১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফ্রান্স বনাম বেলজিয়াম : কে কার মুখোমুখি?

বিশ্বকাপ
ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের তারকারা - সংগৃহীত

রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে আজ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে অন্যতম দুই শক্তি ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম। তারকাসমৃদ্ধ এই দুই দলের মূলত ছয় খেলোয়াড়ের মধ্যে হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

আন্তোনিও গ্রিজম্যান বনাম রোমেলু লুকাকু
ফ্রান্সের হয়ে আরেকবার উজ্জল গ্রিজম্যান। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড ২০১৬ ইউরো কাপে ছয় গোল করে গোল্ডেন বুট অর্জন করেন। যদিও ফাইনালে তার দল পর্তুগালের কাছে হেরে রানার্স আপ হয়। এবার তিনি এক ধাপ সামনে যেতে চাইবেন।

গ্রিজম্যান এ পর্যন্ত রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনটি গোল করেছেন। লুকাকুর চেয়ে এক গোল কম। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন। তিনি মোট ছয়টি গোল নিয়ে শীর্ষে। গ্রিজম্যান এর আগে বড় টুর্নামেন্টগুলোর ছয়টি নক আউট ম্যাচে মোট সাতটি গোল করেছেন।

ওদিকে লুকাকু বেলজিয়ামে তার সবশেষ ১৩টি ম্যাচে ২০ গোলে অবদান রেখেছেন। এর মধ্যে ১৭টি নিজে করেছেন এবং তিনটি করিয়েছেন।

একটি পরিসংখ্যান দিলেই এই লুকাকুর প্রতিভা সম্পর্কে অনুমান করা যাবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মাত্র পাঁচজন খেলোয়াড়ের মাঝে লুকাকুর নাম আছে, যারা ২৩ বছর বয়সেই লিগে ৫০টি গোল করেছেন। বেলজিয়ামের হয়ে ৭৩ ম্যাচে ৪০ গোল করে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড এই রেড ডেভিল তারকারই দখলে।

বেলজিয়ান জায়ান্ট আন্ডারলেখটের হয়ে তার প্রতিভার বিকাশ শুরু। এরপর আসেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসিতে। স্টামফোর্ড ব্রিজেও নিজের প্রতিভার সবটাই ঢেলে দেন রোমেয়ু লুকাকু। কিন্তু তার আসল জাদুটি বের হয়েছে এভারটনে খেলার সময়। তাদের হয়ে ১১০ ম্যাচে ৫৩ গোল করেন লুকাকু। এই বেলজিয়ানের আক্রমণাত্মক ফুটবল প্রতিভা দেখে তাকে এভারটন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিয়ে আসে। তাদের হয়ে গত মওসুমে ৩৪ ম্যাচে ১৬ গোল করেছেন।

রাশিয়া বিশ্বকাপে তিউনিসিয়া ও পানামার বিপক্ষে দুটি করে চারটি গোল নিয়ে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে রেখেছেন নিজেকে। দিয়েগো ম্যারাডোনার পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে পরপর দুই ম্যাচে দুটি গোলের রেকর্ড গড়েন লুকাকু। যেটি করেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে।


কিলিয়ান এমবাপে বনাম এডেন হ্যাজার্ড
টিনেজার এমবাপে বিশ্ববাসীকে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ৪-৩ গোলে ফ্রান্সের জয়ের নায়ক হয়ে। পিএসজির এই খেলোয়াড় তার বিধ্বংসী আক্রমণ দেখিয়েছেন। বিদ্যুত গতি এবং গোলের দিকে প্রখর দৃষ্টি দুটি গোল ও একটি পেনাল্টি পেতে তাকে সাহায্য করেছে।

পেরুর বিরুদ্ধে গোল করার সময় তার বয়স হয়েছিল ১৯ বছর ১৮৩ দিন। ফ্রান্সের ইতিহাসে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় যিনি দেশের পক্ষে এতো বড় টুর্নামেন্টে গোল করলেন।

অন্যদিকে বেলজিয়ামের হয়ে দুটি গোল এবং দুটি অ্যাসিস্ট নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার নায়ক দলটির ক্যাপ্টেন হ্যাজার্ড।

এই দুই খেলোয়াড়ই বল দিয়ে ছুটতে পছন্দ করেন। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত টিকে থাকাদের মধ্যে এমবাপে এবং হ্যাজার্ড রয়েছেন ড্রিবলিংয়ের শীর্ষে।

হ্যাজার্ডের ভাষায়, "এমবাপে যখন আরো ছোট ছিলেন তখন সে আমার ভিডিও দেখতো। তবে এই বয়সে এমবাপে যা অর্জন করেছে, এজন্য আমি তাকে সমীহ করি।"

