ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-জার্মানির নেই ফ্রান্সের এই রেকর্ড
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৭:০৫, আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৭:২৬
চার বছরের প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে রোববার। আগামী চার বছরের জন্য নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে পাচ্ছে ফুটবল দুনিয়া। রোববার রাতেই এর ফয়সালা। কোন দেশ হচ্ছে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী। ফ্রান্স নাকি ক্রোয়েশিয়া। বিশ্ব ফুটবলে জার্মানির শ্রেষ্ঠত্বের আনুষ্ঠানিক অবসান হয়েছে ২৭ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাদের হারের মাধ্যমে। এই পরাজয় তাদের ছিটকে ফেলে দেয় ২১তম বিশ্বকাপ থেকে। তবে এখনো ফিফা র্যাংকিং-এ সেরা জার্মানি। কিন্তু রোববারের ফাইনাল শেষে তারা আর এই অবস্থানে নাও থাকতে পারে। নতুন হিসাবে অবস্থানের ব্যাপক উন্নতি ঘটবে ক্রোয়েশিয়া ও ফ্রান্সের। পেছনের কাতারে নেমে যেতে পারে জার্মানরা।
রোববার মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় রাশিয়া ৬৪ তম ম্যাচ। এই ফাইনাল শেষে ফ্রান্সের অধিানয়ক হুগো লরিচ বা ক্রোয়েট দলপতি লুকা মডরিচের হাতে উঠবে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবল ট্রফি। ফরাসীরা লুজনিকিতে খেলা শেষে বিজয় উৎসবে মাতলে তা হবে তাদের দ্বিতীয়। অন্য দিকে নতুন ইতিহাস গড়তে পারলে ক্রোয়েশিয়ার হবে প্রথম বিশ্ব জয়।
এই পর্যন্ত একবারই বিশ্বকাপ জয় করেছিল ফ্রান্স। তা ১৯৯৮ সালে নিজ মাঠে। সেই মিশনে তারা সেমিফাইনালে পেরিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া বাধা। লিলিয়ান থুরামের জোড়া গোলে তারা ২-১-এ হারিয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে। যদিও ডেভর সুকার প্রথমে লিড এনে দিয়েছিলেন অতিথি দলকে। আজ বলকান অঞ্চলের দেশটির একটি জয়েই দুই লক্ষ্য পূরন হবে। ২০ বছর আগে হারের প্রতিশোধ এবং এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি বিশ্বকাপ জয়। নতুন ইতিহাস গড়া কি সম্ভব হবে জ্বাতকো ডেলিচের দলের?
বিশ্ব ফুটবলে দারুণ সময় পার করছে ফ্রান্স। ২০ বছরে তিন বার তারা বিশ্বকাপের ফাইনালে। গত কুড়ি বছরে এই রেকর্ড নেই অন্য সাবেক চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পশ্চিম জার্মানি, স্পেন ও ইতালির। ফরাসিরা ১৯৯৮, ২০০৬ এবং ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট। ব্রাজিল ১৯৯৮ এবং ২০০২ এর বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। জার্মানী ২০০২ এবং ২০১৪ এর শেষ দুই এর দল। ইতালী ২০০৬ এর বিশ্বকাপ জয়ী। স্পেন ২০১০ এর চ্যাম্পিয়ন।সুতরাং এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে রোববার ফ্রান্সই ফেবারিট। বিশ্বকাপের বাইরে ইউরোতেও তারা মোটামুটি সফল। ২০০০ এর চ্যাম্পিয়ন দলটি ২০১৬ এর সর্বশেষ ইউরোর রানার্সআপ। গত আঠারো বছরে তারা দুই বারের ফাইনালিস্ট। যদিও সম সংখ্যকবার তাদের বিদায় হয়েছিল কোয়ার্টার থেকে।
একবার গ্রুপ পর্বই টপকাতে পারেনি। অবশ্য ফরাসিদের সবাই প্রথম থেকেই এবার ফেবারিটের তালিকায় রেখেছিল। ওেই ধারা তারা অব্যহত রাখে এবার রাশিয়ায় একের পর এক ম্যাচ জিতে। গ্রুপে তারা ২-১ এ অস্ট্রেলিয়াকে. ১-০তে পেরুকে হারায়। শেষ ম্যাচে তাদের গোলশূন্য ড্র ডেনমার্কের সাথে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ৪-৩ গোলে আর্জেন্টিনাকে. কোর্য়াটার ফাইনালে ২-০তে উরুগুয়েকে এবং সেমিতে ১-০তে বেলজিয়ামকে হারিয়ে ইতিহাসে তৃতীয় বারের মতো ফাইনালে উঠে।
