১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফাইনালে খেলবে কারা?

বিশ্বকাপ
সেমিফাইনালে উঠেছে চার দল ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড আর ক্রোয়েশিয়া - সংগৃহীত

বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার দ্বারপ্রান্তে এখন চারটি দেশ- ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড আর ক্রোয়েশিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়েকে হারিয়ে ফ্রান্স, ব্রাজিলকে হারিয়ে বেলজিয়াম, সুইডেনকে হারিয়ে ইংল্যান্ড আর স্বাগতিক রাশিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া।

অথচ এর আগে বিশ্বকাপের মাঠে সুইডেনকে কখনোই হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। সেই ইতিহাসকে পাল্টে দিয়ে এবার ২-০ গোলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

এভাবে দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে উঠলো তারা। এদিকে রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়ার অপর রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে গোল করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে গিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

ফলে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে যায় ক্রোয়েশিয়া। এ অবস্থায় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া। অন্যদিকে বেলজিয়াম খেলবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। কারা উঠতে পারে এবারের ফাইনালে?।

বাংলাদেশের সাবেক ফুটবল কোচ ডালিয়া আক্তার বলছেন, ইংল্যান্ড অঙ্ক কষেই বেলজিয়ামের সাথে খেলেছিল যাতে করে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেতে পরে এবং সেটাই হয়েছে।

"না হলে কোয়ার্টারের ফাইনালে সুইডেনের বদলে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলতে হতো। এখন তো সহজেই তারা সুইডেনকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেলো।"

তবে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ নিয়ে অনুমান করা কঠিন কারণ দুটো দলই চমৎকার খেলেছে।

"সেমিফাইনালে ডু অর ডাই অবস্থা হয়। তাই বলা যাচ্ছে না যে ইংল্যান্ড বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে কি-না।

ডালিয়া আক্তার বলেন, দুটি দলেই তারকা আছে ও ভালো ফিনিশার ও মিডফিল্ড আছে।

"ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপারকে একটু হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে মনে হলো এবং এটা ঠিক না হলে ক্রোয়েশিয়াকে সেমিতে ভুগতে হতে পারে।"

ডালিয়া আক্তারের মতে, বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের খেলাটিও দারুণ জমজমাট হবে কারণ দুই দলের কোচই তাদের সেরা কৌশল দিয়েই দলকে মাঠে পাঠাবেন।

সে কারণে সেমিফাইনালটি নব্বই মিনিটে শেষ নাও হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

"এ ম্যাচটায় দু দলের জন্য ফিফটি ফিফটি চান্স থাকবে। খেলা ট্রাইবেকারে গড়ালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।"

 

আরো পড়ুন : অবকাঠামোগত কারণেই পিছিয়ে দক্ষিণ আমেরিকানরা

রফিকুল হায়দার ফরহাদ রাশিয়া থেকে

এ নিয়ে টানা চার বিশ্বকাপের তিনটিতেই অল ইউরোপিয়ান ফাইনাল হতে যাচ্ছে। ২০০২ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ফাইনালের লড়াই হতো লাতিন ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে। এখন সেখানে ইউরোপিয়ান রাজত্ব। দক্ষিণ আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে ট্রফি জয়ের লড়াইটা করতো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাই। এর পরই অবস্থান উরুগুয়ের। এখন এদের ফুটবলে ভাটার টান। বিপরীতে জোয়ার বইছে ইউরোপের ফুটবলে। ফলে ২০০৬, ২০১০ এর মতো এবারো ফাইনালে থাকছেন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার কেউ। ফাইনাল তো দূরের কথা এবার মেসি, নেইমারদের দল তো সেমির টিকিটই পায়নি। তাদের একজনকে দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষেই বাড়ি ফেরার টিকিট ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকজন দেশে ফেরার বিমানে উঠছে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ শেষে। গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলা উরুগুয়েকে নিযে কিছুটা আশা জেগেছিল। কিন্তু তাদেরও বিদায় কোয়ার্টার থেকে। প্রত্যেকেরই ছিটকে পড়াটা ইউরোপিয়ান দেশের কাছে হেরে। এক ফ্রান্সই রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য করেছে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েকে। ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছে বেলজিয়াম। কেন ল্যাতিন দেশগুলোর এ অবস্থা? কেন তারা পেরে উঠতে পারছে না ইউরোপিয়ানদের সাথে? উরুগুয়ের বর্ষীয়ান কোচ অস্কার তাবারেজের কারণও ব্যাখ্যা করলেন। তার মতে, অবকাঠামো গত কারণেই ফুটবলে এগিয়ে গেছে ইউরোপের দেশগুলো। আর এতে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে সাউথ আমেরিকানরা।

২০০২ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা উরুগুয়ে ছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে। ২০০৬ থেকে ফের শুরু হয় ইউরোপিয়ান দাপট। ২০১৪ আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠে সে ধারায় ছেদ টানে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ফাইনালে তাদের যথারীতি হার জার্মানির কাছে। ১৯৯৮ সালের ফাইনালে ব্রাজিলকে পরাজিত করেছিল ফ্রান্স। এরপর ২০০২ ছাড়া প্রায় প্রতিবারই ল্যাতিন দেশগুলোর ফাইনলে খেলার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে ইউরোপিয়ানদের কাছে হেরে। কখনো জার্মানি, কখনো ফ্রান্স, কখনো নেদারল্যান্ডস এবার সর্বশেষ সংস্করণ বেলজিয়াম ইতি ঘটাল তাদের। তাবারেজের মতে, ইউরোপের অবকাঠামো অনেক উন্নত। মাঠেও তারা বেটার খেলছে। ফলস্বরূপ এবারো হতে যাচ্ছে অল ইউরোপিয়ান ফাইনাল। ফ্রান্সের কাছে হারের পর নিজনি নবগরদ স্টেডিয়ামে এ কথা বলেন তিনি।

মূলত দারিদ্র্যই সমস্যা ল্যাতিন ফুটবলের। তাদের মানসম্পন্ন সব খেলোয়াড়ই চলে আসে ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলতে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মতো ফুটবল অ্যাকাডেমি নেই আটলান্টিকের পশ্চিম এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব পাড়ে। সাথে যোগ হয়েছে সংশ্লিষ্ট কিছু দেশের ফুটবল কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা। তাই প্রতিভাশূন্য হয়ে যাচ্ছে ল্যাতিন ফুটবল। এই স্থান দখল করছে অন্য অঞ্চলের খেলোয়াড়েরা। আর্জেন্টিনার সাংবাদিকদের দুশ্চিন্তা, মেসি অবসরে গেলে কে তাদের জাতীয় দলকে টেনে নিয়ে যাবে। একসময় নতুন ম্যারাডোনদের হিড়িক লেগে যেত আর্জেন্টিনার ফুটবলে। এখন কেউ নতুন ম্যারাডোনার উপাধি পাচ্ছেন না। একই অবস্থা ব্রাজিলেও। নতুন পেলের সম্মান আর কারো কপালে জুটছে না। মেসি, নেইমারের পর কে হাল ধরবে এই দুই ল্যাতিন ফুটবল শক্তির?

ফুটবলে প্রচুর অর্থ বিনিযোগ হচ্ছে ইউরোপে। তাদের ফুটবলাররা মোটামুটি একই ক্লাব বা একই লিগে খেলে। ফলে তারা পরস্পর সম্পর্কে অবগত। কিন্তু ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা অথবা উরুগুয়ে বা কলম্বিয়া তাদের ফুটবলারদের অবস্থান বিশ্বের নানা দেশের লিগে। কেউ ইংল্যান্ডে, কেউ স্পেনে, কেউ ফ্রান্স বা ইতালিতে খেলছেন। কেউ কেউ চলে গেছেন চীন-জাপানের লিগে। এতে জাতীয় দলে এদের মধ্যে বোঝাপড়ার সমস্যাও হচ্ছে।

এ দিকে মেক্সিকোর হয়ে এবার পাঁচ বিশ্বকাপে খেলা রাফায়েল মাকুয়েজের মতে, ফুটবলে মেক্সিকোকে এগোতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দিতে হবে। কনকাকাফ অঞ্চলের এসব ফুটবলারের আরো বেশি বেশি ইউরোপের লিগে খেলতে হবে। আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর ফুটবলে এগোতে অবকাঠামোই কথা বলেছিলেন আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়ক রবার্তো আয়ালা।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement