আত্মঘাতি গোল ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ সংকটের প্রতিচ্ছবি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ জুলাই ২০১৮, ২২:৩৫, আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮, ০৯:৩৯
রিও ডি জেনেরির রাস্তায় অসংখ্য ব্রাজিলিয়ানের ঢল। ম্যাচ শুরুর ২ ঘন্টা আগেই টাইটুম্বুর জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনের খোলা মাঠ। সবার প্রত্যাশায় বেলজিয়ামের বিপক্ষে পূরনো ভুলের পুনরাবুত্তির পথে পা বাড়াবে না সেলেকাও খ্যাত ব্রাজিল। উৎসবের নীরব প্রস্তুতিও শেষ। ৫ বারের চ্যাম্পিয়নদের দুর্দান্ত সূচনায় উচ্ছাসিত ভক্তদের হৃদয়ে রক্তক্ষরনের সূচনা ফার্নানদিনহোর আত্মঘাতি গোলে। বিরতির আগেই বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে এলিট দলটিকে সেমির রেস থেকে ছিটকে দেয় বেলজীয় প্লে-মেকার কেভিন ডিব্রইনের মুর্হুতের ম্যাজিক। তার গোলে পরই পিনপতন নীরবতা উমুক্ত মাঠের বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে লাখো ব্রাজিলিয়ানের উপস্থিতির পরও। নির্বাক নয়নে একে অপরের দিকে তাকিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা অতীতেরই পূনরাবৃত্তি?
বিশ্বকাপ জয় ব্রাজিলিয়ানদের অন্যতম প্রচীন আকাঙ্খার একটি। কিন্তু বর্তমানে দ্বিধ্বা বিভাক্তিত রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার নিমজ্জ্বিত ব্রাজিল। বিগত দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার জেল জীবন ও উগ্র ডানপন্থীদের আসন্ন অক্টোবরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রেসে নেতৃত্ব দেশটিতে চলমান সংকট জয়োৎসবে মোটেও অনুপ্রানিত করতে পারেনি সেলেকাও ফুটবলারদের। উল্টো আত্মঘাতি গোলে পিছিয়ে পড়ার ঘটনা ব্রাজিলের বহুমুখী সমস্যাগুলোর একটি হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়েছে বলে দাবী করেছেন রিও ডি জেনেরি স্টেট ইউনিভার্সিটির আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগের অধ্যাপক মাউরিসিও সানতোরো। নিজের ফেসবুক পেজের দেয়া পোস্টে তিনি বলেন,‘ আত্মঘাতি গোল হজমের প্রক্রিয়ায় বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ব্রাজিলের অভ্যন্তরীন সংকটের প্রতিচ্ছবি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীন অধ্যাপক সানতোতোর বিশ্লেষনের সাথে রিও ডি জেনিরির খোলা মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে সামনে দাড়িয়ে খেলা উপভোগ করা মার্কোস কলদোলিনোর অভিমতের সাথে স্পস্ট মিল রয়েছে। রাস্ট্রের কর্মচারি মার্কোস বলেন,‘ খুবই খারাপ লাগছে। সামার্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেনি ব্রাজিল। তারকাদের প্রত্যেকে ব্যর্থ।’
শুক্রবার রাশান বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ছিকটে গেছে ব্রাজিল। ২০১৮ সালের হট ফেবারিটদের ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাসের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের উৎসবে বেলজিয়াম। চার বছর আগে হোম ভেনুর শেষ চারে ব্রাজিল ৭-১ গোলে জার্মানির বিধ্বস্ত হয়। দু:স্বপ্নের ওই হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠায় রাশান মেগা আসরের সাফল্যে মুখিয়ে ছিল সেকেকাও ভক্তরা। বাছাইপর্বের দুর্দান্ত নৈপূন্যের পর দলটি মুল টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি চমৎকার ফর্ম অটুট রেখে সর্ম্পন্ন করেছে। সুইসদের বিপক্ষে ড্র’দে আশাহত ভক্তদের মধ্যে নতুন প্রানের সঞ্চার হয় টানা তিনম্যাচের জয়ে দলটির কোয়ার্টার ফাইনালের অংশগ্রহন নিশ্চিত হলে। কিন্তু এবার সেমির আগেই বিদায় লাতিন জায়ান্টদের। ২০১৪ সালের জার্মান লজ্বার ম্যাচটিও রিও ডি জেনেরির বেনজামিন কনস্টান স্ট্রিটের জায়ান্ট স্কিনের সামনে দাড়িয়ে উপভোগ করেন অসংখ্য ব্রাজিলিলিয়ান। তবে এবার শুরু থেকেই এক ধরনের শূনত্যার উপস্থিতি ভক্তদের আনাগোনায়। বেলজিয়াম বিপক্ষে ম্যাচটির ভক্ত উপস্থিতি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে চার বছর আগের ব্রাজিল-জার্মানি লড়াইয়ের তুলনায়।
মূলত: রাশিয়ার কাজান অ্যারিনায় ব্রাজিল-বেলজিয়াম হাইভোল্টেজ দ্বৈরর্থের সূচনার প্রস্তুতির সূচনাতেই আজানা শঙ্কার শিহরনে রিও ডি জেনিরির জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে উপস্থিত লাখো ব্রাজিলিয়ান। দেশটির জাতীয় সংগীত শুরু না হতেই গোলোযোগ জায়ান্ট স্ক্রিনে। মেরামতের সর্বাত্মক চেস্টা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধের আগে বিশাল স্ক্রিনে খেলা দেখার সৌভাগ্যবঞ্চিত ফুটবল পাগল ব্রাজিলিয়ানরা। এ সময় সেলেকাও তারকারা সর্বাত্মক চেস্টা করেন খেলায় প্রত্যাবর্তনের। কিন্তু সাফল্য পান নি। রেফারির শেষ বাজি আওয়াজ কানে পৌছাতেই যন্ত্রনাকাতর ভক্তদের নীরব প্রস্থান
নিজ-নিজ গৃহের উদ্দেশ্যে। রাস্থার পাশ্ববর্তী বাসবভনগুলোর মধ্যে থেকে ভেসে উচ্ছস্বরের মিউজিক। পথযাত্রী চার মহিলা নিজেদের মধ্যে ফুটবল নিয়ে আলাপে মেতে উঠেছেন। ৪২ বছর বয়সী কিচেন অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসেদে বলেন,‘ চলমান বিশ্বকাপ জয় ব্রাজিলের জন্য শ্রেষ্ঠতম লজ্বারও হতে পারব। কারন গত বিশ্বকাপ ধ্বংস করেছে রাস্ট্র ব্রাজিলকে।’