অন্য দিকে একবারেই দৃশ্যের আড়ালে ছিল ক্রোয়েশিয়া। এমনকি গ্রুপে আর্জেন্টিনাকে ৩-০তে হারানোর পরও কারো কল্পনাতে ছিল না তারা যে ফাইনাল পর্যন্ত চলে আসবে। গ্রুপের অপর দুই দল নাইজেরিয়াকে ২-০ এবং আইসল্যান্ডকে ২-১ এ হারায় তারা। এরপর নকআউটের তিন ম্যাচেই তাদের ১২০ মিনিটের ম্যাচ। দ্বিতীয় রাউন্ডে পিছিয়ে পড়েও তারা ১২০ মিনিটে ১-১ এ ড্র করে ডেনমার্কের সাথে। শেষ পর্যন্ত জিতেছে টাইব্রেকারে ৩-২ এ। কোর্য়াটার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়াকে টাইব্রেকারে ৪-৩ এ হারায় ক্রোয়েটরা। এই ম্যাচে ১২০ মিনিট শেষ হয়েছিল ২-২এ। সেমিতে তারা ইংল্যান্ড বাধা পেরিয়েছে ২-১-এ জিতে। ১-১ এ ৯০ মিনিট সমাপ্ত হওয়ার পর ১২০ মিনিটে ২-১এ জয়। বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া দুই বারই নক আউট পর্বে পৌঁছাতে পেরেছিল। প্রতিবারই তারা শেষ চার পর্যন্ত এসেছিল। ১৯৯৮ তে সেমিতে বিদায়। এবার উঠেছে ফাইনালে।
ক্রোয়েশিয়ার তুলনায় ফ্রান্স একটি জায়গায় এগিয়ে। তা হলো ফরাসিরা কোনো ম্যাচই ৯০ মিনিটের বেশি খেলেনি। তাদের জালে বল গেছে চার বার। দিয়েছে ১০ গোল। ক্রোয়েশিয়া নক আউটের টানা তিন ম্যাচ ১২০ মিনিট খেলে দু’টিতে জয় টাইব্রেকারে। আগের ৬ ম্যাচে দিয়েছে ১২ গোল। হজম করেছে চার গোল। গোল দেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার দেশটি।
আরো পড়ুন :
বাসস
আচরণের বিষয়ে এমবাপেকে সতর্ক করলেন মুয়েনিয়ার
বেলজিয়ামের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সের হয়ে অংশগ্রহণের সময় ‘নাটকীয়’ আচরণের জন্য কিলিয়ান এমবাপের সমালোচনা করেছেন তার ক্লাব সতীর্থ বেলজিয়ান ডিফেন্ডার টমাস মুয়েনিয়ার। বলেছেন তার সামনে রয়েছে জিনেদিন জিদান ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও ছাড়িয়ে যাবার অপরা সম্ভাবনা।
রেড ডেলিদের এই ডিফেন্ডার নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেনি মঙ্গলবারের সেমি-ফাইনাল। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে স্যামুয়েল উমতিতির গোল, বেলজিয়ামকে ছিটকে দেয় প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে অংশগ্রহনের সুযোগ থেকে। ওই হারের কারণে রবার্তো মার্টিনেজের বেলজিয়াম এখন আসরের তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের মোকাবেলা করবে। গ্রুপ পর্বে যে দলকে তারা ১-০ গোলে হারিয়েছিল।
আগামীকাল শনিবারের এই প্লে-অফ ম্যাচকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে তার প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) সতীর্থ এমবাপেকে নিয়ে মুয়েনিয়ার হতাশা চেপে রাখতে পারেননি। সেমি-ফাইনালে ১৯ বছর বয়সী এমবাপের আচরণের প্রসঙ্গে টেনে মুয়েনিয়ার বলেন, তিনি যদি ফুটবলের সর্বকালের সেরা হতে চান তাহলে অবশ্যই এই ধরনের আচরণ সম্পূর্ণভাবে ছাড়তে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মুয়েনিয়ার বলেন, ‘সেমিতে তাকে (এমবাপে) যেভাবে আমাদের বিপক্ষে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করতে দেখেছি, তা প্যারিসে কমই দেখেছি। আমি নিশ্চিত, কারো প্ররোচনায় তিনি এমন কাজ করেছেন। কিলিয়ান হচ্ছেন সুপার মেধাবী ও ভবিষ্যতের সুপারস্টার। আশা করছি আগামীতে তিনি এ ধরনের খারাপ ইন্দনে প্রভাবিত হবেন না।’