মেসিদের হারানোর অস্ত্রে শান দিচ্ছে ফ্রান্স
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জুলাই ২০১৮, ০৭:২২
ভলগা ও ওকা নদীর মিলনস্থলে সুসজ্জিত নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম। এই বিশ্বকাপের ভাবনা, নীল-সাদা। এক স্বেচ্ছাসেবকের ভাষায়, ‘নদী এবং আকাশের রং ধরা হয়েছে এই স্টেডিয়ামে।’
শুক্রবার এখানেই শেষ আটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ফ্রান্স ও উরুগুয়ে। প্রায় ৪৩ হাজার দর্শক আসন বিশিষ্ট এই স্টেডিয়াম যে কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃহস্পতিবার বিকেলেও স্টেডিয়াম চত্বরে ফ্রান্স ও উরুগুয়ের সমর্থকদের দেখা গেল। উভয় পক্ষেরই ধারণা, ম্যাক্সিম গোর্কির আতুঁরঘরে জিতে সেমি-ফাইনালে পৌঁছানো সহজ হবে না।
রাউন্ড অব সিক্সটিনে মেসির আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে নিঝনি নভগোরোদে খেলার টিকিট জোগাড় করেছে দিদিয়ের দেশঁ’র দল। পক্ষান্তরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগালের চ্যালেঞ্জ টপকেছে উরুগুয়ে। তবে শুক্রবারের ম্যাচে অবশ্যই কিছুটা এগিয়ে থেকে শুরু করবে ফ্রান্স। ছন্দে থাকা তারকা উরুগুয়ান স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানি কাফ মাসলে চোটের কারণে চূড়ান্ত অনিশ্চিত। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে বোরস্কি স্পোর্টস সেন্টারের মাঠে হালকা গা ঘামান তিনি। শুক্রবার সকালে টিম ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তাকে খেলানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কোচ। কাভানি খেলতে না পারলে অবশ্যই উরুগুয়ান আপফ্রন্ট নিঃসন্দেহে দুর্বল হয়ে পড়বে। পর্তুগালের বিরুদ্ধে তারই জোড়া গোল জিতিয়েছিল লাতিন আমেরিকান দলটিকে। শুক্রবার তার পরিবর্তে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানির। পক্ষান্তরে, কার্ড সমস্যার জন্য ফ্রান্স পাবে না ব্লেইস মাতৌদিকে।
শুক্রবারের ম্যাচের ভাগ্য অনেকাংশ নির্ভর করছে উরুগুয়ের দুই স্টপার ডিয়েগো গডিন ও হোসে মারিয়া গিমেনেজের ওপর। আতলেতিকো মাদ্রিদে একসঙ্গে খেলার সুবাদে এদের দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া দুর্দান্ত। ফ্রান্সের শক্তিশালী আপফ্রন্টকে নিষ্প্রভ করার জন্য দুই ডিপ ডিফেন্ডারের ওপর ভরসা রাখছেন অভিজ্ঞ কোচ অস্কার তাবারেজ। বৃহস্পতিবার অনুশীলনে দু’জনকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বিশেষ পরামর্শ দিতে দেখা গেল তাকে। প্রারম্ভিক পর্বে জগিং ও স্ট্রেচিং সারলেন লুই সুয়ারেজ-রডরিগো বেনটাঙ্কুররা। কোচ তাবারেজ এই ম্যাচে পছন্দের ৪-৪-২ ফর্মেশনেই দল সাজাবেন। তার লক্ষ্য থাকবে, রক্ষণ ও মাঝমাঠের মধ্যে সাপোর্ট এরিয়া কম রেখে বিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া। দ্রুতগতিসম্পন্ন কিলিয়ান এমবাপে যাতে দৌড়ানোর জন্য ওপেন স্পেস না পান সেদিকেও নজর রেখেছেন তিনি। এদিনের অনুশীলনে দুই সেন্ট্রাল মিডিও লুকাস টরিয়েরা ও মাতিয়াস ভেসিনোকে খুব বেশি উঠতে নিষেধ করেছেন তিনি। ফরাসি আক্রমণ রুখে ঝড়ের বেগে প্রতি-আক্রমণ তুলে গোলের পথ তৈরি করাই হবে উরুগুয়ের স্ট্র্যাটেজি। বলা বাহুল্য, এর জন্য অবশ্যই বাড়তি দায়িত্ব নিতে তৈরি লুই সুয়ারেজ।
ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁ জানেন, উইং দিয়ে আক্রমণ শানাতে পারলে জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। তাই এমবাপে এবং কোরেন্তিন টোলিসো অথবা নাবিল ফেকিরকে শুরু থেকেই গতির বিস্ফোরণ ঘটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আর্জেন্তিনা ম্যাচে ডিফেন্সিভ মিডিওদের ভুলত্রুটি এদিনের অনুশীলনে শুধরে দেন তিনি। মাঝমাঠে পল পোগবা ও এনগোলো কান্তে একে অপরের পরিপূরক। দু’জনেই ওয়ার্কলোড নিতে অভ্যস্ত। দুই সাইড ব্যাক পাভার্ড এবং লুকাস হার্নান্ডেজ এখনও পর্যন্ত ভালোই খেলছেন। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে তাদের ঘনঘন ওভারল্যাপে উঠতে দেখা যাবে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে দুরন্ত গোলের পর আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়েছে পাভার্ডের। বৃহস্পতিবার অনুশীলনের আগে ও পরে আলোকচিত্রীদের সামনে হাসিমুখে পোজ দেন তিনি।
উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দল সাজাবেন দিদিয়ের দেশঁ। সিঙ্গল স্ট্রাইকার অলিভার জিরুর পিছনে এমবাপে, গ্রিজম্যান ও টোলিসোকে রেখে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেই জয়ের পথ সুগম করতে চান তিনি। পাশাপাশি ম্যাচ টাই-ব্রেকারে পৌঁছালে নিশ্চয়ই অখুশি হবেন না উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজ। এদিন অনুশীলনের শেষ পর্বে সুয়ারেজ-গডিনদের বেশ কিছুক্ষণ পেনাল্টি শট মারতে দেখা যায়।
ফ্রান্সের সম্ভাব্য প্রথম একাদশ : হুগো লরিস, বেঞ্জামিন পাভার্ড, রাফায়েল ভারানে, স্যামুয়েল উমতিতি, লুকাস হার্নান্ডেজ, এনগোলো কান্তে, পল পোগবা, কিলিয়ান এমবাপে, অ্যান্টনি গ্রিজম্যান, কোরেন্তিন টোলিসো / নাবিল ফেকির ও অলিভার জিরু।
উরুগুয়ের সম্ভাব্য প্রথম একাদশ : ফার্নান্দো মুসলেরা, মার্টিন কাসেরেস, হোসে মারিয়া গিমেনেজ, ডিয়েগো গডিন, ডিয়েগো ল্যাক্সাল্ট, নাহিতান ন্যান্ডেজ, লুকাস টরিয়েরা, মাতিয়াস ভেসিনো, রডরিগো বেনটাঙ্কুর, লুই সুয়ারেজ ও ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানি।