বোমা ফাটালেন ম্যারাডোনা!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুলাই ২০১৮, ১০:৫৯, আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮, ১৩:৩৯
সব সময় মিডিয়ায় আলোচনায় থাকেন তিনি। বলা হচ্ছে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়োগো ম্যারাডোনার। সর্বশেষ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়ের পর তার উল্লাস নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এরপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে উঠে ছিলেন শিরোনামে। এবার আর্জেন্টিনার কোনো ম্যাচ নয়, শিরোনামে এসেছেন নক আউটে কলম্বিয়া ও ইংল্যান্ডের ম্যাচটি নিয়ে। এই ম্যাচে কলম্বিয়া 'পুকুর চুরি'র খপ্পরে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, ডাকাতির শিকার হয়েছে কলম্বিয়া।
এর আগে ম্যাচ শেষে রেফারির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিলেন কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার রাদামেল ফালকাও। তিনি বলেন, 'রেফারি আমাদের অনেক বিরক্ত করছিল। ৫০-৫০ অবস্থায় সে সবসময় ইংল্যান্ডের পক্ষে বাঁশি বাজাচ্ছিল। এটা আমাদেরকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছিল। দুই দলের প্রতি তিনি সমান আচরণ করছিলেন না।'
এরপরই টেলেসুরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা এই মন্তব্য করেন। তিনি ম্যাচটি পরিচালনায় আমেরিকান রেফারি নিয়োগ দেয়ার ইস্যুতে কলম্বিয়ানদের ফিফার প্রধান রেফারির কলিনাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর আহ্বানও রেখেছেন ম্যারাডোনা। তার বিশ্বাস, ইংল্যান্ডের লিড নেয়ার পেনাল্টিটি ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
মঙ্গলবার রাশান বিশ্বকাপের রাউন্ড অব সিক্সটিনের সর্বশেষ খেলায় টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়ে ইংল্যান্ড নিশ্চিত করেছে কোয়ার্টার ফাইনাল। তবে ম্যাচটিতে তাদের জয় ছাপিয়ে শিরোনামে রেফারির একতরফা সিদ্ধান্ত দেয়ার ঘটনা।
ম্যারাডোনা বলেন, ‘মাঠে আমি পুকুর চুরির ঘটনা দেখেছি। ক্ষমা প্রার্থনা করছি কলম্বিয়ার ভক্তদের কাছে। ফুটবলারদের কোনো দোষ দেখি না। কলিনাকে ভদ্রলোক বলেই জানি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে তিনি কিভাবে এ রকম একজন রেফারিকে বেছে নিয়েছেন তা বুঝতে পারছি না।’
দ্বিতীয়ার্ধের সূচনায় হ্যারি কেনের পেনাল্টি গোলে লিড নিলেও জয়ের জন্য টাইব্রেকারের নাটকীয়তা পাড়ি দিতে হয়েছে ইংলিশদের। নির্ধারিত সময়ের ইনজুরি টাইমে কলম্বিয়ানদের খেলায় ফেরান বার্সেলোনা ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনা। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলায় কোনো দলটি গোল আদায় করতে পারেনি। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের শুটআউটে ৪-৩ গোলের জয়ে থ্রি লায়ন্স খ্যাত ইংল্যান্ড উঠেছে ফিফার ২১তম মেগা আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইংলিশদের পাওয়া পেনাল্টিকে পুরোপুরি অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন ম্যারাডোনা। কলম্বিয়ার ফুটবলারদের ভিএআর প্রার্থনা সত্ত্বেও রেফারির প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিকে হাস্যকর বলেও অভিমত দেন আর্জেন্টাইন ফুটবলঈশ্বর। তার মতে, নিজের ভুলেই ডি-বক্সের মধ্যে পড়ে গেছেন হ্যারি কেন।
ম্যারাডোনা বলেন, ‘রেফারির পেনাল্টি আদেশ সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে। এটি পেনাল্টি ছিল না। নিজের ভুলেই পড়ে গেছেন কিন। কলম্বিয়ার আপিল সত্ত্বেও রেফারি কেন ভিএআর ব্যবহার করেননি তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্যই ভিএআর প্রযুক্তির সংযোজন ঘটেছে বিশ্বকাপে। কিন্তু রেফারি এড়িয়ে গেলেন। এ ধরনের ঘটনা দেখার পর চুপ থাকলে চলবে না। প্রতিবাদ করতে হবে।’
আরো পড়ুন : রেফারির বিরুদ্ধে আঙুল তুলল কলম্বিয়া
নক আউটের শেষ ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতেছে ইংল্যান্ড। নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচটি ১-১ সমতায় থাকায় পরে টাইব্রেকারে গড়ায়। পরে ৪-৩ গোলে হেরে মাঠ ছাড়ে কলম্বিয়া। ম্যাচ শেষে য়ুক্তরাষ্ট্রের রেফারি মার্ক গেইগারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করেছেন কলম্বিয়ার রাদামেল ফালকাও।
তার অভিযোগ, ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইংল্যান্ডের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশিও বাজিয়েছিলেন গেইগার। তিনি বলেন, 'রেফারি আমাদের অনেক বিরক্ত করছিল। ৫০-৫০ অবস্থায় সে সবসময় ইংল্যান্ডের পক্ষে বাঁশি বাজাচ্ছিল। এটা আমাদেরকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছিল। দুই দলের প্রতি তিনি সমান আচরণ করছিলেন না।'
তিনি আরো অভিযোগ করেন, 'যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছিল তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে যাচ্ছিলেন। এটা লজ্জার ব্যাপার যে, বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় এমন ঘটনা ঘটলো।'
আরো পড়ুন : আমি এখনই দেশে ফেরত যেতে চাই না : গ্যারেথ সাউথগেট
বিশ্বকাপ ফুটবলে এই প্রথমবারের মতো টাইব্রেকারে বা পেনাল্টি শুট আউটে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে জয়ী হওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী ইংলিশ কোচ বলেন, ‘তিনি এখনই রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফেরত যেতে চান না এবং তার আশা ইংলিশ থ্রি লায়ন্সরা এই বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত যাবে। রাউন্ড অব সিক্সটিনের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে। শেষ আটে ইংল্যান্ড সুইডেনের মোকাবেলা করবে।’
যারা সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। খেলাটি ১-১ গোলের সমতা নিয়ে শেষ হয় এবং অতিরিক্ত সময়েও একই ফলাফল বজায় থাকে। কিন্তু মস্কোর সেই ম্যাচে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ডেভিড অসপিনা ইংল্যান্ড ও লিভারপুলের ফুটবলার হেন্ডারসনের শটটি রুখে দেন। কিন্তু টাইব্রেকারে ইংলিশরা পেছনে থেকে এসে জয়ী হয়েছে। ম্যাটিয়াস ইউরিবের শটটি বারে লাগে এবং কার্লোস বাক্কার শটটি সেভ করেন ইংল্যান্ড ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এভারটনের হয়ে খেলা জর্ডান পিকফোর্ড। সাউথগেট মনে করেন, বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো টাইব্রেকারে জয়লাভ করায় তার দলের আত্মবিশ্বাস বেশ বেড়ে গেছে এবং তিনি ইংলিশদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত যেতে চান।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলেরা পেছনে ফিরে তাকাবে এবং এর থেকে শিক্ষা নেবে।’ সাউথগেট আরো যোগ করেন, ‘আমরা নিজেরা এখানে গল্প তৈরির জন্য এসেছি। ছেলেরা তার কিছু অংশ কলম্বিয়ার বিপক্ষেই করেছে। আমরা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলব। কিন্তু এই বিষয়টি আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, আমি এখনই ঘরে ফিরে যেতে চাই না।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমার মনে হয় পুরো ৯০ মিনিটেই আমরা বেশ ভালো ফুটবল খেলেছি। খেলা শেষ হওয়ার আগে বিপক্ষ দল থেকে গোল করে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি এবং টাইব্রেকারে নিজেদের মনোযোগ ধরে রেখে জয়ী হয়েই মাঠ ছেড়েছি।’ সাউথগেট, যিনি নিজেও ইংলিশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন একসময়।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ দিতে চাই এবং প্রত্যেক কোচিং স্টাফকে, যারা দলের জন্য অকান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। পেনাল্টি নিয়ে ইংলিশ কোচ সাউথগেটেরও দুঃখ আছে। তিনি নিজ দেশে ইউরো ৯৬-এর সেমিফাইনালে পেনাল্টি মিস করেছিলেন এবং জার্মানি জয়লাভ করে ফাইনালে চলে যায় এবং শিরোপা জয় করে। কিন্তু পিকফোর্ড কার্লোস বাক্কার শটটি সেভ করে এবং এরিক ডায়ার ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করে তাদের শেষ আটে নিয়ে যায়।
সাউথগেট আরো বলেন, ‘কলম্বিয়ার ম্যাচটি নিয়ে আমরা খুব বেশি ও কঠোরভাবে আলোচনা করিনি। আমরা শান্ত থেকেছি এবং প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ, তারা সবকিছু ঠিকঠাকভাবে করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সুইডেন আরো একটি দেশ, যাদের বিপক্ষে আমাদের রেকর্ড ভালো নয়। আমরা তাদের কিছুটা নিচু দেখেছি বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু বর্তমানে তারা বেশ শক্তিশালী দল এবং তারা জানে তারা কী করছে। আমার মনে হয় শেষ আটের লড়াইটা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হবে।’