হেজার্ড বেলজিয়ামের 'জিদান'
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ০৯ জুলাই ২০১৮, ১৫:০৬, আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮, ১৫:৩৫
এবার কি নতুন দুই দল ফাইনালে খেলবে নাকি পুরোনো চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের সাক্ষাৎ হবে ১৫ জুলাই মস্কোতে। সেই উত্তরের জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। চার সেমি ফাইনালিস্টের মধ্যে ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া এবং ইংল্যান্ডের শেষ চারে আসাটা প্রত্যাশিত। কিন্তু রীতিমতো আফসেট ঘটিয়ে বেলজিয়াম এখন শিরোপার রেসে। ব্রাজিলকে ২-১ এ বিধ্বস্ত করে তারা ১৯৮৬ সালের পর সেমিতে। মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে তাদের প্রতিপক্ষ ১৯৯৮' এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
বেলজিয়ামের এই পর্যন্ত আসার নেপথ্যে দলের সব সদস্যই। তবে বিশেষভাবে বলতে হবে এডেন হেজার্ড, গোলরক্ষক কোরতোয়া এবং রোমেলো লুকাকুর নাম। এই দু'জনের কৃতিত্বেই তারা ফের সেমিতে।
এদিকে হেজার্ডকে ফরাসি সাবেক কৃতি ফুটবলার জিনেদিন জিদানের সাথে তুলনা করেছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা ইউরি জিওরকায়েফ। তার যুক্তি, ২০০৬ সালে যেমন ব্রাজিলের বিপক্ষে ফ্রান্সের জয়ের নেপথ্যে ছিলেন জিদান, তেমনি এবার কাজান এরিনায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয়ের মূল কারিগর হেজার্ড।
উল্লেখ্য এবারের বিশ্বকাপে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন চেলসিতে খেলা হেজার্ড।
ইউরি জিওরকায়েফ এখন রাশিয়ায় অবস্থান করছেন ফ্রান্সের এক টিভি চ্যানেলের বিশেষজ্ঞ ধারা ভাষ্যকার হিসেবে। ফ্রান্স-বেলজিয়াম ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই তার টান থাকবে প্রিয় দেশ ফ্রান্সের প্রতি। তবে ব্রাজিলের বিপক্ষে বেলজিয়ামের খেলায় মুগ্ধ তিনি। জানান, ‘সেদিন হেজার্ডের ভূমিকা ছিল ঠিক ২০০৬ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলা জিদানের মতো। ২০০৬ সালের জার্মান বিশ্বকাপে গোল করেছিলেন থিয়েরি অঁরি। কিন্তু নেপথ্য নায়ক ছিলেন জিদান। এবার কাজানে হেজার্ড সেই কাজই করেছেন। ডি ব্রুয়েন গোল পেলেও আসল কারিগরতো হেজার্ড।’
জিওরকায়েফের মতে, ‘উপরে হেজার্ড এবং নিচে কোরতোয়া এই সমন্বয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে জয় বেলজিয়ামের। আমি বলবো ২-০তে পিছিয়ে থেকেও জাপানের বিপক্ষে যে জয় পেয়েছে বেলজিয়াম এর চেয়ে অসাধারণ জয় ছিল তাদের নেইমারদের দলের বিপক্ষে। হ্যাঁ, ব্রাজিল সেই খেলায় অনেক চান্স পেয়েছে। তাতে কি। তুমি কত ভালো ম্যাচ উপহার দিয়েছো সেটাই তো মূখ্য।’
গুরুত্বপূর্ণ সেমিতে বেলজিয়াম পাবে না তাদের রাইটব্যাক মিউনিয়ারকে। সাসপেন্ড তিনি। এতে বেলজিয়াম দলের তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য জিওরকায়েফের। তিনি উল্লেখ করলেন, ফ্রান্সের লেফট সাইড অতোটা ভালো নয়। তবে ফরাসিদের রাইট সাইড দূর্দান্ত।
সবাই উঠতি ফরোয়ার্ড এলিয়ান এমবাপেকে নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু আলোচনায় নেই মিডফিল্ডার এনগোলো কেন্টে। ২০১৫/১৬ সালে লিস্টারসিটিকে চ্যাম্পিয়ন করানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অসাধারণ। গত চার বছরে নিজের অনেক উন্নতি করে চলে এসেছেন লাইমলাইটে।
জিওয়কায়েফের মতে, কেন্টে হলো ফরাসি দলেন মূল চালিকা শক্তি। ঠিক মেশিনের মতো। তবে অবশ্যই ভালো করছে এমবাপে।
আজকের সেমিতে তিনি ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখলেন। তা তাদের নামের বিচার এবং মানসম্পন্ন একাধিক ফুটবলারের উপস্থিতির কারণে। তবে বেলজিয়ামকে যে রূপে দেখা গিয়েছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে সে ধারা বজায় থাকলে যে কোনো দলকেই হারানো সম্ভব বেলজিয়ামের পক্ষে, জানান এই সাবেক ফরাসি ফুটবলার।
আরো পড়ুন : প্রস্তুত ডালিচের ক্রোয়েশিয়া
ইংল্যান্ডের মোকাবেলায় ক্রোয়েশিয়া প্রস্তুত বলেই সাফ জানিয়ে দিলেন ক্রোয়েট কোচ জøাটকো ডালিচ। নকআউটের দুই ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের পর টাইব্রেকারের বাড়তি পরিশ্রম সেমিফাইনালে ক্রোয়েটদের সহজাত পারফরম্যান্সে কোনো নেগেটিভ প্রভাব রাখতে পারবে না বলেও তিনি অভিমত দেন। শনিবার টাইব্রেকারে রাশিয়াকে হারিয়ে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। চলমান ফিফার ২১তম মেগা আসরের ফাইনালে ওঠার রেসে দলটির প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আসছে ১১ জুলাই মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে দল দু’টির মুখোমুখি হবে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন শেষ চারের লড়াই সামনে রেখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডালিচ বলেন, অবশ্যই আমরা কিছু রসদ হাতে রেখেছি সেমির জন্য। নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন হবে ইংল্যান্ড। লড়াকু একটি ম্যাচ নিশ্চিত। আমরা সর্বোচ্চ উজাড় করে খেলব। স্বপ্ন পূরণে আর বাধা মাত্র দুই ম্যাচের। সামর্থ্যরে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ফুটবলাররা।’
টাইব্রেকারে ডেনমার্কের বিপক্ষে জয়ের পর আয়োজক রাশিয়ার মোকাবেলায়ও উত্তেজনায় ঠাসা শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত অতিক্রমে জয়োৎসব নিশ্চিত হয় ক্রোয়েটদের। পরপর দুই ম্যাচে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট করে খেলতে হয়েছে দলটির ফুটবলারদের। সবশেষে সামাল দিতে হয় টাইব্রেকারের বাড়তি স্নায়ুচাপ। ক্রোয়েশিয়ার তুলনায় নকআউটে পরিশ্রম কম হয়েছে ইংল্যান্ডের। শেষ ষোলোয় টাইব্রেকার বাধা পাড়ি দিলেও কোয়ার্টারে সহজ জয়েই ২৮ বছর পর ইংলিশরা প্রথমবারের মতো উঠেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।
শেষ চারে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে তুলনামূলকভাবে বাড়তি পরিশ্রমের পথ পাড়ি দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারেরা। রাশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক সুবসিচ কয়েক দফা ইনজুরির সঙ্কটে পড়েন। যদিও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি খেলা চালিয়ে গেছেন। ডালিচ বলেন, রাশিয়া বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল প্রকৃত লড়াই। সেমিফাইনালে প্রতিনিধিত্বের যুদ্ধ। ফুটবলীয় সৌন্দর্য প্রদর্শনের কোনো সুযোগ মেলেনি। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে আমরা শেষ চারে উঠেছি।