২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সব গুমের তদন্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন

-

২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সব গুমের অভিযোগ তদন্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ১০ দিন গুম করে রাখার অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে এ অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী এনামুল কবির।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এনামুল কবির নামের এক ব্যবসায়ীকে ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর বাসাবোর ব্যবসায়ী কার্যালয় থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। তৎকালীন ডিবির অফিসার মশিউরের নির্দেশে তাকে চোখ বন্ধ করে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হয়। পরে ২৬ নভেম্বর মামলা দেয়া হয়। হাত-পায়ের মাঝখানে লাঠি ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। নির্যাতন করে বিরোধী তথা জামায়াতের তথ্য জানতে চেয়েছে তারা। পরে তার অফিস থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে মামলা করে। অনেক দিন কারাগারে থাকার পর তিনি জামিন পান। এ বিষয়ে অভিযোগ এনে তিনি শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি বিগত সরকারের মেয়াদে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনাও তদন্তে চেয়েছেন। আমরা এখন এটি যাচাই-বাছাই করে দেখব।

এর আগে গত রোববার গুম, নির্যাতন ও প্রতিহিংসামূলক মাদক এবং প্রতারণার মিথ্যা মামলায় আটকের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ছয়জন র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এক চিকিৎসক। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ডাক্তার ইসরাত রফিক ঈশিতা। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগকারী ডাক্তার ইসরাত রফিক ঈশিতাকে গত ২৮ জুলাই ২০২১ তারিখ তার কাফরুলের বাসা থেকে র‌্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ দিন গুম করে রাখার পর ১ আগস্ট ২০২১ তারিখ তাকে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে উপস্থাপন করা হয়। ২ আগস্ট ২০২১ তারিখ তাকে তিনটি মামলাসহ কোর্টে প্রডিউস করে। এই পাঁচ দিনে তার ওপরে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়, তাকে ভুয়া ডাক্তার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তার সার্টিফিকেট জাল মর্মে সংবাদ সম্মেলন করা হয়, তাকে কিছু মাদকসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়। এই মামলায় তিনি র‌্যাবের ছয়জনকে আসামি করেছেন।
এপিসি থেকে ফেলা ইয়ামিনের মৃত্যুর ঘটনায় হাসিনাসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ : সাভারে গুলির পর পুলিশের সাঁজোয়া যানে তুলে সেখান থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে এ অভিযোগ দাখিল করেন নিহতের মামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুন কাদির। তার পক্ষে আইনজীবী সাকিল আহমাদ এ অভিযোগ দায়ের করেন।
আইনজীবী সাকিল আহমাদ জানান, গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তারা শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে বুকের বামপাশে গুলি করে। বন্দুকের গুলিতে ইয়ামিনের বুকের বামপাশে অসংখ্য গুলির স্পি­ন্টার বিদ্ধ হয়।

এ অবস্থায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেয় এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে তার পায়ে আবার গুলির নির্দেশ দেয়া হয়। ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে রাস্তার ওপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেন। গুলিবিদ্ধ শাইখ ইয়ামিনকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে নিঃশ্বাস নিতে তখনও দেখা যায়। এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা ধরাধরি করে উঁচু রোড ডিভাইডারের একপাশ থেকে আরেক পাশ ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কোনো ধরনের ময়নাতদন্ত না করে এবং তৎক্ষণাৎ কোনো মৃত্যুর সনদ না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইয়ামিনের লাশ হস্তান্তর করে। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ করলেও পুলিশ বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করেন এবং ইয়ামিনের পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যদের ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মৃত্যু নিয়ে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে, সংবাদমাধ্যমে তথ্য দিতে বারণ এবং মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে ইয়ামিনের পরিবার তাকে সাভার ব্যাংক টাউন কবরস্থানে দাফন করেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩০টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হলো। এর মধ্যে ১২টি চিফ প্রসিকিউটর বরাবর জমা দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement