গোল্ডেন বুটের দৌড়ে এগিয়ে আছেন কারা?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ জুলাই ২০১৮, ১৩:৪৫
ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন সবসময়ই প্রশংসিত হন তার গোল করার দক্ষতার জন্য। যেমন ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হলো লিথুয়ানিয়ার বিরুদ্ধে এবং সেই ম্যাচেই প্রথম গোলটি দিতে তিনি সময় নিয়েছিলেন মাত্র ৭৯ সেকেন্ড। সেই গোলটি দিতে তাকে ফুটবল স্পর্শ করতে হয়েছে মাত্র তিনবার ।
প্রিমিয়ার লীগের দুইবারের শীর্ষ গোলদাতা কেন এককভাবে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক। শেষ ষোলোতে কলাম্বিয়াকে হারানো পেনাল্টি গোলের মাধ্যমে তার গোলের সংখ্যা ছয়টি।
কেনের কাছেই আছেন বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু এবং এরপরেই আছেন ফরারি তারকা কিলিয়েন এমবাপেসহ আরো কয়েকজন।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে গ্যারি লিনেকারও ছয়টি গোল করেছিলেন তবে এবার কেইনের সামনে আরো অন্তত দুটি ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা আছে।
এর মধ্যে একটি নিশ্চিত আর সেটি হলো সেমিফাইনাল, যাতে তার প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া।
আর সেমিফাইনালে জিতলে ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে ফ্রান্স বা বেলজিয়ামের।
এসব কারণে হ্যারি কেইনের গোল সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এখনো।
হ্যারি কেনের গোলগুলো ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আর কারা?
তার ছয়টি গোলের মধ্যে তিনটি এসেছে পেনাল্টি থেকে। আর একটি হেড থেকে ও দুটি বক্সের ভেতর থেকে। এর পরে সবচেয়ে বেশি চারটি গোল করেছেন লুকাকু যার তিনটি বক্সের ভেতর থেকে আর একটি হেডে।
ফরারি তারকা গ্রিজম্যানের তিন গোলের মধ্যে দুটি পেনাল্টি আর একটি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া শটে।
এমবাপের তিনটি গোলই এসেছে বক্সের ভেতর থেকে।
এছাড়া দুটি করে গোল আছে ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ আর বেলজিয়ামের হ্যাজার্ডের ।
মজার বিষয় হলো, হ্যারি কেন ছয়টি গোল করতে শট মেরেছেন দশটি।
আগের গোল্ডেন বুটজয়ী কারা?
২০১০ এর বিশ্বকাপে প্রথম গোল্ডেন বুট দেয়া শুরু হয়।
এর আগে ১৯৮২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেয়া হতো গোল্ডেন শু , আর এর আগে আনুষ্ঠানিক পদক না দিলেও দেয়া হতো সর্বোচ্চ গোলদাতার স্বীকৃতি।
এবার কেন ইতোমধ্যেই ছয় গোল দিয়েছেন।
এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার রদ্রিগেজ ও ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েশিয়ার সুকার ছয়টি করে গোল দিতে সর্বোচ্চ গোলদাতার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।
তবে ২০০২ সালে সর্বোচ্চ আট গোল করে গোল্ডেন সু পেয়েছিলেন ব্রাজিলের রোনালদো। আর ২০০৬ ও ২০১০ সালে পাঁচটি করে গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন যথাক্রমে জার্মানির ক্লোসার ও মুলার।
গোল্ডেন বুটের গুরুত্ব কতটা?
সংক্ষেপে বলতে গেলে নিজের ক্যারিয়ার বিশেষ করে ক্লাব ফুটবলে ভালো জায়গা নেয়ার জন্য গোল্ডেন বুটের গুরুত্ব আছে।
যেমন গ্যারি লিনেকার। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ৬ গোল দিয়েছিলেন গ্যারি লিনেকার। এর সুবাদে বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার।
হাঁটুর সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে ২০০২ এর বিশ্বকাপে আট গোল করেছিলেন রোনালদো। ওই সময়ের বিশ্বের সেরা তারকা মানা হতো তাকে।
বিশ্বকাপের পরই ইন্টার মিলান ছেড়ে রেয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন আর পরের বারই পেয়ে যান ব্যালন ডি অ'র।
আরো পড়ুন : নেইমার পাকা অভিনেতা নাকি ফাউলের শিকার?
ব্রাজিলের সুপারস্টার নেইমারকে নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে বিতর্ক কম হয়নি। প্রতিদিনই নানা কারণে সংবাদ হয়েছেন তিনি। কিন্তু ইউরোপীয় গণমাধ্যমের বিচারে, নেইমার হচ্ছেন আসলে পাকা অভিনেতা, খেলার মাঠে পড়ে গিয়ে মারাত্মক চোট পাওয়ার অভিনয়ে তার জুড়ি মেলা নাকি ভার। ব্রাজিল এখন ছিটকে পড়েছে বিশ্বকাপ থেকে। কিন্তু তাই বলে নেইমারকে নিয়ে আলোচনা থেমে নেই।
ইন্টারনেটে তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শেষ নেই। এরকম একটি বিদ্রুপাত্মক পোস্ট এক কথিত ফুটবল স্কুল নিয়ে, যেখানে নাকি ছেলেদের ডাইভ দিয়ে পড়ে গিয়ে কিভাবে চিৎকার করতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়!
