মাঠ মাতানো অপ্রতিরোধ্য এমবাপে
- রফিুকল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ১১ জুলাই ২০১৮, ২১:০৫
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ের নায়ক তিনি। সেই ম্যাচে তার জোড়া গোল ল্যাতিন বাধা পেরুতে সাহায্য করে ফরাসীদের। এরপর সবার প্রত্যাশা বেড়ে যায় কেলিয়ান এমবাপের কাছে। যিনি আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইন তছনছ করতে পারেন তার পক্ষে প্রথমে উরুগুয়ে এবং পরে বেলজিয়ামের বিপক্ষেও গোল করা সম্ভব। অবশ্য কোর্য়াটার ফাইনাল এবং সেমি ফাইনালে গোলের দেখা পাননি এই টিন এজ ফরোয়ার্ড। তবে গত পরশু সেন্ট পিটার্সবার্গে বেলজিয়ামের ডিফেন্স লাইনকে কি আতংকের মধ্যেই না রেখেছেন তিনি। তার পায়ের কাজ এবং অদ্ভূত সব পাস দৃস্টি কেড়েছে সবার। সেই সাথে কাউন্টার অ্যাটাকে তার সেই ঝড়ের গতিতে ছুটে চলা। অবশ্য বেলজিয়ামের কিপার কোরতোয়ার দৃঢ়তায় সেন্ট পিটার্সবার্গে হতাশ হতে হয় তাকে। সাথে ডিফেন্সের প্রতিরোধ।
বয়স মাত্র ১৯। এই বয়সেই এমবাপে যা খেলছেন তাতে সব ঠিক মতো চললে বিশ্ব ফুটবলের আগামীর তারকা হবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতি মধ্যে তাকে তুলনা করা শুরু হয়েছে ব্রাজিলের কালো মানিক পেলের সাথে। মেসি, রোনালদোর গুনও অনেকে দেখছেন তার মধ্যে।
গত বছর মার্চে ফ্রান্স জাতীয় দলে আভিষেক তার। এবারের বিশ্বকাপে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তার গায়ে পরানো হয়েছে ফ্রান্স দলের ১০ নাম্বার জার্সী। যে জার্সী আর্জেন্টিনার মেসি এবং ব্রাজিলের নেইমারের গায়ে। এতেই পরিস্কার একজন ফুটবলার কতটুকু গুরুত্বপূর্ন হলে তাকে ১০ নাম্বার জার্সী দেয়া হয়।
বেলজিয়ামের বিপক্ষে প্রথম সেমি ফাইনালে এম্বাপে যখনই বল পেয়েছেন তখনই নড়েচেড়ে বসেছেন মাঠে উপস্থিত ৬৪২৮৬ জন দর্শক। কেউ আতংকে। কেউ বা খুশীতে। তাদের প্রত্যাশা মাফিক অবশ্য গোলের দেখা এই ম্যাচেও পেলেন না তিনি। তাতে কি। দলতো জয় পেয়েছে। এখন তার সামনে শেষ সুযোগ ১৫ জুলাই ফাইনালে জ্বলে উঠার। তার উজ্জ্বল পারফরম্যান্সই ফরাসীদের দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ এনে দিতে পারে।
বাম পাশে গ্রিজম্যান । আর ডান পাশ দিয়ে আক্রমন করেন এমবাপে। এম্বাপে অপেক্ষায় থাকেন কাউন্টার অ্যাটাকের। অবশ্য আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা যেভাবে তাকে পর্যাপ্ত খালি জায়গা দিয়েছিল বেলজিয়াম বা উরুগুয়ের রক্ষন কর্মীরা তা দেননি। ফলে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ মাতানো এমবাপে বাকী দুই ম্যাচে গোল শূন্য। এখন ফাইনালে কি পারবেন পোষ্টে লক্ষ্যভেদী গোল করতে।
জাতীয় দলের হয়ে ২১ ম্যাচে ৭ গোল করা এই এম্বাপে বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে গোল করা সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার।
আরো দেখুন : এমনটা ভাবেননি এমবাপে
বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে ফ্রান্স। আর এই ফ্রান্সের কান্ডারি বলা হয় তরুণ ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপেকে। অথচ শুরুর দিকে নাকি তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারবে তার দেশে।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সামুয়েল উমতিতির একমাত্র গোলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। লুজনিকি স্টেডিয়ামে আগামী রোববার তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের জয়ী দল।
সেমি-ফাইনালে পুরো ম্যাচজুড়েই নিজের গতির ঝলক দেখিয়েছেন এমবাপে। দলের জন্য ছয়টি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেন পিএসজির এই ফরোয়ার্ড। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই ফাইনালে পৌঁছানোর ঘোর কাটাতে পারছেন না তিনি। এমবাপে বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। এটা স্বপ্নেরও স্বপ্ন, ভবিষ্যতের স্বপ্ন, সবকিছুই।’
‘আমার বলার ভাষা নেই। এমনকি আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি খুব বড় স্বপ্নবাজ, আমিও কি এমনটা কল্পনা করতে পেরেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘এখনও আর একটি ম্যাচ বাকি আছে। কিন্তু আমরা যা কিছু করেছি তার জন্য আমরা গর্বিত।’
বিশ্বকাপে দারুণ খেললেও এখন ব্যালন ডি’অর নিয়ে ভাবতে চান না এমবাপে। ‘আমি বিশ্বকাপটা জিততে চাই- ব্যালন ডি’অর আমার মাথাব্যথা নয়।’
সেন্ট পিটার্সবার্গে দলকে প্রেরণা জ়োগাতে হাজির ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। ম্যাচের পর খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাতে হাজির হন ড্রেসিংরুমে। তিনি বলেন, ‘চেঞ্জিং রুমে কোচ ও আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম। সবাই একে অপরকে আলিঙ্গন করছিলাম। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ আমাদের দেখতে এসেছিলেন। সবাই আমাদের সঙ্গে আছে।’
অন্যদিকে ফ্রান্সের এই সাফল্যকে দলগত চেষ্টার ফল বলে মনে করেন সেমি-ফাইনালের গোলদাতা উমতিতি।
‘অনেক গর্বের, আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি।…গোলটা আমি করেছি। কিন্তু আমরা একটা ভালো ম্যাচ খেলেছি এবং আমি সবার জন্য গর্বিত।…আমরা প্রতিদিন কাজ করেছি, ফাইনালে পৌঁছে আমরা আমাদের লক্ষ্য স্পর্শ করেছি। আমি খুবই সস্তুষ্ট।’