২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

তিতাসে এখনো বহাল হারুনের দোসররা

-


হারুনুর রশীদ মোল্লাহ তিতাসে নেই। কিন্তু তার সহযোগীরা রয়ে গেছে। তারা এখন ছড়ি ঘোরাচ্ছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি থাকাকালে লাগামহীন দুর্নীতি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই হারুন।
হারুনের সহযোগী ছিলেন যে ক’জন তাদের মধ্যে অন্যতম তিতাসের মেট্রো ঢাকার বিপণন ডিভিশন উত্তরের মহাব্যবস্থাপক রাজীব কুমার সাহা, অর্থ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক অর্পনা ইসলাম। তিতাসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিল এই চক্রটি। অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতিবাজ এই চক্রকে ছাতার মতো ছায়া দিতেন স্বৈরাচার সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। নানা অপকর্মের পাশাপাশি অবৈধ আয়ে হারুনের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতেন অর্পণা। বিষয়টি তিতাসে ছিল ওপেন সিক্রেট।

অর্থ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক হলেও ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে অর্পণাকে সরকারি অর্থে কানাডা পাঠাতে সহযোগিতা করেছিলেন এমডি হারুন। প্রশিক্ষণের জন্য নামের তালিকা পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। যোগ্য না হলেও ওই তালিকায় অর্পণা ইসলাম ও শেয়ার ডিপার্টমেন্টের উপমহাব্যবস্থাপক নুর হোসেন খানের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন হারুন অর রশীদ মোল্লাহ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আর কানাডা যাওয়া হয়নি। তিতাসে চাকরির পাশাপাশি ডেভেলপার ব্যবসায় সম্পৃক্ত রয়েছেন নুর হোসেন খান। তিতাসের সদ্য সাবেক এমডি হারুন অর রশীদ মোল্লাহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা নির্মাণের কাজ করেছেন এই নুর হোসেন খান।
গত ৯ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে পেট্রোবাংলার আওতাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির (টিজিটিডিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: হারুনুর রশীদ মোল্লাহর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। সেইসাথে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসিতে (টিজিটিডিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

শাহনেওয়াজ পারভেজ ১০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করতে গেলে পরিকল্পিতভাবে তাকে বাধা প্রদান করা হয়। পেট্রোবাংলার সামনের কাচের গেট থেকে শুরু করে চতুর্থ তলায় চেয়ারম্যানের দফতরেও হামলা চালানো হয়। এই হামলার পেছনে অন্যতম উস্কানিদাতা ছিলেন বিপণন ডিভিশন উত্তরের মহাব্যবস্থাপক রাজীব কুমার সাহা, অর্থ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক অর্পনা ইসলাম। এ ঘটনায় পাঁচজনকে বরখাস্ত করা হলেও তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
জানা গেছে, তিতাসের এমডি হিসেবে হারুন অর রশীদ মোল্লাহ দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ১৫০টি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসের নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধি করে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। এই টাকার বেশির ভাগ আসত সাভার ও গাজীপুর থেকে। ওই এলাকায় কলকারখানা বেশি থাকায়, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ প্রদান, নিয়ম বহির্ভূতভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, লোড বৃদ্ধির নামে এসব টাকা হাতিয়ে নিত এই চক্র।

শুধু লোড বৃদ্ধির জন্যই পাঁচ থেকে ১০ কোটি টাকা নিতো হারুন সিন্ডিকেট। এ ছাড়াও প্রায় ১৫ শ’ অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আদায় করা হতো। গাজীপুরে এর মূল ভূমিকা পালন করতেন হারুনের দুর্নীতির কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত তিতাস গ্যাস গাজীপুর জোনের সাবেক ডিএমডি, বর্তমানে তিতাসের মেট্রো ঢাকার বিপণন ডিভিশন উত্তরের মহাব্যবস্থাপক রাজীব কুমার সাহা। চলতি বছরের শুরু থেকে প্রায় সাত মাস ডিএমডি হিসেবে গাজীপুরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তার মাধ্যমেই বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হারুন। এই টাকার ভাগ পেতেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও। হারুনের আশীর্বাদে রাতারাতি বিপুল অর্থ, একাধিক বাড়ি, গাড়ির মালিক হয়েছেন রাজীব কুমার সাহা।

গাজীপুরে গ্রাহকদের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল, ‘টাকা দিলে কেউ ফিরে না খালি হাতে রাজীবের দরবারে’। রাজীব পারতেন না তিতাসের এমন কোনো কাজ নেই। দুই মাসের বিল বকেয়া থাকায় গাজীপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের চারটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন এমডি হারুন অর রশীদ মোল্লাহ। যথানিয়মে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাত্র দুই ঘণ্টা পরেই বিল পরিশোধ না হলেও পুনরায় সংযোগ প্রদান করা হয় বলে অভিযোগ আছে। এর নেপথ্যে ছিল আড়াই কোটি টাকার লেনদেন।
নামে-বেনামে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট করেছেন হারুন অর রশীদসহ এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। তাদের লাগামহীন দুর্নীতির পরও আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত বহাল তবিয়তে ছিলেন হারুন।


আরো সংবাদ



premium cement