১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা

রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা এলাকায় কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগের দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -

- ২ জেলায় নিহত ৪ : হামলা সংঘর্ষ ভাঙচুর আগুন
- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল যাচ্ছে আজ
- বান্দরবানে অস্ত্র গুলি ড্রোন সিগন্যাল জ্যামার উদ্ধার

খাগড়াছড়িতে বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার জেরে উত্তাল পার্বত্য চট্টগ্রাম। খাগড়াছড়িতে পাল্টা হামলা-সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তিন উপজাতীয় ব্যক্তি। খাগড়াছড়ির পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের প্রভাব পড়েছে রাঙ্গামাটিতেও। গতকাল সকালে সেখানে সহিংসতার ঘটনায় অন্য একজন মারা গেছেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, দোকানপাট, বাড়িঘর ও যানবাহনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছেন অনেকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এদিকে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় সামগ্রিক ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আজ পার্বত্য দুই জেলায় যাচ্ছে। এছাড়া আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তে সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে অস্ত্র গুলি ড্রোন সিগন্যাল জ্যামারসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে বিজিবি।
খাগড়াছড়িতে নিহত ৩ পাহাড়ি
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে মো: মামুন (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীঘিনালায় বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের জেরে রাতভর বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনজন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে দীঘিনালার উদাল বাগান এলাকার ধনরঞ্জন চাকমা (৫০) বৃহস্পতিবার দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারা গেছে বলে জানা যায়। অপর দু’জন হলেন খাগড়াছড়ি সদরের জামতলী এলাকার জুনান চাকমা (২০), স্বনির্ভরের বেলছড়ি পাড়ার রুবেল ত্রিপুরা। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন রয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালা উপজেলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অন্তত ৬০টি দোকান। এসব ঘটনা ঘটার পর রাতেও দীঘিনালা, পানছড়ি ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জানা গেছে, কয়েকটি স্থানে যাতায়াত করতে গিয়ে রাতে দুর্বৃত্তদের বাধার মুখে পড়েছেন কেউ কেউ। আবার এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানছড়ির কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে পানছড়ি কলেজ গেট এলাকায় টহল দিতে গেলে দুর্বৃত্তদের বাধার মুখে পড়ে সেনাবাহিনীর টহল দল। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করে অজ্ঞাত যুবকরা পাহাড়ি বাসিন্দাদের কলেজ গেট এলাকায় জড়ো হওয়ার জন্য উসকানি দিয়ে আহ্বান জানায়। পাশাপাশি কলেজ গেট এলাকার পাশে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের গেট ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তদের আরেকটি দল। দুর্বৃত্তরা নিজেদের পাহাড়ি দাবি করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি কয়েকজন বাসিন্দা। রাত ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের নারাণখাইয়া এলাকায় গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
দীঘিনালা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ছাত্রদের ওপর হামলা চালালে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সূত্রপাত হয়। বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেয়া হয়। এখন সন্ত্রাসীরা যাকে যেখানে পাচ্ছে মারধর করছে। তবে সাধারণ পাহাড়িরা এসব ঘটনায় জড়িত নয়।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ১২ জন চিকিৎসা নিতে আসে। তার মধ্যে তিনজন মারা যায়। চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় গতকাল বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় এ আদেশ জারি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান বলেন, যেকোনো ধরনের সহিংসতা রোধে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। এদিকে শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসক মো: শহীদুজ্জামান, দীঘিনালা সেনা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল ওমর ও পুলিশ সুপার আরিফিন জুয়েল দীঘিনালার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষে ১ নিহত
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনার জেরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে আরেক পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতেও। সেখানে সংঘর্ষে মারা গেছেন একজন, আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। গতকাল সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর বেলা দেড়টা থেকে রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোশাররফ হোসেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সকালে শহরের জিমনেসিয়াম চত্বর থেকে কয়েক হাজার পাহাড়ির একটি মিছিল বের হয়। তারা শহরের বনরূপা এলাকায় গেলে সেখানে মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে বাঙালিদের বেশ কিছু দোকানপাট ও বনরূপা মসজিদে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সড়কে চলাচলকারী বেশকিছু বাস-ট্রাক-অটোরিকশাও ভাঙচুর করে মিছিলকারীরা। এরপরই লাঠিসোটা হাতে পাহাড়িদের ধাওয়া করে বাঙালিরা। শুরু হয় ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। বাঙালিদের পালটা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁঠালতলীতে অবস্থিত মৈত্রী বিহার। আগুন দেয়া হয় বনরূপায় পাহাড়িদের মালিকানাধীন অন্তত দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এক পর্যায়ে শহরের হ্যাপির মোড়কে কেন্দ্র করে এর দুদিকে অবস্থান নেয় পাহাড়ি ও বাঙালিরা।
সংঘর্ষে আহত অন্তত ৫০ জনকে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাদিয়া আক্তার। পরে আহতদের মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, আরো ছয়-সাত জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান এই চিকিৎসক। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
এছাড়া আগুনে ফাইবার অপটিক্যাল কেবল পুড়ে যাওয়ায় শহরে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ-সেনাবাহিনী-বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ টহল দল কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে অস্ত্র গুলি ড্রোন সিগন্যাল জ্যামারসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ধোম্পানি ছড়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে বিজিবি। ওই আস্তানা থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ ড্রোন সিগন্যাল জ্যামারসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে ওই দুর্গম এলাকায় আস্তানায় এই অভিযান চালায় রুমা বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের সদস্যরা। তবে ওই আস্তানাটি ঠিক কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের ছিল তা এখনো জানা যায়নি। ওই এলাকায় আরো তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিজিবি রুমা ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসিবুল হক জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তের ত্রিসীমানার কাছে ধোম্পানি ছড়ার পাহাড়ি গভীর অরণ্যে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ আস্তানা গেড়েছে এমন খবর পাওয়ার পর সেখানে ভোররাতে বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালায়। তবে অভিযানের খবর পেয়ে ওই আস্থানা থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ে সটকে পড়ে সন্ত্রাসীরা। পরে সকালে ওই আস্তানা ঘেরাও করে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় দু’টি কার্বাইনসহ ছয়টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, ২১ রাউন্ড গুলি, একটি ড্রোন, একটি অত্যাধুনিক সিগন্যাল জ্যামারসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম। ওই এলাকায় আরো অস্ত্র সরঞ্জাম থাকতে পারে এই আশঙ্কায় সেখানে আরো তল্লাশি চালানো হচ্ছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন অস্ত্র সরঞ্জামগুলো কুকিচির ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের হতে পারে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কিছু বলা হয়নি। উদ্ধারকৃত অত্যাধুনিক সিগন্যাল জ্যামার দিয়ে সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত ওয়ারলেস, মোবাইল ও ড্রোনের সিগন্যাল বন্ধে ব্যবহার করত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
বাসস জানায়, গত বুধবার এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামে হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ প্রদান করে ওই বার্তায় আইন নিজ হাতে তুলে নেয়া এবং যে কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দণ্ডনীয় ও গর্হিত অপরাধ উল্লেখ করে বলা হয়, সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বার্তায় বলা হয়, এ লক্ষ্যে সরকার খুব শিগগির একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করবে। এ ছাড়া আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আজ শনিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবে।
আইএসপিআরের বক্তব্য
পার্বত্য তিন জেলায় সংঘর্ষ নিয়ে গতকাল সংবাদমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। আইএসপিআর জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উচ্ছৃঙ্খল জনগণের গণপিটুনিতে মো: মামুন (৩০) নামক একজন যুবক নিহত হন। পরবর্তীতে সদর থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন বিকেলে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসীরা মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের ছয়জন আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাথে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাকর করে তোলে। দ্রুততার সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সব উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। একই রাতে খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। এ গোলাগুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হন বলে জানা যায়।
আইএসপিআর আরও জানায়, একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সাথে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসে ভাঙচুর করে।
শুক্রবার সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত লোক একটি মিছিল বের করে বনরুপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরুপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙ্গামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
উপরোক্ত ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে আইএসপিআর।


আরো সংবাদ



premium cement
বোয়ালমারীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু কালীগঞ্জ থানায় ওসি ছাড়াই ৩ সপ্তাহ পার ৬ উপদেষ্টার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন জামালপুরে যুবলীগ ও আ’লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৫ মিরসরাইয়ে বিয়ের আগের রাতে তরুণীর আত্মহত্যা বৈষম্যহীন সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত : গোলাম পরওয়ার সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি হেফাজতের বাসসের নতুন পরিচালনা বোর্ডে দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন কাউকে খুন করে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেননি : বরকত উল্লাহ জুলাই গণহত্যার দ্রুত বিচার কার্যকরের দাবিতে সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়নের আহ্বান ছাত্রশিবিরের

সকল