ফরাসি বিপ্লবের নেপথ্য নায়ক এক মুসলিম ফুটবলার
- বিবিসি
- ১৩ জুলাই ২০১৮, ২২:৫১
বিশ্বকাপে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারানোর পর থেকে জোর কথা শুরু হয়েছে কীভাবে কিলিয়ান এমবাপে এত অল্প বয়সে বিশ্ব ফুটবলে তার অবস্থান শক্ত করে নিতে পারলো।
কিন্তু বিবিসির ফার্নান্দো দুয়ার্তে বলছেন, যদিও শেষ ১৬তে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচে এমবাপে ঝড় তুলেছিলেন, তারপরও ফ্রান্স দলে তিনিই সবচেয়ে প্রভাবশালী ফুটবলার হয়ে উঠতে পারেননি।
বরঞ্চ মিডফিল্ডার এনগোলো কানটে এই ফ্রান্স দলের নীরব, নেপথ্য নায়ক। তার অসামান্য স্ট্যামিনা, নিয়ন্ত্রণ এবং নিখুঁত পারফরমেন্সের ওপর ভরসা করে কোচ দিদিয়ের দেশাম্প মাঠে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যেতে পারছেন।
আর্জেন্টিনাকে যে ম্যাচে ফ্রান্স হারালো, সেখানে মেসিকে ঠিকমতো খেলতে দেননি কানটে। আর তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত দেশাম্প। "যেভাবে সে বিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নেয়, যেভাবে নিজেকে ঠিক জায়গা-মতো রাখতে পারে, তাতে দলে সে অত্যাবশ্যকীয়। সে কারণেই আর্জেন্টিনার সাথে ম্যাচে মেসিকে আপনারা কেউ তেমন দেখেননি।"
কানটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে প্যারিসের লে'কিপ পত্রিকা গত সপ্তাহান্তে লিখেছে, "তার (কানটের) মতো একজন ফুটবলার যে তাদের দলে রয়েছে, সেজন্য ফরাসী ফ্যানদের উচিৎ প্রতিদিন নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করা।"
কানটের মত ফুটবলারদের গুরুত্ব বোঝা খুব সহজ: আক্রমণভাগের সাফল্যের জন্য যা দরকার তা হলো কেউ একজন প্রতিপক্ষের গোলের সামনে তাদের বল যোগান দেবে, এবং একইসাথে রক্ষণভাগ সামলাবে।
ফ্রান্স দলে, এমবাপে যেন স্বচ্ছন্দে খেলতে পারে, তা নিশ্চিত করে কানটে। ফরোয়ার্ডরা যখন গোল করে সুনাম কুড়ানোর যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, তখন দুর্গ সামলানোর দায়িত্ব নেয় কানটে।
রাশিয়ার বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের আগ পর্যন্ত বল কেড়ে নেয়া, প্রতিপক্ষের পাস লুফে নেওয়া এবং ট্যাকলিংয়ের বিচারে, কানটের পারফরমেন্স চির অসামান্য।
৫২ বার তিনি বল কেড়ে নিয়েছেন, যেটা গত তিনটি বিশ্বকাপে অন্য কোনো ফরাসী ফুটবলার পারেনি।
সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত কানটে মাঠে দৌড়েছেন ৬২.৭ কিলোমিটার। একমাত্র রুশ মিডফিল্ডার রোমান জবিন তার চেয়ে কিছুটা বেশি দৌড়েছেন, যদিও কানটের চেয়ে আকৃতিতে তিনি প্রায় দ্বিগুণ।
"এনগোলো সর্বত্র। তার শরীরে বোধ হয় ১৫টি ফুসফুস রয়েছে," পেরুর সাথে জেতার পর মন্তব্য করেন সহ-খেলোয়াড় পল পগবা।
ইংল্যান্ডের ফুটবলমোদীরাও কান্টের কথা ভালোভাবে জানেন। ২০১৬ সালে লেস্টার সিটি যে প্রিমিয়ারশিপ জিতেছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল কানটে।
যদিও সেই সাফল্যের জন্য প্রশংসা জোটে প্রধানত রিয়াদ মাহরেজ এবং জেমি ভার্ডির, কিন্তু কানটেকে নেওয়ার জন্য বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল।
খুবই সাদামাটা একটি আর্থ-সামাজিক-পারিবারিক অবস্থা থেকে উঠে এসেছেন কানটে।
প্যারিসের শহরতলীতে জন্ম হয়ে বড় হয়েছেন। তার বাবা এসেছিলেন সাবেক ফরাসি উপনিবেশ মালি থেকে।
ছোটোখাটো বলে, ফরাসী ফুটবল অ্যাকাডেমিগুলো তাকে পাত্তা দিত না। মাত্র ছয় বছর আগেও তিনি ফরাসি থার্ড ডিভিশন লীগে অখ্যাত ইউএস বোলন ক্লাবে খেলতেন।
এরপর ২০১৫ সালে কান এফসি নামে অন্য একটি অখ্যাত ক্লাব থেকে তাকে কিনে আনে লেস্টার সিটি।
চুপচাপ, ধর্মপ্রাণ মুসলমান কানটে দলের অন্যদের তুলনায় একেবারেই সাদাসিধে। চেলসিতে তার সহ-খেলোয়াড়রা যখন স্পোর্টস কার চালায়, কানটে চালান একটি মিনি কুপার।
খ্যাতিতে তার অস্বস্তি হয়। মাঠেই তিনি স্বস্তি পান।
ফ্রান্স যদি রোববার বিশ্বকাপ জেতে, তাহলে কানটে হবেন গোল্ডেন বলের প্রধান দাবিদার (টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার)।
তবে দুঃখজনকভাবে সেই সম্ভাবনা কম, কারণ এসব পুরস্কার জোটে সাধারণত গোলদাতাদের। দুই একটি ব্যতিক্রম অবশ্য রয়েছে। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডার ববি মুর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বহুদিন পর ২০০২ সালে ঐ সম্মান পেয়েছিলেন জার্মানির গোলকিপার অলিভার কান।
তবে এবার কান্টেরও সেই আশা রয়েছে। কারণ, ২০০৬ সালে ইটালির ডিফেন্ডার কানাভারো ঐ সম্মান পেতে পেতেও পাননি। জিনেদিন জিদান ছিনিয়ে নেন সেই সম্মান। তবে পরপরই কানাভারোকে ফিফা বছরের সেরা খেলোয়াড় পুরস্কার দিয়েছিল।