৩৬ বছর পর 'আর্জেন্টিনা-কুফা' কাটালো ফ্রান্স
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ জুলাই ২০১৮, ১১:৫০, আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮, ১১:৫৭
সেই ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ থেকে ঘটে আসছে বিষযটি। কাকতালীয়ভাবে যে দলই আর্জেন্টিনাকে বিদায় করেছিল পরের ম্যাচেই তারা হেরে বাদ পড়েছে বিশ্বকাপ থেকে।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারানো জার্মানি এবার প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচে হেরে বিদায় নিয়েছে।
মনে হচ্ছিল অন্য আসরগুলোর মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনাকে ছিটকে ফেলা ফ্রান্স কোর্য়াটারেই আউট হয়ে যাবে উরুগুয়ের কাছে হেরে। কিন্তু ৩৬ বছরের ধারা এবার আর চলতে দেয়নি ফ্রান্স। তারা আর্জেন্টিনার মতোই আরেক ল্যাতিন দেশ উরুগুয়েকেও কোর্য়াটারে হারিয়ে চলে গেছে সেমিতে।
আরো পড়ুন : বিশ্বকাপে আরো অঘটন ঘটবে!
জাতীয় দলে তার স্ট্রাইকিং পার্টনার কাভানি ছিলেন না পাশে। ফলে ফ্রান্সের বিপক্ষে নিষ্প্রভ লুইস সুয়ারেজ। তার দলেরও বিদায় কোর্য়াটার ফাইনাল থেকে। এর আগে ছিটেক পড়েছিল আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগাল এবং স্পেন। সুয়ারেজ মিক্সড জোনে কথা বলার তিন ঘণ্টা পর বাদের খাতায় চলে যায় ব্রাজিলও। এই অঘটনের বিশ্বকাপে আরো অঘটন হতে পারে এমনটাই আকারে ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইলেন বার্সেলোনা তারকা সুয়ারেজ। তার বক্তব্য, আমি এবারের বিশ্বকাপে কাউকেই ফেবারিট ভাবছি না। অন্য রকম কিছু হতে পারে।
ফ্রান্সের কাছে হারের জন্য তিনি কাভানির অনুপস্থিতিকে দায়ী করলেন না। ‘তবে দুই দলের ফরোয়ার্ড লাইনই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তাছাড়া ফরাসিরা বেটারদল। আমাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স হওয়াতে ম্যাচটি আমাদের জন্য টাফ হয়েছে।’
সুয়ারেজ জানান, ‘প্রথম গোলের আগ পর্যন্ত সমান সমান লড়াই হয়েছিল। কিন্তু গোলই তফাৎ গড়ে দেয়। আর দ্বিতীয় গোলের পর সব শেষ।’
অবশ্য দ্বিতীয় গোলের জন্য কিপার মুসলেরাকে দায়ী করেননি তিনি। জানান, সে তো আগে অনেক ম্যাচেই আমাদের জিতিয়েছে।
আরো পড়ুন : বেলজিয়ান কৌশলই ব্রাজিলকে পরাজিত করেছে
বেলজিয়ান কোচ রবার্ট মার্টিনেজের অতুলনীয় কৌশলের ফলেই ব্রাজিল রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে। কাজান এরিনায় রেড ডেভিল কোচ রবার্ট মার্টিনেজ যে কৌশল নিয়েছিলেন সেটা বুঝতেই পারেনি পাঁচবারের বিশ্বকাপ শিরোপাজয়ী সেলেকাওরা। মার্টিনেজের এই অসাধারণ কৌশলের ওপর নির্ভর করেই বেলজিয়ান রেড ডেভিলসরা ব্রাজিলকে ২-১ গোলে পরাজিত করে শেষ আটেই তাদের স্বপ্নভঙ্গ করে দেয়। রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল শো পিসে বেলজিয়ামের স্পেনিশ কোচ রবার্ট মার্টিনেজের কার্যপদ্ধতিই তিতের ব্রাজিলকে অনেকটা হতবাক করে দিয়েছে এবং তাদের এই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছে। এই জয় বেলজিয়ামকে ৩২ বছর পর বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছে। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে সর্বশেষ তারা শেষ চারে খেলেছিল। খেলার কৌশলের পাশাপাশি মার্টিনেজ খেলোয়াড় নির্বাচন এবং তাদের পজিশন নির্ধারণে দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। রেড ডেভিলস কোচের এই কৌশলই ব্রাজিলকে প্রায় দারুণ চাপে ফেলে দিয়েছিল প্রথমার্ধেই। ফারনানদিনহোর আত্মঘাতী গোল এবং কেভিন ডি ব্রুইনা, যিনি সেলেকাওদের বিপক্ষে মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগে শিফট করে খেলছিল ফলস নাইন হিসেবে এবং মারাওনি ফেলানিকে যোগ্য সহায়তা করছিল। কোচ মার্টিনেজের কিছু কৌশল প্রথমার্ধে ব্রাজিলকে একেবারে আটকে রেখে দিয়েছিল যদিও খেলার শেষের দিকে রেনাটো অগাস্টোর গোলে সেলেকাওরা ব্যবধান কমিয়ে এনেছিল কিন্তু তারপরও মার্টিনেজের কৌশল বেশ কাজ করেছে।
ব্রাজিল বনাম বেলজিয়ামের কোয়ার্টার ফাইনালটি আসলেই একটি রোমাঞ্চ, শিহরন ও উত্তেজনা জাগানিয়া ম্যাচ ছিল। ব্রাজিল আক্রমণ করেছে বেশি। বেলজিয়ামও করেছে কিন্তু পরিকল্পিতভাবে এবং তার ফলে শেষ হাসিটা তারাই হেসেছে। মার্টিনেজ আগে কিছুটা আভাস দিলেও ম্যাচের দিন যে কৌশল নিয়েছিলেন তা একেবারেই আগে থেকে ভাবতে পারেনি তিতের ব্রাজিল। যিনি অনেকটাই গতানুগুতিকভাবে দলকে খেলিয়েছেন সাধারণত ব্রাজিলিয়ানরা যেভাবে খেলে। মার্টিনেজ লুকাকু ও হ্যাজার্ডকে দুই প্রান্তে খেলিয়েছেন তাদের মাঝে দূরত্ব রেখে এবং ডি ব্রুইনা অনেকটা জায়গা বদল করে ওপরে উঠে খেলেছেন তাদের সাহায্য করার জন্য। অনেক সময় ডি ব্রুইনা এই দুইজনের মাঝখানেও খেলেছেন। এই কৌশল বা কার্যপদ্ধতির বদলিই ব্রাজিলকে একেবারে হতবাক করে দিয়েছে। তারা কোনোমতেই এর সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি এবং কোয়ার্টার ফাইনালেই তাদের রাশিয়া বিশ্বকাপের অভিযান শেষ করেছে।
নেইমারের ব্রাজিল প্রথমার্ধে কিছুটা অস্থির ছিল কিন্তু তারা আক্রমণ করেছে। কিন্তু ফার্স্ট হাফেই বেলজিয়াম দুই গোলের লিড নিয়ে নেয়। দ্বিতীয়ার্ধে সেলেকাওরা বেশ আক্রমণাত্মক ছিল কিন্তু ততক্ষণে বেলজিয়ানদের কাজ ছিল নিজেদের লিড ধরে রেখে প্রতি আক্রমণ করা। রোমেলো লুকাকুকে রাইট উইংয়ে খেলানো মার্টিনেজের একটি মাস্টার স্ট্রোক ছিল। যেটা এভারটনের কোচ থাকা অবস্থায় মার্টিনেজ বেলজিয়ান স্টার প্লেয়ার লুকাকু দিয়ে করিয়েছেন অনেক সময়। এজন্যই ব্রাজিলিয়ান রক্ষণভাগের ফুটবলার মিরান্ডা তার স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছিল না।
লাইনের কাছাকাছি খেলার ফলে তাকে মার্ক করা বেশ কষ্ট ছিল ব্রাজিলিয়ান রক্ষণভাগের জন্য এবং এই সুযোগে ডি ব্রুইনা মাঠে অনেক জায়গা পেয়েছে এবং বেলজিয়ামের দ্বিতীয় গোলটিও এই কৌশলের ফসল। ব্রাজিল অবশ্য অনেক সুযোগ পেয়েছে এই ম্যাচে কিন্তু এদিন তাদের মনে হয় নেইমারের চেয়ে রোনালদো নাজারিওকে বেশি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে অবসর নিয়েছে অনেক আগেই। ডগলাস কস্তার একটি পাস থেকে খেলার শেষ মুহূর্তে কুতিনহোর কোনাকুনি শট এবং নেইমারে একটি শট শুধু বেলজিয়াম গোলরক্ষক কুটিয়ারেসের দক্ষতায় সেভ হয়েছে। শেষে বলতে হয় ভাগ্য ব্রাজিলের দিকে তাকিয়ে হাসেনি এবং বেলজিয়ান কোচের কৌশলের কাছেই তারা পরাজিত হয়েছে।