২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
মেনে নেয়া হয়েছে ১৮ দফা দাবি

সব গার্মেন্ট খুলবে আজ

পোশাকশ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও মালিকপক্ষের সাথে বৈঠক শেষে ব্রিফিং করছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ : পিআইডি -


দেশের পোশাককারখানার শ্রমিকদের হাজিরা বোনাসসহ বাস্তবায়ন হবে নিম্নতম মজুরি। একই সাথে বাস্তবায়ন হবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি। শ্রমিকদের এসব দাবি মেনে নেয়ার মাধ্যমে অবসান হচ্ছে গার্মেন্ট খাতের অচলাবস্থা। একই সাথে ঘোষণা দেয়া হয়েছে আজ থেকে সব পোশাককারখানা খুলে দেয়া হবে। দেশের পোশাক খাতের চলমান অস্থিরতা নিরসনের জন্য গতকাল সচিবালয়ে সরকার, বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান যৌথ ঘোষণা পড়ে শোনান।
এ সময় বলা হয়, দেশের সব পোশাককারখানার শ্রমিকদের বিদ্যমান হাজিরা বোনাস বাড়ানো হয়েছে ২২৫ টাকা। একই সাথে আগামী অক্টোবরের মধ্যে সব কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া ১০ অক্টোবরের মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের সব বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে হবে। একই সাথে বাস্তবায়ন হবে পোশাকশ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি।

বৈঠকে অন্য যেসব বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ১০ অক্টোবরের মধ্যে কোনো কারখানাশ্রমিকের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব/চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনায় এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং ব্যবস্থা করা হবে।
গত বছর ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনসহ এর আগে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যত হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক মামলা হয়েছে সেগুলো নিষ্পত্তি করা হবে। মজুরি আন্দোলনে নিহত চারজন শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আগামীকাল (বুধবার) থেকে দেশের সব পোশাককারখানা সচল থাকবে অর্থাৎ সব পোশাককারখানা খুলে দেয়া হবে।
সভায় জানানো হয়, দেশে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের ১৮ দাবি মেনে নিয়েছে মালিকপক্ষ। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে টিফিন বিল প্রদান, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সব কারখানায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন, শ্রমঘন এলাকায় টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে রেশন প্রদান, শ্রমিকদের আগের বকেয়া ১০ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ, ঝুট ব্যবসা মনিটরিং করে শ্রমিকদের মধ্যে থেকে ক্রেতা বের করা, কারখানার শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা বন্ধ করতে মনিটরিং বিষয়ে একমত হয়েছে উভয়পক্ষ।

এ ছাড়াও গত বছর ন্যূনতম মজুরি আন্দোলন ও বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা নিপীড়ন মামলা প্রত্যাহারের জন্য রিভিউ করে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধান করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনের বিষয়ে কমিটি গঠন, সব কারখানায় ডে কেয়ার সেন্টার নিশ্চিতের দাবি মানা হয়েছে।
অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে কাজ করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড পর্যালোচনা করে শ্রমিক-মালিকের আলোচনার মাধ্যমে চালু করা এবং প্রতি বছর দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দিতে কমিটি গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ সময় শ্রম সচিব সফিউজ্জামান জানান, শ্রমিক পক্ষের ৩৫ জন প্রতিনিধি ছিলেন, মালিক পক্ষও ছিল। তাদের ১৮টি দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করেছি। আগামীকাল থেকে সব কারখানা নির্বিঘ্নে চলবে। গত সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সরকারের কাছে ১৮টি দাবি উত্থাপন করে শ্রমিক পক্ষ।

শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান
আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি সরকার ও মালিকপক্ষ মেনে নেয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, যেহেতু সরকার ও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছে তাই শ্রমিকদেরও কাজে যোগদান করা উচিত। এরপরেও যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেটি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত। কারখানা বন্ধ রাখা, কর্মবিরতি পালন করা কোনো সমাধান নয়। আর নিজ নিজ কারখানার মালিকরাও এই ১৮ দফা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করছে কি না এটাও মনিটরিং করতে হবে। শ্রমিকদের উদ্দেশে এই শ্রমিকনেতা বলেন, সদ্য মাত্র একটা সরকার আসছে, এই সরকার শ্রমিকদের পক্ষেই কথাবার্তা বলছে এবং নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আমরা একটু ধৈর্য ধরি।

বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু বলেন, যেহেতু সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ বসে আলোচনার মাধ্যমে ১৮ দফা মেনে নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের প্রথম কাজ হবে আগামীকাল (বুধবার) যেসব কারখানা খোলা থাকবে সেগুলোতে কাজে যোগদান করা। আর তৃতীয়পক্ষ যাতে শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে গার্মেন্ট শিল্পে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে শ্রমিকদের খেয়াল রাখতে হবে।
আশুলিয়ায় গতকালও বন্ধ ছিল অর্ধশতাধিক কারখানা : বেশ কয়েকদিন শান্ত থাকার পর রোববার থেকে ফের শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় নতুন করে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দেয়। এরই জের ধরে গতকালও ৫৫টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকে। এর মধ্যে ৪৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং ৯টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ দিকে ডিইপিজেডসহ বাকি কারখানাগুলোতে উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। এই অঞ্চলে ৭৭৫টি তৈরী পোশাককারখানা আছে। তার মধ্যে ৫৫টা বন্ধ আছে। কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

আশুলিয়ায় গ্রেফতার ৮ : ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিন দিন আগেও একই অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার রাতে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাদের গ্রেফতার করা হয় তারা হলেন, আশুলিয়ার সুবন্ধী এলাকার দেওয়ান আব্দুল হাই (৫২), দক্ষিণ গাজীরচট এলাকার শুক্আলী (৪০), আশুলিয়ার জাহিদুল ইসলাম (২৪), টাঙ্গাইলের রনি (২৭), একই জেলার রাব্বি মিয়া (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান (৩৮), একই জেলার জাহিদুল (৩৮) ও কুমিল্লা জেলার শাহপরান (৩৩)।

 


আরো সংবাদ



premium cement