২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পাচারের অর্থ ফেরাতে এফবিআইর সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

-


দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকে এফবিআইর প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে এ আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। আজ বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথেও বৈঠকে এমন সহযোগিতা চাওয়া হবে।

জানা গেছে, গত ১৫ বছরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুঃশাসনে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা। মার্কিন গবেষণা সংস্থা জিএফআইসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিভিন্ন সময় এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একমাত্র ব্যাংকিং খাতের মাফিয়া বলে খ্যাত সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে গত ৭ বছরে ২ লাখ কোটি টাকা ঋণের নামে বের করে নিয়েছে। সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ অর্থের একটি অংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে। একইভাবে সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসাগ্রুপসহ আরো প্রায় দুই ডজন গ্রুপ অব কোম্পানির বিরুদ্ধেও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এক প্রতিমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে তিন শতাধিক বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে সংবাদ বের হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহেনাসহ প্রধানমন্ত্রী পরিবারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে। এক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কমিশন বাবদই প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রী পরিবারের বিরুদ্ধে। একইভাবে ওয়াসার একসময়ে আজীবন এমডি তাসকিন এ খানসহ রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে এসব ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করা হয়েছে। অনেকেরই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে। অনেকেই এসেছেন তদন্তের আওতায়। এক এস আলমকেই ৮টি ব্যাংক, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একাধিক বীমা কোম্পানির মালিকানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এক সময়ের প্রতিষ্ঠিত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ বের করতে করতে এখন তাদের অনেক প্রতিষ্ঠানই ফোকলা হয়ে গেছে। গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও সাবেক রিলায়েন্স ও নাম পরিবর্তন করে আভিভা ফাইন্যান্স। সাত বছর বর্গি এস আলম বিপুল অর্থ বের করে নেয়া সত্ত্বেও ইসলামী ব্যাংকের নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অনুরূপভাবে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক এখনো শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এখন ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ বের করে পাচার করা হয়েছে তা ফেরত আনাই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে।

এরই অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের প্রতিনিধিদের সাথে গতকাল বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে এফবিআইয়ের একজন প্রতিনিধি ও ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত দিকও তুলে ধরা হয়েছে। এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
আজ বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement