এভাবে শেষ কবে কেঁদে ছিল জাপানিরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ জুলাই ২০১৮, ১৭:৫৮
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে, এই দেশের মানুষ কাজ ছাড়া কিছুই বুঝে না। আবেগের কোন মূল্য নেই তাদের কাছে। ২০০২ সালে যখন তাদের দেশে বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছিল তখনও দেশটির অনেক জায়ান্ট কোম্পানি কর্মীদের ছুটি দেয়নি খেলা দেখার জন্য। কর্মীরাও নাকি এই ছুটি না দেয়ার ব্যপারে কোন আপত্তি করেননি। এমন এক জাতি খেলায় হেরে হাউমাউ করে কাঁদবে চিন্তা করা যায়?
সোমবার দিবাগত রাত জাপান-বেলজিয়াম খেলার পর সেই অচিন্তনীয় বিষয়টিই বাস্তবে দেখা গেলো। যোগ করা সময়ের গোলে বেলজিয়ামের কাছে হেরে জাপানের রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের মধ্যে কান্না আটকানোর প্রবল চেষ্টার সাথে ছিল অবিশ্বাস; কিভাবে জয়টা হাতছাড়া হলো।
বিরতির আগে পর্যন্ত গোল শূণ্য ড্র থাকা ম্যাচটিতে জাপান জয় পাবে সেটা কেউ চিন্তা করেনি। কিন্তু পরপর দুই গোলে যখন এশিয়ান জায়ান্টরা বেলজিয়ামকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল তখন জাপানকেই মনে হয়েছিল ফেবারিট। কিন্তু খেলার ফলাফল নির্ধারণ হয়েছে ২-৩ গোলের ব্যবধানে। অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ তিনটি গোলই দিয়েছে বেলজিয়ায়াম। এতেই হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় জাপানিদের।
এর আগেও দুইবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে ছিটকে গিয়েছিল জাপান। রাশিয়ার আসরে তাই দলটির সামনে সুযোগ ছিল প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার।
গত সোমবার বেলজিয়ামের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া জাপান ইতিহাস গড়ার পথে ছিল। কিন্তু দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বেলজিয়াম সমতায় ফেরার পর যোগ করা সময়ে গোলে জিতে নেয় ম্যাচ।
১৯৭০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পশ্চিম জার্মানির জয়ের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউটে ২-০ গোলে পিছিয়ে জিতল বেলজিয়াম।
টোকিওর একটি স্পোর্টস বারে বসে ম্যাচ দেখা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী নাও ওকাদা শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা লিড নিলাম, ভেবেছিলাম আমরা জিতব।’
‘এটা পীড়াদায়ক কিন্তু এটা খুব ভালো ম্যাচ ছিল। আমার ভেতরে তোলপাড় চলছে। আমি চাই পরেরবার জাপান লড়াই চালিয়ে যাবে।’
ফিফার র্যাঙ্কিংয়ে ৬১তম স্থানে থাকা জাপান রাশিয়ার আসরে প্রভাব রাখবে বলে ধরাই হয়নি। তবে বেলজিয়ামের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচের পারফরম্যান্স সমর্থকদের মন জিতে নেয়।
‘এটা আসলেই ভালো দল ছিল। তাদের পাসিং, স্কোরিং এবং দলীয় খেলা ভালো ছিল’, বলেন ৩৯ বছর বয়সী হেয়ারড্রেসার কেনিচি ওকেগামি।
‘২-২ এর সময় আমি ভেবেছিলাম আমরা পেনাল্টি শুট আউটে যাচ্ছি….এটা বিপর্যয়কর’, যোগ করেন তিনি।
‘শুধু আরেকটু দরকার ছিল…এটা একটা কঠিন ফল’, বলেন ৬১ বছর বয়সী সাবেক ফুটবল কোচ এবং রেফারি কেনতা সাইতো।
‘তারা (জাপান) শেষ দিকে সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেনি।’
‘আজকের ম্যাচটি ভালো একটা ম্যাচ ছিল কিন্তু শেষ সময়ে সবকিছু ঘটে গেল’, বলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওকাদা।
স্বপ্নভঙ্গ হলেও রাশিয়ার আসর থেকে ইতিবাচক কিছু নেওয়ার চেষ্টা করছে জাপানের সমর্থকরা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের ১-০ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচের চেয়ে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচে ভালো খেলার তৃপ্তি আছে তাদের।
অবশ্য পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে জাপানকে সমালোচিত হতে হচ্ছে। শেষ দিকে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে সময় নষ্ট করা দলটি ডিসিপ্লিনারি রেকর্ডে এগিয়ে থেকে সেনেগালকে পেছনে ফেলে শেষ ষোলোয় উঠে আসে।