২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বাইরে থেকে সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্র হচ্ছে

রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে তিন উপদেষ্টা
খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে বৈঠক করছেন ৩ উপদেষ্টা : নয়া দিগন্ত -

পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনায় উ™ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পরিদর্শনে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। এ সময় তারা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্টজন ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। সভায় উপদেষ্টারা পার্বত্য এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বজায় থাকে তার জন্য সকল গোষ্ঠীর প্রতি আহবান জানান। এ ছাড়া তারা মন্তব্য করেন পাহাড়ে সবাই সম্প্রীতি চায়, কিন্তু সেটা নষ্ট করার জন্য বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তারা।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুতেই অবনতি হতে দেয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক শেষে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা আইন-শৃঙ্খলা অবস্থার অবনতি করবে তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। ভবিষ্যতে তারা যদি আবারো অবস্থার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে তাদের হাত ভেঙ্গে দেয়া হবে হুশিয়ারি দেন তিনি। এ সময় স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, পাহাড়ে সবাই সম্প্রীতি চাই কিন্তু সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটির ঘটনা নিয়ে গতকাল স্থানীয়দের সাথে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ে প্রতিনিধি দল। দুপুরে সকালে রাঙ্গামাটি রিজিয়নের প্রান্তিক হলে রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাইনুর রহমানসহ সরকারের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠককে উচ্চপর্যায়ে উপদেষ্টা মণ্ডলী তিন পার্বত্য জেলায় শান্ত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার। ঘটনায় যেই জড়িত থাকবে তাদের ছাড়া দেয়া হবে না। পার্বত্য এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে চলমান থাকে তার জন্য পার্বত্য এলাকায় সব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ের সাম্প্রতিক ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তা আগামীতে যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য জায়গার ছবি এনে গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা বন্ধে সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়তে একযোগে কাজ করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি গতকাল খাগড়াছড়িতে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উদ্ভুত পরিস্থিতি দেখতে এবং করণীয় ঠিক করতে খাগড়াছড়ি পরিদর্শনে এসেছেন সরকারের তিন উপদেষ্টা। তারা বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্টজন ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সভায় জেলার শান্তি-সম্প্রীতির উন্নয়নে মতামত ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন মং সার্কেলের রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী, জেলা বিএনপি‘র সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া, সাবেক অধ্যক্ষ বোধিসত্ত দেওয়ান, সুশীল জীবন চাকমা, সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য প্রমুখ। এ সময় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: আশরাফুজ্জান ছিদ্দিকী, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো: মাইনুর রহমান, পুলিশের আইজিপি মো: ময়নুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো: আমান হাসান, জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষায় বসবাসরত বাসিন্দাদের একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। তারা ষড়যন্ত্র রুখতে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেন। তারা বলেন, পাহাড়কে অশান্ত করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। যার যার অবস্থান থেকে দল-মত নির্বিশেষে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও অনুরোধ করেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে প্রতিনিধি দল রাঙামাটি সেনানিবাসের প্রান্তিক হলে স্থানীয়দের সাথে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারযোগে খাগড়াছড়িতে আসেন। বিকেল ৪টায় সভা শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় শেষ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement