১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নেইমার পাকা অভিনেতা নাকি ফাউলের শিকার?

বিশ্বকাপ, নেইমার, ব্রাজিল,
ইউরোপীয় গণমাধ্যমের বিচারে, নেইমার হচ্ছেন আসলে পাকা অভিনেতা - সংগৃহীত

ব্রাজিলের সুপারস্টার নেইমারকে নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে বিতর্ক কম হয়নি। প্রতিদিনই নানা কারণে সংবাদ হয়েছেন তিনি। কিন্তু ইউরোপীয় গণমাধ্যমের বিচারে, নেইমার হচ্ছেন আসলে পাকা অভিনেতা, খেলার মাঠে পড়ে গিয়ে মারাত্মক চোট পাওয়ার অভিনয়ে তার জুড়ি মেলা নাকি ভার। ব্রাজিল এখন ছিটকে পড়েছে বিশ্বকাপ থেকে। কিন্তু তাই বলে নেইমারকে নিয়ে আলোচনা থেমে নেই।

ইন্টারনেটে তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শেষ নেই। এরকম একটি বিদ্রুপাত্মক পোস্ট এক কথিত ফুটবল স্কুল নিয়ে, যেখানে নাকি ছেলেদের ডাইভ দিয়ে পড়ে গিয়ে কিভাবে চিৎকার করতে হবে তার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়!

ফ্রান্সের খেলোয়াড় এবং অভিনেতা এরিক ক্যানটোনা ইউরোস্পোর্ট চ্যানেলের বিশেষজ্ঞ কর্ণারে এরকম কিছু বিদ্রুপাত্মক ভিডিও আপলোড করেছেন। এরকম একটি ভিডিওতে তিনি নেইমারকে তুলনা করেছেন 'চার চাকা লাগানো স্যুটকেসের সাথে, যেটি সহজে এই চাকার ওপর ঘুরতে পারে।

অন্যদিকে মারাডোনার মতো কিংবদন্তী নেইমারের সমালোচনা করেছেন যেভাবে অন্য কোনো খেলোয়াড়ের ছোঁয়া লাগা মাত্র নেইমার যেভাবে ব্যাথা পাওয়ার অভিনয় করেছেন।

তবে মনে রাখতে হবে নেইমার হচ্ছে ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ব্রাজিলের জন্য টুর্নামেন্টে তিনি দুটি গোল দিয়েছেন। ২৭ গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এবং ১৩ বার গোল মুখে শট নিয়েছেন।

তার পরিসংখ্যানের দিকে যদি মনোযোগ দেয়া যায়, তাহলে কথিত নাটুকেপনার বাইরে আরো অনেক মিশ্র চিত্রই কিন্তু আপনি দেখতে পাবেন।

সুইস টিভি চ্যানেল আরটিএস স্পোর্টস সম্প্রতি একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। এতে তারা দাবি করছে, নেইমার এবারের টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের চারটি ম্যাচে নাকি মোট ১৩ মিনিটি ৫০ সেকেন্ড মাটিতে বসে কাটিয়েছে। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম ম্যাচটিও রয়েছে।

এই পরিসংখ্যান এরপর আরো অনেক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। শেয়ার করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার?

তবে আরেকটি তথ্য হজম করার জন্য এক মিনিট সময় নেয়া যাক। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে নেইমারের বিরুদ্ধেই কিন্তু এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ফাউল হয়েছে! মোট ২৬ বার!

লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চাইতে অনেক বেশি। মেসির বিরুদ্ধে ফাউল হয়েছে ১৫ বার, আর রোনালদোর বিরুদ্ধে ১৪ বার।

পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ফাইভ থার্টি এইট ডট কম দাবি করছে, গত তিনটি বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে আসলে খেলার মাঠে নেইমারকেই সবচেয়ে বেশি তাড়া করা হয়েছে।

প্রতি খেলায় গড়ে তার বিরুদ্ধে ফাউল হয়েছে পাঁচ দশমিক দুই। অথচ নেইমার এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ খেলেছেন। রোনালদো আর মেসি বিশ্বকাপ খেলেছেন চারবার করে।

এর আগেরবার ব্রাজিল বিশ্বকাপে নেইমারের বিরুদ্ধে ফাউল হয়েছিল ১৮ বার। মেসির বিরুদ্ধেও একই সংখ্যায়।

তবে মেসি গেল বিশ্বকাপে খেলেছিলেন সাতটি ম্যাচ। আর নেইমার পঞ্চম ম্যাচেই এমন গুরুতর আঘাত পান যে, মাটিতে পড়ে যান। তার পিঠে আঘাত লেগেছিল কলম্বিয়ার যুনিগার হাঁটুর গুঁতো লেগে।

মেরুদন্ডের একটি হাড়ে সাঙ্ঘাতিক আঘাত পান, তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। এটি তার খেলোয়াড় জীবনের সমাপ্তি টেনে দিতে পারতো।

খেলার মাঠে কী ঘটে তা দেখা এবং এর মানে বোঝার নানা উপায় আছে। আমি নিজে বার বার সহিংস ফাউলের শিকার হয়েছি আমার খেলোয়াড় জীবনে, বলছেন সাবেক বর্ষসেরা বিশ্ব ফুটবলার এবং বিশ্বকাপ জয়ী তারকা রোনাল্ডো। তার মতে, 'যারা তার ওপর লাথি মারছে তাদের হাত থেকে নেইমার নিজেকে রক্ষা করছেন মাত্র।' আর রেফারিরাও এখানে নেইমারকে রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

নেইমারের পক্ষে সবচেয়ে জোরালোভাবে দাঁড়িয়েছে তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি আর্জেন্টিনার একটি সংবাদপত্র 'ওলে'। এই পত্রিকার বিরুদ্ধেই ব্রাজিল বিরোধী ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আছে।

গত ২ জুলাই ওলে তাদের ওয়েবসাইটে একটি ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে নেইমার এ পর্যন্ত যত শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছেন, তা একসাথে দেখানো হয়েছে।

"হ্যাঁ, নেইমার অনেক সময় বাড়িয়ে দেখায় এবং তার নাটুকেপনা তার বিপক্ষেই যায়", বলছেন ডিয়েগো মাসিয়াস।

"কিন্তু সব দলই কিন্তু একটার পর একটা নেইমারের বিরুদ্ধে লেগে আছে। খেলার মাঠে তাকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, সারাক্ষণ তাড়া করা হচ্ছে।" - বিবিসি

 

আরো পড়ুন : নেইমারের সাথে সমর্থকদের এমন আচরণ!

শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে গ্যালারিতে বেলজিয়ামের দর্শকদের উচ্ছাস, মাঠেও লুকাকু, হ্যাজার্ডদের বাধভাঙা আনন্দ। মাঠের মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন নেইমার। বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার ভিনসেন্ট কোম্পানি এগিয়ে এসে নেইমারকে হাত ধরে টেনে তোলেন। বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। এটি স্পোর্টম্যানশিপ; কিন্তু ব্রাজিলের সমর্থকরা নেইমার জুনিয়রের প্রতি এতটুকু ভদ্রতা দেখানোর ধার ধারেননি। তারা রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন এই সুপারস্টারকে।

মাঠে আচরণ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও প্রতিটি ম্যাচে নেইমারের পারফরম্যান্স ছিলো অসাধারণ। শেষ ম্যাচেও বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে তার খেলা সবাইকে মুগ্ধ করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্য ব্রাজিলের দারুণ খেলেও গোল পায়নি দলটি। বেলজিয়ামের ডিফেন্স ও গোলরক্ষকের দৃঢ়তাও ছিলো ব্রাজিলকে খালি হাতে বিদায় করার বড় একটি কারণ। বারবার ব্রাজিলের আক্রমণ ব্যর্থ করে দিয়ে বেলজিয়ামের ডিফেন্ডাররা। গোলে যেসব শট হয়েছে সেগুলোকে বিপদমুক্ত করেছেন গোলরক্ষক। কিন্তু ব্রাজিলের আবেগী সমর্থকদের সেসব চিন্তা করার সময় কোথায়। তারা নেইমারকে রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এরই মধ্যে হিসাব বের হয়ে গেছে, নেইমার এবার রাশিয়ায় সর্বমোট ১৪ মিনিট মাটিতে শুয়ে কাটিয়েছেন। তার বাড়ি ফেরা নিয়েও হচ্ছে 
নানা ট্রল। ‘ট্রু সকার লাইফ’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেইমারকে ব্যঙ্গ করে অনেকগুলো ভিডিও ও জিআইএফ পোস্ট করেছন।

তার একটিতে দেখা যায়- নেইমার তার এক সতীর্থের সাথে হাত মিলিয়েই পরক্ষণে লুটিয়ে পড়েন ভূয়া ব্যথায়। ‘অ্যালেক্স বেনিতো ১৯৯১’ নামের টুইটার ব্যবহারকারী একটি জিআইএফ পোস্ট করেছন যেটি মূলত নেইমারের দেশে আগমন উপলক্ষে করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, এয়ারপোর্টে গড়িয়ে গড়িয়ে দেশে ঢুকছেন নেইমার। ক্যাপশনে লেখা- ব্রাজিল ও নেইমার দেশে আসছেন।

ইনসোনিয়া কারভাও নামের এক টুইটার ব্যবহারকারী একটি ছবি পোস্ট করেছেন যাতে দেখা যাচ্ছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যে গড়াগড়ি 
খাচ্ছেন নেইমার। ছবির সাথে লেখা ‘দারুণ ছুটি কাটুক নেইমার। ঠাণ্ডার পানি থেকে সাবধানে থেকো’। আন্দ্রে ওউয়োর নামের একজন ফুটবল সমর্থক নেইমারের লুটিয়ে পড়ার চারটি ছবি একসাথে পোস্ট করে লিখেছেন ‘নেইমারের বিশ্বকাপের সারসংক্ষেপ’।

আরেকজন তার গড়াগড়ি খাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন এভাবেই গড়িয়ে বিশ্বকাপ থেকে বেড়িয়ে গেলেন তিনি। আরেকজন এই ছবির নিচে লিখেছেন, নেইমার গড়িয়ে দেশে ফিরছেন।


আরো সংবাদ



premium cement