ডলফিনের ভবিষ্যদ্বাণী কি আজ সত্য হবে?
- রফিুকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ০৭ জুলাই ২০১৮, ১২:৫৩, আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮, ১২:৫৮
২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অক্টোপাস পলের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা সবারই জানা। যে দলের পাতাকা লাগানো পাত্র থেকে সে খাবার খেত সে দলই জিততো বিশ্বকাপের ম্যাচে। সেই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, সার্বিয়া, ঘানা, স্পেন, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ের বিপক্ষে জার্মানির ম্যাচের ফলাফলের আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল পল। এর মধ্যে একমাত্র স্পেনের কাছেই হার চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। স্প্যানিশদের কাছে জার্মানরা হারবে এটা আগেই ইঙ্গিত ছিল পলের। অবশ্য জার্মানি-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ এবং ফাইনালে স্পেন এবং নেদারল্যান্ডস ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়নি এই প্রাণীটির। এবার সেই পলের মতো ভবিষ্যদ্বাণী করলো দুই রাশিয়ান ডলফিন। এই দুই জলজ প্রাণীর আগাম ইঙ্গিত যদি সত্য হয় তাহলে আজ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-১ জয়ের কথা ২১তম বিশ্বকাপের স্বগতিকদের। সচিতে আজ সেমিতে যাওয়ার লড়াই এই দুই দলের।
রাশিয়ার শহর ইউরোস্লাভালে দুই ডলফিনের মধ্যে ক্রোয়েশিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা রঙের বল নিয়ে রেসের প্রতিযোগিতা হয়েছিল । মিতাইয়া এবং সোলন্সাকোর মধ্যে হওয়া এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় মিতাইয়া। যার কাছে ছিল রুশ পাতাকার রঙের বল। চারবারের এই রেসে ৩-১ জয়ী হয় মিতইয়া। অবশ্য এই সব প্রাণীকূলের সব আগাম ইঙ্গিত সত্য হয় না।
সামারার সাদা ছাগল জাবিভাকা, সেন্ট পিটার্সবার্গের বিড়াল আচিলেস, ইকেতেরিনবার্গের লেমুর, কালিনিনগ্রাডের গন্ডার এবং নিজনি নবগরডের টাপিড় এদের সবার ভবিষ্যত বানীই মিথ্যা হয়েছিল। এদের ইঙ্গিত ছিল রাশিয়ার বিপক্ষে জয পাবে স্পেন। আথচ দ্বিতীয় রাউন্ডের এই ম্যাচে ২০১০ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় রাশিয়ার। যা তাদের ১৯৭০ সালের পর নিয়ে যায় বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। দুই ডলফিনের আগামবার্তা সত্য হলে ১৯৬৬ সালের পর ফের বিশ্বকাপের সেমিতে খেলা হবে রাশিয়ার। ৬৬ এর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিতে যাওয়াটাই তাদের বিশ্বকাপ ফুটবলে এই যাবৎকালের সেরা অর্জন।
স্পেনের তুলনায় অনেক দুর্বল দল রাশিয়া। এরপরও তাদের টাইব্রেকারে হারানো এবং গ্রুপ পর্বে সৌদি আরব, মিসরকে হারিয়ে রুশদের এই পর্যন্ত আসার নেপথ্য সমর্থকদের আকুণ্ঠ সমর্থন, খেলোয়াড়দের ঐকান্তিকতা, অনেক যাছাই-বাছাইয়ের পর দল গঠন, খেলোযাড়দের অসাধারণ ফিটনেস, কোচের ট্যাকটিস ইত্যাদি।
অবশ্য দলের মিডফিল্ডার রোমান জবনিনের মতে, ‘আমাদের এই পর্যন্ত আসার পেছনে ৯৫ শতাংশ অবদান স্থানীয় দর্শকদের। তাদের প্রেরণাতেই এই পর্যন্ত আসা আমাদের। তারা প্রথম খেলা থেকেই আমাদের পাশে আছে। অন্যথায় এতো দূর আসা হতো না।’
স্ট্রাইকার আরতেম জুবার মতে, আমাদের লড়াকু মনোভাই শেষ আটে নিয়ে এসেছে। ভাগ্য সব সম সহায় থাকে না । তবে স্পেনের বিপক্ষে নিয়তি আমাদের দিকেই তাকিয়েছিল।
আরো পড়ুন : ক্রোয়েশিয়া স্মার্ট দল
দুই দলই দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে খেলার দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে। ১৯৬৬ সালের পর আর সেমিতে খেলা হয়নি রাশিয়ার। ৬৬তে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে তাদের অংশগ্রহণ। আর এখন তারা রাশিয়া। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে শেষ চারে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। এবার কোনো দলের ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়বে। সোচির স্টেডিয়ামে কোন দলের ফুটবলারদের মুখে ফুটবে বিজয়ের হাসি। সে উত্তরের অপেক্ষায়। তবে এই নিয়ে কোনো আগাম মন্তব্য করলেন না ডাচ কোচ গাস হিডিংস। এ ক্ষেত্রে তার সতর্ক অবস্থান। এবং উত্তরটা কূটনৈতিক। তবে আকারে ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইলেন আজ স্বাগতিকদের বিপক্ষে কিছুটা এগিয়ে বলকান অঞ্চলের দেশটি।
রাশিয়ার ফুটবলের সাথে এই গাস হিডিংসের নাড়ীর সম্পর্ক। পাঁচ বছর রাশিয়া জাতীয় দলের কোচ ছিলেন তিনি। এখন মস্কোতে অবস্থান করছেন। রাশিয়াকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি বলে উল্লেখও করলেন। কিন্তু গা ভাসালেন না আবেগে। বরং আজকের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচকে নিয়ে তার মন্তব্য, ফুটবলে যেকোনো রেজাল্টই হতে পারে। তবে আমার দৃষ্টিতে ক্রোয়েশিয়া স্মার্ট দল।
২০০২ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন গাস হিডিংস। যা এই এশিয়ান দেশটির সর্বোচ্চ বিশ্ব ফুটবলের সেরা এই আসরে। ২০০৬ সালে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ। সেবারই সকারুজরা প্রথমবারের মতো পৌঁছে নকআউট পর্বে। ২০০৮ সালের ইউরোতে রাশিয়া সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। তা এই দক্ষ কোচের কল্যাণে। সুতরাং রাশিয়া দল সম্পর্কে তার ভালোই জানা।
স্পেন, সৌদি আরব, মিসরকে হারিয়ে রুশরা এখন শেষ চারে উঠার লড়াইয়ে। এই সাফল্যের জন্য তিনি পুরো কৃতিত্ব দিলেন রাশিয়ান কোচ স্টানিসলভ চেরচেভকে। গাস হিডিংসের বক্তব্য, যখন দল সাফল্য পাবে তখন কোচও প্রশংসা পান। কিন্তু দল রেজাল্ট না পেলে সব সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন কোচ।
এখন সফল কোচের তালিকায় চেরচেভ। অথচ বিশ্বকাপের আগে সাত ম্যাচে জয়শূন্য থাকার ফলে কী সমালোচনাই না হয়েছিল এই কোচের।
গাস হিডিংস অবশ্য চেরচেভের প্রশংসা করেছেন স্পেনের বিপক্ষে জয়ের পর। জানান, ‘ম্যাচটি খুব আকর্ষণীয় ছিল না। রাশিয়াতো রক্ষণাত্মক খেলেই ১২০ মিনিট পার করেছে। এরপর টাইব্রেকারে স্বপ্নের জয়। ১২০ মিনিটে তারা রুখে দিয়েছে স্পেনকে। এর নেপথ্য তাদের পাঁচ ডিফেন্স এবং আস্থাশীল গোলরক্ষক। যা ভাঙতে পারেনি স্প্যানিশরা।’
কয়েকদিন আগে রাশিয়া দলের খেলোয়াড়দের সাথে দেখা করেছেন এই ডাচ কোচ। তার মতে, আমার কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হচ্ছে রেজাল্ট। এরপর যোগ করেন, গ্রুপে তাদের জয় সৌদি আবর এবং মিসরের বিপক্ষে। নকআউট পর্ব নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ০-৩ গোলে হেরেছে উরুগুয়ের কাছে।
স্পেন জয়ের পর রুশদের রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ করাটা ঠিক দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মান নাৎসিদের বিপক্ষে জয়ের মতোই। হিডিংসের মতে, ফুটবলে ধারাবাহিক সাফল্য পেতে কাজ করতে হবে যুব ফুটবল উন্নয়নে। তাহলে এক সময় বিশ্বকাপেও হাত ছোঁয়ানো যাবে।