আজ হতে পারতো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা স্বপ্নের ম্যাচ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ জুলাই ২০১৮, ২০:১২
রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বড় দলগুলো বিদায় নেয়ার পর, একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন ‘ফুটবলে এখন আর কোন পরাশক্তি নেই।’তবে বাংলাদেশের দর্শক এসব পরাশক্তি নিয়ে চিন্তা করে না। বিশ্বকাপ এলে ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিন’এই দুই ভাগ হয়ে যায় জাতি। শুধুমাত্র এই কারণেই রাশিয় বিশ্বকাপ থেকে ল্যাটিন দুই দেশের বিদায়ের পর বাংলাদেশের দর্শকদের ফুটবল উন্মাদনা চলে গেছে। অথচ হিসাবটা একটু উলট-পালট হলেই আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত দর্শক দেখতে পেতেন স্বপ্নের ম্যাচ, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই।
সময়ের পরিহাস হয়ে সেই জায়গায় মাঠে নামছে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। এই দুই দলের কাছে হেরেই ২০১৮ বিশ্বকাপকে গুড বাই বলতে হয়েছে মেসি আর নেইমারদের।
ফ্রান্স যে পথ ধরে সেমিফাইনালে সে পথ খুব সহজেই দখল নিতে পারতো মেসির আর্জেন্টিনা। আর বেলজিয়ানরা এভাবে দেয়াল তুলে দিবে নেইমারদের সামনে সেটা কেউ চিন্তাও করেনি। অথচ বাস্তবতা মেনে মেসি নেইমারের জায়গা দখল করে নিয়েছে ফ্রান্সের এমপাপে আর বেলজিয়ামের লুকাকু।
৩০ জুন নকআউটপর্বের প্রথম ম্যাচ থেকেই বিদায় নেয় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বাড়ির পথ ধরতে হচ্ছে সাম্পাউলির শিষ্যদের।
ওইদিন রাত আটটায় (বাংলাদেশ সময়) খেলা শুরুর হওয়ার পর ১৩ মিনিটে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় তারা। পেনাল্টিকে গোল করে ফ্রান্সকে এক গোলে এগিয়ে নেন অ্যন্টনিও গ্রিজম্যান।
এরপর ৪১ মিনিটে দুরপাল্লার এক দৃষ্টিনন্দন শটে গোল দিয়ে আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান ডি মারিয়া। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুদল। বিরতি শেষে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ৪৮ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন গ্যাব্রিয়েল মেরাকাডো।
তবে এই এগিয়ে যাওয়া ধরে রাখতে পারেনি আর্জেন্টিনা। পরে ৫৭ মিনিটে পাভার্ডের গোলে সমতায় ফিরে ফ্রান্স। এরপর ৬৪ ও ৬৮ মিনিটে জোড়া গোল করেন কিলিয়ান এমবাপে। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে আগুয়েরো এক গোল শোধ করলেও হার ঠেকাতে পারেননি।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা বিদায় নিলেও ব্রাজিল টিকে থাকায় দর্শকদের উন্মাদনা টের পাওয়া যাচ্ছিল ভালোভাবেই। কিন্তু ৭ জুলাই রাতে বেলজিয়ামের কাছে হেরে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ানরা বিদায় নেয়ার পর সেমিফাইনালের আগেই চুপসে গেছে বাংলাদেশীদের বিশ্বকাপ। ওই দিনের অঘটন ভেঙে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ব্রাজিল সমর্থকের মন। আবারো আত্মঘাতি গোলের হানা, এবারের বিশ্বকাপে এগারোতম আত্মঘাতি গোল। বেলজিয়ামের কাছে ব্রাজিল হেরেছে ২-১ গোলে।
৭ জুলাই ভাগ্যও সহায় ছিল না ব্রাজিলের। শুরুতেই গোলপোস্টে লেগে বল ফিরে আসার মধ্য দিয়েই ইঙ্গিত ছিল কপালে খারাবি আছে। ওই হারের পর এখনও যে বিশ্বকাপ চলছে সেটা বোধয় ভুলেই গেছেন অনেকে। এখন টেলিভিশনের সামনে দর্শকদের খেলা দেখার মাঝে ওই হৈ হুল্লোড় আর নেই। সমস্বরে আওয়াজ জানালা ভেদ করে বাইরে আসে না। বিভিন্ন দলের পতাকা উড়ছে যে শোক দিবস পালন করছেন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার ভক্ত দর্শকরা। বয়স হয়েছে, মেসি, নেইমারদের, খেলার রণকৌশল ঢের পাল্টেছে কিন্তু ভক্তদের মনে বিগতরা স্থান দখল করে আছেন এখনও।
যার কারণে মেসি শেষবারের মত জ্বলে উঠলেও লাভ হয়নি। কাঁদতে কাঁদতে মাঠের বাইরে গেছেন নেইমার।
নেইমাররা দুরন্ত খেললে কি হবে, বেলজিয়ান গোলকিপার কুর্তোয়া এবং বারপোস্ট অন্তত ৬’বার রক্ষা করেছে বেলজিয়ামকে। প্রায় পেতে পেতে একটি পেনাল্টিও হাতছাড়া করেছে ব্রাজিল। বেলজিয়ামের লুকাকু-হ্যাজার্ড-দে ব্রুইনির ঝটিকা আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে ব্রাজিলের ডিফেন্স। তখনই দুটো গোল খেয়ে বসে ব্রাজিল। বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা ভক্তদের মুখে হাসি থাকলেও তা ছিল মলিন।
তিতের ভক্তরা বার বার বলেন, তার ডিফেন্স খুব জমাট। ২০১২ সালে তার কোরিন্থিয়ান্স মাত্র ৪ গোল হজম করে বিশ্ব ক্লাব কাপ ও লিবার্তাদোরেস কাপ জেতে। এই ম্যাচ বোঝাল, কাসেমিরো না থাকলে ব্রাজিলের বিখ্যাত ডিফেন্স কেমন লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কাসেমিরোর বিকল্প ফের্নান্দিনহোর আত্মঘাতী হেডেই ব্রাজিল বিপর্যয় সরণিতে হাঁটা শুরু করে। তিতে বিরতির পর শেষ তিন অস্ত্রকে নামান। ফির্মিনো, কোস্তা, রেনাতো। ব্রাজিল তখন ভয়ঙ্কর। রেনাতো ১-২ করেন ৭৬ মিনিটে। তাতেও হাতে রইল শূন্য। ব্রাজিল বিসর্জন।
৬০ বছর আগে সুইডেন থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে গিয়েছিল পেলের ব্রাজিল। এরপর ইউরোপের দরজা বন্ধ হয়ে যায় লাতিন আমেরিকানদের কাছে। বেলজিয়ানরা সেই কাজটা করছে একেবারে অঙ্ক কষে। চরম আক্রমণ আর কঠিন ডিফেন্সে। এবারের বিশ্বকাপ প্রমাণ করল সুপারস্টার নয়, টিমই সব।
মঙ্গলবার অনেকেই টিভির সামনে বসবেন ফ্রান্স-বেলজিয়ামের খেলা দেখতে। কিন্তু মনের গহীন কোনে জমা থাকবে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের ছায়া।