কর্মকর্তাদের জন্য কিছুটা এক্সট্রা বেনিফিটের (অতিরিক্ত কিছু সুবিধা) ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যেমন খুবই দ্রুততার সাথে কোনো ছাড়পত্রের জন্য অতিরিক্ত ফি যোগ করা যেতে পারে। এসব সিস্টেম বিদেশে আছে, বাংলাদেশে পাসপোর্ট অফিসেও আছে। দ্রুত ফাইল ছাড় করিয়ে নেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত খাটতে হবে। সে কারণে এ ধরনের ছাড়পত্রের জন্য ‘অতিরিক্ত ফি’র বিধান রাখা যেতে পারে। এই ফি’র কিছুটা পাবে সরকার আবার কিছু পাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ ধরনের সিস্টেম রাখা হলে শুধু ওষুধ প্রশাসনে নয়, অন্য আরো প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি কমে যাবে। বিদেশে স্লো ট্র্যাক, ফাস্ট ট্র্যাক কাজের সিস্টেম আছে। এই স্লো ট্র্যাক ও ফাস্ট ট্র্যাকের পুরো সিস্টেমটাই অনলাইনে দৃশ্যমান থাকতে হবে যেন সবাই দেখতে পারে। এটা করতে পারলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর হয়ে যাবে বলে অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বিশ্বাস করেন।


আরো সংবাদ



premium cement