২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
সাক্ষাতের অনুরোধের স্তূপ মিশনে

জাতিসঙ্ঘে ড.ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের নতুন কৌতূহল

জাতিসঙ্ঘে ড.ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের নতুন কৌতূহল -

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ঘিরে বিশ্ব নেতাদের চোখ এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে। বিগত বছরগুলোতে শেখ হাসিনা সরকারের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ বিশ^ দরবারে সমালোচিত হলেও এবার সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের পতনের পর অর্ন্তর্তীকালীন সরকারপ্রধানের আসনে ড. ইউনূস বসার পর থেকে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় নোবেল বিজয়ী এই বাংলাদেশীকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন কৌতূহল। এরই চিত্র ফুটে উঠেছে এবারের জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। এমনি ইঙ্গিত দিলেন নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের বাংলাদেশ মিশনপ্রধান রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোহিত।
নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার টেবিলে অনুরোধের স্তূপ জমা হয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য আসছেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের পক্ষ থেকে তার সাথে সাক্ষাতের অসংখ্য অনুরোধ এসেছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে তার বৈঠক নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ড. ইউনূসকে কী প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ক্ষমতার হাল ধরতে হয়েছে সে বিষয়টি তিনি তুলে ধরবেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে। হাসিনা সরকারের আমলে মানবাধিকার, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গুম, খুনের ঘটনা সবাই জানেন। সেই প্রেক্ষাপটে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার পরিকল্পনার কথা জানাবেন জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনে। অন্য দিকে বলা যায়, অনেকটা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা ফিরে পাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে বিশে^র সহযোগিতা চাইবেন ড. ইউনূস।
কূটনৈতিক একাধিক সূত্র বলছে, হাসিনা সরকারের বিভিন্ন সময়ে কূটনৈতিক ও লবিষ্ট নিয়োগ করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের। কিন্তু কোনোভাবেই সেটা সফল হয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রফেসর ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি, ইমেজ ও জনপ্রিয়তা সম্ভাবনার এক নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের জন্য। মনে করা হচ্ছে জাতিসঙ্ঘের এই অধিবেশনে হবে এর একটি বড় মহড়া। যেখানে বাংলাদেশের এই নেতাকে নিয়েই চলছে আলোচনা। তিনি পরিণত হয়েছেন কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে। সূত্র বলছে, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণে ড. ইউনূস দেশের সফল আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী হাসিনার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিবরণও তুলে ধরবেন।

এ দিকে সব ঠিক থাকলে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে বৈঠকে বসবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের পক্ষে ড. ইউনূসের সাথে থাকবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ঐতিহাসিক এই বৈঠকে চারটি প্রস্তাবনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হবে। শুরুতে গত ৫ আগস্টের আগে এবং পরে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন খাতের সংস্কারের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা এবং কোম্পানির কাছে থাকা ঋণ পরিশোধের সময় চাওয়া হবে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আরো বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হবে। আর সব শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত তারিখের একদিন আগেই ২৩ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস নিউ ইয়র্কে পৌঁছাচ্ছেন।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে তার নির্ধারিত বক্তৃতার দিন সকালে নিউ ইয়র্কে পৌঁছবেন। বক্তৃতা শেষে সন্ধ্যায় জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে তিনি আয়োজন করবেন সংবর্ধনার।
সেখানেও বাইডেনের সাথে ফের দেখা হবে ড. ইউনূসের। তবে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ প্রায় বিরল।
গত ৮ আগস্ট দেশের দায়িত্ব নেয়ার পর জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে এটি ড. ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর। জো বাইডেনের সাথে বৈঠকের পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সাথে বৈঠক করবেন তিনি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করবেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement