ল্যাতিন বনাম ইউরোপ লড়াই
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৬ জুলাই ২০১৮, ১৪:১৪
কাকতালিয়ভাবে ফিকশ্চারটা এমনভাবে হয়েছে যে স্বাভাবিক নিয়মে এগোলে শিরোপা জন্য মুখোমুখি হবে ল্যাতিন আমেরিকা বনাম ইউরোপ। আজ কোয়ার্টারেও একই নিয়মে হবে খেলা। প্রথম ম্যাচে লড়বে ইউরোপের ফ্রান্স ও ল্যাতিনের উরুগুয়ে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে খেলবে ল্যাতিনের ব্রাজিল ও ইউরোপের বেলজিয়াম।
এমবাপ্পের ফ্রান্স যদি হারাতে পারে সুয়ারেজ ও কাভানির উরুগুয়েকে আর হ্যাজার্ডের উরুগুয়ে যদি হারাতে পারে ব্রাজিলকে, তাহলে তো অল ইউরোপ হবে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। তাহলে আরো একবার প্রমাণিত হবে ইউরোপে ল্যাতিন, আফ্রিকা, এশিয়ার কোনো ভাত নেই। আবার যদি নিজ নিজ খেলায় উরুগুয়ে ও ব্রাজিল জয়ী হয় তাহলে সেমিফাইনালে ঝরে যেতে হবে একটি দলকে। সেক্ষেত্রে শিরোপা নির্ধারণী খেলায় মেতে উঠবে ল্যাতিন বনাম ইউরোপ।
ফ্রান্স-উরুগুয়ে :
আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর সবার মাথাব্যথার কারণ এমবাপ্পে। এদিকে ওইদিন এডিসন কাভানি ইনজুরিতে পড়ে রোনালদোর কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়েন। গতকাল অনুশীলনও করেননি। শুধু জিম করেছেন। প্রাকটিসে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন সুয়ারেজও। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে এমন ছোটখাটো ইনজুরি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কোচ থাকেন শঙ্কায়। ৪-৪-২ পদ্ধতিতে খেলবে নাকি ৪-২-৩-১ পদ্ধতিতে খেলবে সেটি নির্ভর করছে একাদশের ওপর। নতুন পরিকল্পনা সাজাতে কোচরা সবসময়ই পারদর্শী। তবে বাস্তবায়নে একটু সময় তো দরকার। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে এবং শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরিকল্পনাগুলো হিতে বিপরীত হবে পারে। তাই উভয় দলের কোচরা চাইবেন তাদের সেরা একাদশই মাঠে নামাতে। ফ্রান্স যদি তাদের ছন্দ ধরে রাখতে পারে। তাহলে উরুগুয়েকে হারিয়ে সেমিতে যাবে মিশেল প্লাতিনি ও জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরিরা। আর যদি কাভানি ও সুয়ারেজ ছন্দ দেখাতে পারে তাহলে শেষ হাসি হাসতেও পারে দিয়েগো ফোরল্যানের উত্তরসূরিরা।
ব্রাজিল-বেলজিয়াম :
বর্তমান ব্রাজিলের একটাই অস্ত্র। সেটি হলো ম্যাচ উইনিং প্লেয়ার। মাঠের সব পজিশনের প্লেয়ারদের গোল করার ক্ষমতা রয়েছে। মিডিয়া যতই নেইমারকে নিয়ে কথা বলুক না কেন তার মাঠে থাকা মানে প্রতিপক্ষের আলাদা দৃষ্টি। আর এই ফাঁকেই ক্যারিশমা দেখাচ্ছেন তার সতীর্থরা। এমনো হয়েছে প্রতিপক্ষ মনে করেছে নেইমারকে দিয়েই ফিনিশিং টাচ করাবে ব্রাজিল। কিন্তু না তাকে বল না দিয়ে দিয়েছে অন্যজনকে। যে কারণে গ্যাপ হয়েছে, আর এই গ্যাপেই দিক পরিবর্তন হয়ে গেছে। গ্রুপ পর্বের মানসিকতা আর কোয়ার্টারের মানসিকতা কখনোই এক নয়। ব্রাজিলের বড় তারকা জেসুস এখনো গোল পাননি। তিনি প্রেসারে রয়েছেন। আজ হয়তো একটা কিছু করতে পারেন তিনি। বেলজিয়ামের হ্যাজার্ডকে আটকালে এবং কিছু মার্কিং করতে পারলে তাদের অর্ধেক খেলা শেষ। ব্রাজিল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী থাকলেও মিস হতে পারে তাদের হেক্সা মিশন। বিপরীতে ধরাশায়ী হতে পারে ল্যাতিন মিশনও।
আরো পড়ুন :
ছন্দ ও গতির লড়াই আজ
ফ্রান্স-উরুগুয়ে (রাত ৮টা, নিঝনি) ব্রাজিল-বেলজিয়াম (রাত ১২টা, কাজান)
ক্রীড়া প্রতিবেদক
আটটি দলের মাঝে দু’টি দলের স্বপ্ন শেষ হবে আজ। আগামীকাল হবে দু’টি দলের। চার বছর ধরে জিইয়ে রাখা স্বপ্ন বাস্তবায়নে দু’টি দল আজ এগিয়ে থাকবে শিরোপার দিকে। আগামীকাল আরো দু’টি দল উঠবে সেমিফাইনালে। কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম ম্যাচে স্বপ্ন ভাঙাগড়ার ম্যাচে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় নিঝনি নভগোরোদে মুখোমুখি হবে কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স ও সুয়ারেজ কাভানির উরুগুয়ে। রাত ১২টায় কাজানে লড়বে চির পরিচিত ছন্দের ব্রাজিল ও এবারের গতিময় দল বেলজিয়াম।
দুই হলুদ কার্ডের বদৌলতে আগেই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে চার খেলোয়াড়ের। এবার শঙ্কায় থাকবেন নেইমার, কুতিনহো, পল পগবার মতো তারকারা। গায়ের ওপর চেপে গেছে একটি করে হলুদ কার্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে আরেকটি হলুদ কার্ডই ভেঙে দিতে পারে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। তারকা হারানোর এ শঙ্কায় বেশি ভুগতে হচ্ছে হট ফেবারিট ব্রাজিলকে। তাদের নেইমার ও কুতিনহো ছাড়াও বেলজিয়ামের রয়েছেন কেভিন ডি ব্রুইন, টমাস মুনিয়ের ও ইয়ান ভারটোঙ্গোন। কোয়ার্টারের আরেক ফেবারিট ফ্রান্সেরও চারজন পেয়ে একটি করে হলুদ কার্ড। যাদের মধ্যে অন্যতম পল পগবা, বেঞ্জামিন পাভার্ড, অলিভার জিরু। শেষ আটে ফ্রান্সের প্রতিপ উরুগুয়ে দলে হলুদ কার্ড কেবল একজনের। তিনি হলেন রদ্রিগো বেনটাকুর।
ইংল্যান্ড দলে জর্ডান হেন্ডারসন, হেসে লিংগার্ড, কাইল ওয়াকারসহ চারজন পেয়েছেন হলুদ কার্ড। প্রতিপ সুইডেনে পেয়েছেন ভিক্টর কায়েসন ও আলবিন একদাল। সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে ক্রোয়েশিয়ার আট খেলোয়াড় আর রাশিয়ার পাঁচ খেলোয়াড়। মারিও মানজুকিচ, ইভান রাকিটিচ, আন্তে রেবিচ আর সিমে ভ্রাসালজকোর মধ্যে কেউ একজন ছিটকে পড়লে বিপদে পড়তে পারে ক্রোয়েশিয়া। রাশিয়াও চিন্তায় আছে বড় দুই তারকা আলেজান্ডার গলোভিন আর ইলিয়া কোতপোভকে নিয়ে।
কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আন্তোয়ান গ্রিজম্যানকে নিয়ে সাজানো ফ্রান্সের আক্রমণভাগ যেকোনো প্রতিপরে জন্য ‘ভয়ঙ্কর’। অন্য দিকে রয়েছে উরুগুয়ের কাভানি ও সুয়ারেজ। উভয়েই সেরা ষোলোয় নিজেদের প্রমাণ করেছে। এই চার তারকা উভয় দলের ডিফেন্ডারদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। মজার বিষয় হলো উভয় দলের কোচদ্বয় সেভাবেই পরিকল্পনা এঁটেছেন একে অপরকে রুখার জন্য। তবে একটু বেশি সতর্ক থাকতে চাইছে উরুগুয়ে। মিডফিল্ডার লুকাস তোরেইরা জানালেন, ফ্রান্সের তীব্র আক্রমণভাগকে মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে দু’বারের সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। চোট পাওয়ায় কাভানির খেলা নিয়ে একটু সংশয়ে আছে উরুগুয়ে।
আর্জেন্টিনার বিপে ৪-৩ গোলে শেষ ষোলোর ম্যাচ জয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ফ্রান্স। এমবাপ্পে করেছেন জোড়া গোল, গ্রিয়েজমান করেন প্রথম গোল। দু’জন মিলে এই বিশ্বকাপে করেছেন ৫ গোল। উরুগুয়ের নিশ্ছিদ্র রণভাগে ভাঙন ধরাতে তারাই ভরসা। তবে চার ম্যাচে মাত্র এক গোল খাওয়া উরুগুয়ে প্রস্তুত তাদের আটকে দিতে। এমবাপ্পের জন্য রণভাগে দিয়েগো গোডিন ও হোসে মারিয়া হিমেনেস নতুন হলেও গ্রিয়েজমানের কাব সতীর্থ তারা। অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদে খেলার সুবাদে একে অপরের পরিচিত। এখন শত্রু হলেও একে অপরের কৌশল সম্বন্ধে সম্যক ধারণা রয়েছে। তোরেইরার কথায়, ‘ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়াড় আছে, বিশেষ করে তাদের ফরোয়ার্ডরা খুবই দ্রুত ও বুদ্ধিমান। আমাদেরও রয়েছে সুয়ারেজ ও কাভানি। চেষ্টা থাকবে তাদেরও রক্ষণভাগ ভেঙে দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে।
দ্বিতীয় ম্যাচটিতে ব্রাজিল একটু নির্ভার মার্সেলোকে পেয়ে। গতদিন প্র্যাকটিসও করেছেন তিনি। দানিলো আগেই ফিট। প্র্যাকটিসে ব্রাজিল দলকে নির্ভার মনে হয়েছে সবার কাছে। হওয়ারই কথা। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলে কথা। এবার তাদের হেক্সা মিশন। সেভাবেই দলকে গুছিয়ে নিচ্ছেন কোচ তিতে। প্রতিটি বিভাগে সেরা খেলোয়াড় ফিট করেছেন। নেইমার নেইমার বলে গলা ফাটালেও একেক দিন একেকজন জ্বলে উঠছেন। এটিই ব্রাজিলের বড় পাওয়া। মেক্সিকোর বিপক্ষে উইলিয়ান যে খেলা খেললেন এমনটি হলে বেলজিয়াম পাত্তা পাওয়ার কথা নয়। তার পরও বিশ্বকাপ বলে কথা। বেলজিয়াম মাঠে পারফরম্যান্স দেখিয়েই এতদূর এসেছে। সেমির স্বপ্নে বিভোর লুকাকুরা সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। ইনজুরি সময়ে গোল করে দলকে জিতিয়ে নেয়ার রেকর্ড রয়েছে তাদের। দল হিসেবে সুসংগঠিত বেলজিয়ামে পিছলে যেতে পারে ব্রাজিল। তাই সতর্কতায়ই মাঠে নামবে দল দু’টি।