ফ্রান্সের খেলোয়াড় এবং অভিনেতা এরিক ক্যানটোনা ইউরোস্পোর্ট চ্যানেলের বিশেষজ্ঞ কর্ণারে এরকম কিছু বিদ্রুপাত্মক ভিডিও আপলোড করেছেন। এরকম একটি ভিডিওতে তিনি নেইমারকে তুলনা করেছেন 'চার চাকা লাগানো স্যুটকেসের সাথে, যেটি সহজে এই চাকার ওপর ঘুরতে পারে।
অন্যদিকে মারাডোনার মতো কিংবদন্তী নেইমারের সমালোচনা করেছেন যেভাবে অন্য কোনো খেলোয়াড়ের ছোঁয়া লাগা মাত্র নেইমার যেভাবে ব্যাথা পাওয়ার অভিনয় করেছেন।
তবে মনে রাখতে হবে নেইমার হচ্ছে ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ব্রাজিলের জন্য টুর্নামেন্টে তিনি দুটি গোল দিয়েছেন। ২৭ গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এবং ১৩ বার গোল মুখে শট নিয়েছেন।
তার পরিসংখ্যানের দিকে যদি মনোযোগ দেয়া যায়, তাহলে কথিত নাটুকেপনার বাইরে আরো অনেক মিশ্র চিত্রই কিন্তু আপনি দেখতে পাবেন।
সুইস টিভি চ্যানেল আরটিএস স্পোর্টস সম্প্রতি একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। এতে তারা দাবি করছে, নেইমার এবারের টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের চারটি ম্যাচে নাকি মোট ১৩ মিনিটি ৫০ সেকেন্ড মাটিতে বসে কাটিয়েছে। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম ম্যাচটিও রয়েছে।
এই পরিসংখ্যান এরপর আরো অনেক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। শেয়ার করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার?
তবে আরেকটি তথ্য হজম করার জন্য এক মিনিট সময় নেয়া যাক। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে নেইমারের বিরুদ্ধেই কিন্তু এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ফাউল হয়েছে! মোট ২৬ বার!
লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চাইতে অনেক বেশি। মেসির বিরুদ্ধে ফাউল হয়েছে ১৫ বার, আর রোনালদোর বিরুদ্ধে ১৪ বার।
পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ফাইভ থার্টি এইট ডট কম দাবি করছে, গত তিনটি বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে আসলে খেলার মাঠে নেইমারকেই সবচেয়ে বেশি তাড়া করা হয়েছে।
প্রতি খেলায় গড়ে তার বিরুদ্ধে ফাউল হয়েছে পাঁচ দশমিক দুই। অথচ নেইমার এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ খেলেছেন। রোনালদো আর মেসি বিশ্বকাপ খেলেছেন চারবার করে।
এর আগেরবার ব্রাজিল বিশ্বকাপে নেইমারের বিরুদ্ধে ফাউল হয়েছিল ১৮ বার। মেসির বিরুদ্ধেও একই সংখ্যায়।
তবে মেসি গেল বিশ্বকাপে খেলেছিলেন সাতটি ম্যাচ। আর নেইমার পঞ্চম ম্যাচেই এমন গুরুতর আঘাত পান যে, মাটিতে পড়ে যান। তার পিঠে আঘাত লেগেছিল কলম্বিয়ার যুনিগার হাঁটুর গুঁতো লেগে।
মেরুদন্ডের একটি হাড়ে সাঙ্ঘাতিক আঘাত পান, তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। এটি তার খেলোয়াড় জীবনের সমাপ্তি টেনে দিতে পারতো।
খেলার মাঠে কী ঘটে তা দেখা এবং এর মানে বোঝার নানা উপায় আছে। আমি নিজে বার বার সহিংস ফাউলের শিকার হয়েছি আমার খেলোয়াড় জীবনে, বলছেন সাবেক বর্ষসেরা বিশ্ব ফুটবলার এবং বিশ্বকাপ জয়ী তারকা রোনাল্ডো। তার মতে, 'যারা তার ওপর লাথি মারছে তাদের হাত থেকে নেইমার নিজেকে রক্ষা করছেন মাত্র।' আর রেফারিরাও এখানে নেইমারকে রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
নেইমারের পক্ষে সবচেয়ে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছে তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি আর্জেন্টিনার একটি সংবাদপত্র 'ওলে'। এই পত্রিকার বিরুদ্ধেই ব্রাজিল বিরোধী ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আছে।
গত ২ জুলাই ওলে তাদের ওয়েবসাইটে একটি ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে নেইমার এ পর্যন্ত যত শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছেন, তা একসাথে দেখানো হয়েছে।
"হ্যাঁ, নেইমার অনেক সময় বাড়িয়ে দেখায় এবং তার নাটুকেপনা তার বিপক্ষেই যায়", বলছেন ডিয়েগো মাসিয়াস।
"কিন্তু সব দলই কিন্তু একটার পর একটা নেইমারের বিরুদ্ধে লেগে আছে। খেলার মাঠে তাকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, সারাক্ষণ তাড়া করা হচ্ছে।" - বিবিসি