ইতিহাস গড়লো ৪০ লাখ লোকের ক্রোয়েশিয়া
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ১২ জুলাই ২০১৮, ২০:২৯
ডেভর সুকার, জাগনোমির বোবানরা পারেননি। পেরেছেন, মানজুকিচ, রাকিটিচ ,মডরিচ এবং পেরিসিচরা। সুকার, বোবানদের ফুটবল দলকে বলা হতো ক্রোয়েট ফুটবলের প্রথম কিস্তির সোনালী প্রজন্ম। এখনকান রাকিাটচ, মডরিচ এবং মানজুকিচদের বহর তাদের দ্বিতীয় সোনালী প্রজন্ম। তবে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিচার করলে এবারের দলকে আরো উচ্চতায় স্থান দিতেই হবে। সুকাররা ১৯৯৮ এর ফ্রান্স বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। এবার রাকিটিচরা দলকে উঠালেন আরেকটু উপরে। বিশ্বকাপের ফাইনালে। যা তাদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম।
২০ বছর আগে তারা ফ্রান্সের কাছে সেমিতে হেরে পরে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল স্থান নির্ধারনী ম্যাচে জিতে। এবার সেই ফ্রান্সের বিপক্ষে ১৫ জুলাই ফাইনালে দেখা হচ্ছে তাদের। ১৯৯৩ সালে ফিফার সদস্য হওয়া একটি দেশ কিভাবে ২৭ বছরে মধ্যে বিশ্বকাপের ফাইনালে চলে এল এটা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের ঠেকেতে পারে। আসলে ৪০ লাখ লোকের ছোট এই দেশের ফুটবল ঐতিহ্য আছে। তাদের ফুটবল অবকাঠোমো বেশ উন্নত। তাই শুধু ২০১০ ছাড়া প্রতি বিশ্বকাপেই তাদের উপস্থিতি। এর মধ্যে দুই বিশ্বকাপে সেরা তিন দলের একটি। মূলত জনসংখ্যা কোনো বিষয় নয়। সঠিক পরিকল্পনাই একটি দেশের ফুটবলকে অনেক উপরে নিতে পারে। ক্রোয়েশিয়াই এর প্রমান।
সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার অংশ ছিল ক্রোয়েশিয়া। এই যুগোশ্লাভিয়া ফুটবলে ছিল শক্তিশালী দল। এই দেশ ভেঙ্গে ৬ টুকরা হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপেও খেলেছে। সেবার তারা ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার কাছে কোর্য়াটার ফাইনালে গোলশূন্য ১২০ মিনিটের পর হেরেছিল টাইব্রেকারে। এর আগে ১৯৩০, ১৯৫০,১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭৪ এবং ১৯৮২ বিশ্বকাপে খেলেছিল যুগোশ্লাভিয়া। ১৯৩০ এবং১৯৬২তে তারা হয়েছিল চতুর্থ। এই দেশ ভেঙ্গে পরবর্তীতে সার্বিয়া, বসনিয়া- হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, স্লোাভেনিয়া এবং মন্টিনেগ্রো এই ছয় দেশের জন্ম। এই ৬ দেশেরই ফুটবল খুব উন্নত। এবারতো একই সাথে রাশিয়ার টিকিট পেয়েছিল সার্বিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া। ২০১৪ বিশ্বকাপে বলকান অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব ছিল বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এবং ক্রোয়েশিয়া। ২০০২ এবং ২০১০ এ খেলেছে স্লোভাকিয়া। ১৯৯৮ যুগোশ্লাভিয়ার নাম নিয়ে, ২০০৬ এ সার্বিয়া- মন্টিনেগ্রো নামে , ২০১০ এবং এবার একক নামে বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব সার্বিয়ার। ১৯৯৮তে তারা দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত গিয়েছিল। মেসিডোনিয়া এবং মন্টিনেগ্রো এখনও বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি।
একটি দেশ ছয় টুকরা হওয়ার পরও তাদের ফুটবল শক্তি একটুকুও খর্ব হয়নি। ঠিকই তাদের সবর উপস্থিতি বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে। তা মূলত: তাদের স্কুল ফুটবল খুব উন্নত হওয়ায়।
এই ছয় দেশের মধ্যে ঈর্ষনীয় সাফল্য ক্রোয়েশিয়ারই। তারা দুই বার সেমি ফাইনালে উঠেছে। একবার ফাইনালে। নিশ্চিত নব্বইএর দশকে সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং বসনিয়া- হার্জেগোভিনা নিজেদের মধ্যে জাতিগত যুদ্ধে না জড়ালে ফুটবলে আরো ভালো অবস্থানে থাকতো। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত ১৭টি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তারা ছিল যুগোশ্লাভিয়ার অধীনে। ক্রোয়েশিয়ার এবারের দলের একজন ছাড়া সবাই ইউরোপের লিগ মাতাচ্ছেন। এর মধ্যে ইভান রাকিটিচ খেলছেন স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনায়। লুকা মডরিচ পরছেন আরেক স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের জার্সী। সুতরাং তাদের এমন সাফল্যই প্রত্যাশিত।
বিশ্বকাপের বাইরে ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৬ এবং ২০০৮ এর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে কোর্য়াটার ফাইনাল পর্যন্ত পৌছেছিল। এবারের বিশ্বকাপে তারা গ্রুপে কোনো ম্যাচেই ড্র করেনি। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনাকে ৩-০, নাইজেরিয়াকে ২-০ এবং আইসল্যান্ডকে ২-১ এ হারায়। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্ককে টাইব্রেকারে ৩-২ এ (নির্ধারিত সময়ে ১-১) এবং কোর্য়াটারে রাশিয়াকে টাইব্রেকারে ৪-৩ (নির্ধারিত সময়ে ২-২) পরাজিত করে।এরপর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়। যদিও ৫ মিনিটের সময় ট্রিপিয়ারের ফ্রি-কিকে লিড নিয়েছিল ইংলিশরা। এখন তারা চ্যাম্পিয়ন হলে বিশ্ব পাবে নতুন বিশ্ব সেরাকে।