হাসিমুখে পরাজয় মেনে নিয়েছে মস্কোবাসী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ জুলাই ২০১৮, ১০:২৩
লুঝনিকিতে সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে হারিয়ে যে উৎসব শুরু হয়েছিল, তা সোচির পেনাল্টি শ্যুট আউটে গিয়ে থামলো।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিফার যে ফ্যানজোন, সেখানে যাওয়ার জন্য বিকেল থেকেই মানুষের ঢল।
ঠিক যানজট না হলেও, অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় যানবাহন বেশি ছিল ফ্যানজোন পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
উৎসব এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার আগেই নেমে যেতে হয় সবাইকে। সেখান থেকে পায়ে হেটে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম দিন মানুষ ছিল কম। মূলত ব্রাজিল ও ফরাসি সমর্থকদের আনাগোনা ছিল সেদিন।
কিন্তু রাশিয়ার খেলার দিন যেন অন্য কোন দল নেই। হাতে গোনা কয়েকজন ইংল্যান্ড ও সুইডেন সমর্থক ছাড়া বাকি সবাই রাশিয়ার তিন রঙ গায়ে মাখিয়ে হাজির।
বয়স্ক রাশিয়ানরা ইংরেজিতে অভ্যস্ত না হলেও, তরুণরা অনেকেই ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন।
তাদেরই একজনকে খেলা শুরুর আগে প্রশ্ন রাখা হয় রাশিয়ার ফুটবল দলের কাছে চাওয়া পাওয়া কেমন? চোখে মুখে অবিশ্বাস রেখেই বললেন। রাশিয়া জিতবে বিশ্বকাপ।
এক নারী ভক্তকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জোর গলায় কিছু বলতে অনিচ্ছুক। তবে তারও আশা রাশিয়ায় থাকবে সোনালী ট্রফি।
মূলত রাশিয়ানদের কাছে কোয়ার্টার ফাইনাল অনেক বড় মঞ্চ। প্রথম পর্বে অনেকেরই আগ্রহ ছিল না।
মস্কোর একটি হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পর জানা যায়, এখানে সৌদি আরব ও মিশরকে হারানোর পর রাশিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে বুকিং দেয়ার ফোন আসতে থাকে।
অনেকের মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ না থাকলেও, অন্তত প্রধান শহরে জয় উদযাপন করার জন্য এখানে আসেন।
প্রথম পর্বে রানার্স আপ হয়ে দ্বিতীয় পর্বে ওঠার পর যে বিশ্বাস পান মস্কোর ফুটবল ভক্তরা সেটা বহুগুণে বেড়ে যায় স্পেনকে টাইব্রেকারে হারানোর পর।
২০১০ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলটিকে হারিয়ে মস্কোবাসী বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভাবার সুযোগ পায়।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী গতকালের ম্যাচের আগে বলেন, দল জিতুক বা হারুক এটা এখন আর মুখ্য না। রাশিয়ার ফুটবল নিয়ে গর্ব করার এই উপলক্ষতেই তারা খুশি।
গতকাল ম্যাচ শুরুর আগে অধিকাংশ রাশিয়া সমর্থকদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসবের আমেজ ছিল।
ম্যাচ শুরু হবার পর শুরু হয় আবেগ ও উৎকণ্ঠা। গোলোভিন, চেরিশভরা গোলমুখে গেলেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা প্রাঙ্গণ।
সব মিলিয়ে দুই লাখ মানুষের জমায়েত 'রাশিয়া, রাশিয়া' বলে চেঁচাচ্ছিল।
পরিস্থিতি এমনও হয়েছিল, অন্য যেসব দলের সমর্থকরা ছিল তারাও রাশিয়ার পক্ষেই গলা ফাটাচ্ছিলেন।
প্রথম গোলের পর উল্লাসে মাতে গোটা ফ্যানজোন।
ক্রোয়েশিয়া যখন গোল পরিশোধ করে বড় পর্দায় না তাকালে বোঝাও যেত না যে কিছু হয়েছে, এতটাই নীরব হয়ে যায় প্রাঙ্গণ।
শেষবার গোটা ফ্যানজোন আনন্দে ভাসে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে রাশিয়ার গোলের পর।
কিন্তু সেই আনন্দ মিলিয়ে যায় পেনাল্টি শুটআউটে।
ক্রোয়েশিয়ার জয়ের পর অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু বেশিরভাগ সমর্থকরাই, ভাল খেলার তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান।
এক ক্রন্দনরত তরুণী বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশা ছিল বলেই খারাপ লাগছে। কিন্তু এই হারে গোটা আসরের প্রাপ্তি কমবে না। ওরা আমাদের নায়ক, এই দলটাই সেরা।
মস্কো শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত পথে ঘাটে বিশ্বকাপের আমেজ চোখে পড়ে খুব কম। ফুটপাথে দু একটি তথ্য কেন্দ্র না থাকলে লোকে বুঝতেই পারতো না এখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর চলছে।
বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে এই বিশ্বকাপ তেমন সাড়া না ফেললেও তরুণরা বিশ্বকাপ নিয়ে মেতেছিলেন পুরো দমে। - বিবিসি