পল পগবা বনাম কেভিন ডি ব্রুইনে
মধ্যমাঠের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য লড়বেন এই দুই ম্যানচেস্টার খেলোয়াড়। ইউনাইটেডের পগবা এবং সিটির ডি ব্রুইনে দু'জনই মাঝ মাঠে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে চাইবেন।

তাদের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ডি ব্রুইনে এ পর্যন্ত পগবার চাইতে তিনগুন বেশি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।

তবে ফ্রেঞ্চম্যান পগবা আবার তার প্রতিপক্ষের চাইতে বেশিবার বল ছিনিয়ে নিয়েছেন।

এখন ফুটবল ভক্তদের অপেক্ষা এই দুই ইউরোপীয় প্রতিবেশী পরাশক্তির লড়াই দেখার। - বিবিসি

 

আরো পড়ুন : এমবাপে ব্যালন ডি’অর পাওয়া উচিত

কিলিয়ান এমবাপের প্রশংসা পঞ্চমুখ বেলজিয়ামের অধিনায়ক হ্যাজার্ডও। ফ্রান্সের ১০ নাম্বার জার্সিধারী ফুটবলারের যেভাবে প্রশংসা করেছেন তাতে ইতোমধ্যে তার ভক্তও হয়ে গেছেন তিনি। আজ দুই দলের মধ্যে ফাইনালে ওঠার লড়াই। এমন সময় তার জন্য সবচেয়ে বেশি হুমকিস্বরূপ সেই এমবাপেকে তিনি যেন আরো উৎসাহ প্রদান করেছেন। কাল তিনি বলেছেন এমবাপে যেভাবে খেলছেন তাতে ইতোমধ্যে তিনি ব্যালন ডি’অর-এর দাবিদার। সেন্ট পিটার্সবার্গে আজ দুই দল লড়াইয়ে অবতীর্ণ। ইউরোপের এ দুই দল একে অপরের বিপক্ষে বেশ ক’বার খেলেছেন। দুই দলই ভালো জানেন প্রতিপক্ষের দুর্বলতা। হ্যাজার্ড সম্ভবত দুই দলের মধ্যে ব্যতিক্রম দেখছেন শুধু এমবাপ্পেকে। বিশ্বকাপে পিএসজির এ তারকা যেভাবে গতি নিয়ে খেলছেন তা যেকোনো রক্ষণভাগের জন্য চিন্তার কারণ।

চেলসির তারকা ফুটবলার হ্যাজার্ড বলেন, ‘বিশ্বকাপে সে যে পারফরম্যান্স ইতোমধ্যে দেখিয়েছেন তাতে তার অবশ্যই ব্যালন ডি’অর পাওয়া উচিত। তার সেটি পাওয়ার যোগ্যতা তার রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকে যেভাবে দেখেছি তার খেলার যে মান, সেটি অনেক উন্নত। সবার সাথে তার খেলার ধরনটা মিলিয়ে ফেলা যাবে না। সে সত্যিই এক্সট্রা কিছু দেখাতে সক্ষম। আমি মনে করি সেটা ওই কৃতিত্বের দাবিদার।’ ফ্রান্সের এ ফরোয়ার্ড দ্বিতীয় রাউন্ডে অনেকটা একাই বিদায় করে দিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। দুটি গোল তিনি নিজে করেছেন। প্রথম গোলটি যেটি পেনাল্টি থেকে করেছিলেন গ্রিজম্যান সেটিও তাকে ফাউল করে ফেলে দেয়ার জন্যই ফ্রান্স পেয়েছিল।

২৭ বছর বয়সী হ্যাজার্ড তার সাথে এমবাপের পুরনো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ফোনে তার সাথে বহুবার আমার কথা হয়েছে। সে আমাকে বলেছে সে নাকি আমার অনেক ভিডিও (খেলার) দেখেছেন। যখন সে আরো তরুণ ছিল। আমি বুঝতে পারছি না- আমার কী অনেক বয়স হয়ে গেছে...। কিন্তু আমার তো তেমনটা মনে হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমার সময়- তার খেলার ভিডিও ফুটেজ দেখার। আমি সেটা টাইম টু টাইম দেখিও। তার খেলা দেখে তার ওপর আমার অগাধ আস্থা ও সম্মানবোধ জেগেছে। আমি অবাক হয়ে যাই- এমবাপে কী করছে? আমি এখনো এমনটা দেখিনি যে, মডার্ন ফুটবলে একজন ফুটবলারের এতটা দ্রুত উন্নতি ঘটে।’

বেলজিয়ামের এ অধিনায়ক নিজ থেকেই এগিয়ে রাখছেন ফ্রান্সকে। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ফ্রান্স এগিয়ে। কারণ তারা ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন দল। এরপর বেলজিয়াম।’


আরো সংবাদ



premium cement