২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ড. ইউনূসকে নিয়ে খামাখা শঙ্কায় দিল্লি

-

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থী হিসেবে দেখলে ভারত ভুল করবে। সেই ভুলের বৃত্ত থেকে ভারত যে বের হয়ে আসতে পারেনি তার প্রমাণ দিলো আনন্দবাজার। পত্রিকাটি দিল্লির সাউথ ব্লক সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলছে, ইউনূসকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে মৌলবাদী ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে তার সংযোগ নিয়ে। আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে ইতোমধ্যে সংলাপ সেরে নিয়েছেন ইউনূস।
হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা যদি পালিয়ে না থাকতেন তখন হয়তো প্রশ্ন উঠত দলটির সাথে ইউনূস সংলাপে বসবেন কি না। পতিত একটি স্বৈরাচারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বর্তমান স্বাভাবিক দশাকে মেনে না নিয়ে আনন্দবাজার ইউনূসের সাথে মৌলবাদী দলগুলোর সংযোগ খুঁজছে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আগ বাড়িয়ে বলা হয়েছে, ইসলামপন্থী দলের উত্থান ভবিষ্যতে সামাজিক সঙ্ঘাত বাড়িয়ে তুলতে পারে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম যদি রাজনৈতিক সুবিধা পায়, তা হলে বাংলাদেশে শিক্ষা, লিঙ্গ নীতি এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলনে পরিবর্তন আসতে পারে, যা সামাজিক সঙ্ঘাত বাড়িয়ে তুলবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ কর্মীরা আরো বিপন্ন বোধ করবে। তাহলে আনন্দবাজার কি বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে?
এরকম ধারণা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কারণ হাসিনার শাসনামলে এ ধরনের সামাজিক সঙ্ঘাতের নজির দেখেছে বাংলাদেশ এবং হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে দিল্লি থেকে ঢাকায় উড়ে এসেছিলেন সুজাতা সিং তা বাংলাদেশের জনগণের অজানা নয়। বরং ভারতীয় মিডিয়াগুলো গত দেড় দশকে হাসিনার স্বৈরাচারী মনোভাবের চুলচেরা বিশ্লেষণে মনোযোগী হলে উপকার পেত বন্ধুদেশ প্রতিবেশী বাংলাদেশ। ভারতীয় মিডিয়াগুলো সেদিকে পা বাড়াচ্ছে না। দুনিয়ার তাবৎ মিডিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানালেও বৃহত্তম গণতন্ত্রের দাবিদার দেশ ভারতের মিডিয়া তা পারছে না কেন?
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের (জাতিসঙ্ঘ) সাধারণ অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ওই সময় থাকবেন নিউ ইয়র্কেই। উভয় রাষ্ট্রের শীর্ষপর্যায়ে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত কম। কিন্তু হতে পারে কূটনৈতিক পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। তার আগে মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো নিয়ে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করল সাউথ ব্লক সূত্র।
ইউনূস কিন্তু এরই মধ্যে ভারতের নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। বিলম্ব করলে কিছু মিস করতে পারেন মোদিকে সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই নিতে পারেনি ভারতীয় মিডিয়া। নিতে পারলে নিউ ইয়র্কে যাতে দুই প্রতিবেশী দেশের নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয় তা জরুরি ভেবে ভারতীয় মিডিয়া একটি অবস্থান নিতে পারত। কিভাবে পারবে? কারণ স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে হাসিনাকে কোনো দেশ গ্রহণ করতে না চাইলেও ভারত আশ্রয় দিয়ে বসে আছে। হাসিনাকে চুপ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন ইউনূস। তারপরও হাসিনার একটি ভিডিও কল ভাইরাল হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নয়াদিল্লি। উল্টো সেই পুরনো বায়নোকুলারে ঢাকার শাসকদের দেখছে দিল্লির সাউথ ব্লক। আর তারই সূত্র ধরে ভারতীয় মিডিয়াগুলো বয়ান দিচ্ছে। বরং ইউনূসকে নিয়ে কাল্পনিক এক ধরনের শঙ্কার কথা রটিয়ে আনন্দবাজার দুই বন্ধু দেশের নেতা ও জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরিতে ভূমিকা পালন করছে।
একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি। কিন্তু আনন্দবাজারের দাওয়াই হচ্ছে, যেহেতু ভারতের দৃষ্টিতে চরমপন্থী গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সাথে ইউনূস সাক্ষাৎ করেছিলেন সম্প্রতি, যা উদ্বেগ তৈরি করেছে। জল্পনা শুরু হয়েছে, বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইউনূস মৌলবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছেন কি না তা নিয়ে। নয়াদিল্লির অনুমান, ইউনূস হয়তো রাজনৈতিক পরিসরে হেফাজতের প্রভাবকে বৈধতা দিচ্ছেন। এর ফলে মৌলবাদী উপাদানগুলো আরো সাহসী হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের আরো বৃহত্তর কণ্ঠস্বর হাসিল করতে পারে। নয়াদিল্লির এ ধরনের অনুমান অনুমানই থেকে যাবে। কারণ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে হাঁটার পথপরিক্রমায় কষ্টসাধ্য সংস্কার শুরু করেছে।
অবশ্য আনন্দবাজার প্রতিবেদন এও বলেছে যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি এবং তিনি বলেছেন, সেটি বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুই দেশের মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে সত্যিই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে সচেষ্ট থাকে তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাবে নিউ ইয়র্কে মোদি ও ইউনূসের বৈঠক হয় কি না তার ওপর।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজধানীতে সংঘর্ষে ২ যুবক নিহত জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু তোফাজ্জল হত্যা : ঢাবির ৬ শিক্ষার্থীর দায় স্বীকার কুমিল্লা-১০ বিনির্মাণে আমাদেরকে কাজ করতে হবে : ইয়াছিন আরাফাত উন্নয়নের নামে দুর্নীতির মহোৎসবে মেতেছিল আ’লীগ : হামিদ আজাদ ভাইকে হত্যা করাতে ১৪ মাসের ষড়যন্ত্র ভান্ডালজুড়ি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাংবাদিক রনো ও তার পরিবার চট্টগ্রাম পানগাঁও নৌরুট জনপ্রিয় করার উদ্যোগ

সকল