আজ কি হ্যারি কেনের আলোয় জ্বলবে ইংল্যান্ড?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ জুলাই ২০১৮, ১৪:৪০
রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রাথমিক পর্ব ভালোভাবেই উতরে গেছে ইংল্যান্ড। আজ নক আউট পর্বে দলটি মুখোমুখি হচ্ছে কলম্বিয়ার। কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার মতো শক্তি কি এই দলটির আছে? দলটির মূল শক্তি বা বৈশিষ্ট্যই বা কী?
ইংল্যান্ড দলটি আসলে কতটা ভালো?
যদিও দলটি শেষ ষোলোতে উঠেছে ভালোভাবেই। কিন্তু তারপরেও এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন।
ম্যানেজার সাউথগেট নিজেও স্বীকার করেন, যতক্ষণ না ইংল্যান্ড টুর্নামেন্টের শীর্ষ পর্যায়ের দলগুলোকে হারাতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত দলটিকে সেরা বলা যাবে না। আর গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় বেলজিয়ামের কাছে হারার ঘটনা তো আছেই।
আর ২০০৬ এর পর থেকে নক আউট পর্যায়ে কোনো ম্যাচ জেতার রেকর্ড নেই এই দলটির। এবার তিউনিসিয়া আর পানামাকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে; কিন্তু দল দুটোর কোনোটিই খুব উঁচু মানের নয়। আর সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ইংল্যান্ড আসলে কতটা ভালো দল।
এটি সত্যি দলটিতে বিশ্বমানের স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন রয়েছেন এবং এবার খেলছেনও ভালো। কিন্তু তাদেরও পরীক্ষা হবে আসলে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে।
যাদের জ্বলে ওঠা অপরিহার্য
আজকের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কোনো ভুল করার সুযোগ নেই। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে সামান্য ভুলই শেষ করে দিতে পারে রাশিয়া বিশ্বকাপ। আর নিজেদের সফল করতে কমপক্ষে পাঁচ সেরা তারকাকে নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটাই দিতে হবে আজ।
কালিনিনগ্রাদে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য এভারটন গোলকিপার জর্ডান পিকফর্ডের বেশ সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কোচের আস্থায় আছেন তিনি।
জন স্টোনসকে তার নামের প্রতি সুবিচার করতে হবে রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। সাথে তিনি পাবেন লিচেস্টার সিটির হ্যারি মাগুইরিকে। যদিও মূল ভারটা আসলে থাকবে স্টোনসের ওপরই।
আর মিডফিল্ডে জর্ডান হ্যান্ডারসনই হবে দলটির মূল কাণ্ডারি। আগের দুটো জয়েই তার ভূমিকা আছে। ভালো দলের বিপক্ষে জ্বলের ওঠার তাড়না আছে তার। এমনকি প্রয়োজনে রক্ষণেও ছুটে যেতে পারেন তিনি।
রাহিম স্টার্লিং অসাধারণ এক প্রতিভা। বিশ্বকাপের এ পর্বে এখন তার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ। ইংল্যান্ডের হয়ে আগের ২২টি ম্যাচে তার গোল নেই। সে রেকর্ড ভাঙ্গারও সুযোগ আছে তার।
আর অধিনায়ক হ্যারি কেন তো রয়েছেনই। তাকে শুধু তার খেলাটাই চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আলো ছড়াতে পারলেই ইংল্যান্ডের জয় সহজ হবে।
এবার দরটিতে এমন কয়েকজন খেলোয়াড় আছে যারা প্রিমিয়ার লীগে এবার খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। রাদামেল ফ্যালকাও বিশ্বমানের স্ট্রাইকার তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু ইনজুরির কারণে ফ্লপ ছিলেন প্রিমিয়ার লীগে। এখনো ইনজুরি কাটিয়ে ওঠার জন্য লড়াই করছেন। বয়স এখন তার ৩২। কিন্তু হয়তো তিনিই হয়ে উঠবেন প্রতিপক্ষের জন্য বিপজ্জনক।
সুযোগের জানালা খুলতে পারবেন কোচ?
বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলা নিয়ে সমালোচনাতেই পড়েছেন কোচ সাউথগেট। জি গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে ইংল্যান্ড।
প্রকৃত অর্থেই তারা জাপানের চেয়েও বিপজ্জনক দল কলম্বিয়াকে পেয়েছে নক আউট পর্বের প্রতিপক্ষ হিসেবে।
আবার এ পর্বে কলম্বিয়াকে হারাতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের খেলতে হবে সুইডেন বা সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
আপাতদৃষ্টিতে ব্রাজিলের চেয়ে এ দল দুটিকেই তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষও ভাবতে পারেন ইংল্যান্ড কোচ।
যদিও এবারের বিশ্বকাপ চরম অনিশ্চয়তাকেই দেখাচ্ছে যেখানে কোনো কিছুই নিশ্চিত করে আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।
তারপরেও কলম্বিয়াকে হারাতে পারলে এরপর সুইডেন বা সুইজারল্যান্ডের বাধা টপকালেই অন্যরকম এক সুযোগ তৈরি হবে ইংল্যান্ডের জন্য।
আর সেটি হলে তা হবে ইংল্যান্ডের জন্য ৯০'তে ইতালি বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে ওঠা।
আরো পড়ুন : ইংল্যান্ডের মুখোমুখি রদ্রিগেজের কলম্বিয়া
ইংলিশ তারকা ডেলে আলি জানিয়েছেন, তাদের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে হ্যারি কেনের মতো তারকাকে বিশ্রামে রেখে থ্রি লায়ন্সরা যে গতি প্রাপ্ত হয়েছে গ্রুপ পর্বে, তাতে কোনো ব্যাঘাত ঘটাননি। ইংলিশরা রাউন্ড অব সিক্সটিনে হামেশ রদ্রিগেজ ও রাদামাল ফ্যালকাও-এর কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে। ইংল্যান্ড নিজেদের গ্রুপ জি’র শেষ ম্যাচে রেড ডেভিল খ্যাত বেলজিয়ামের কাছে পরাজিত হয় ১-০ গোলে। গুঞ্জন ছিল সহজ প্রতিপক্ষ জাপানকে পাওয়ার আশায় এই ম্যাচে দুই দেশই হারতে চাইবে; কিন্তু নিজেদের শেষ ম্যাচে জাপান লেভানডস্কির পোল্যান্ডের কাছে পরাজিত হওয়ায় কলম্বিয়া এইচ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে আসে এবং জাপান তাদের পেছনে। গ্রুপ জি’র রানার্স-আপ হিসেবে তাই হ্যারি কেনের ইংল্যান্ডকে মুখোমুখি হতে হবে গ্রুপ এইচের চ্যাম্পিয়ন কলম্বিয়ার, যেখানে তারা জাপানের মুখোমুখি হওয়ার আশা করেছিল। অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ বলে।
জাপানের পরিবর্তে রাউন্ড অব সিক্সটিনে কলম্বিয়াকে পাওয়ায় গ্যারেথ সাউথগেটের মন কিছুটা খারাপ হতেই পারে। কারণ জাপানের তুলনায় শক্তি-সামর্থ্যরে বিবেচনায় হোসে পেকারম্যানের কলম্বিয়া সব দিক দিয়ে এগিয়ে। ডেল আলি এসব নিয়ে চিন্তা করতে চাইছেন না এবং কলম্বিয়ার বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিতেই প্রস্তুত। কলম্বিয়ার বিপক্ষে রাউন্ড অব সিক্সটিনের দ্বৈরথ জয় করতে পারলে থ্রি লায়ন্সরা শেষ আটে সুইডেন কিংবা সুইজারল্যান্ডের ম্যাচে জয়ী দলের মুখোমুখি হবে। নিজেদের রক্ষণভাগকে নিয়ে সাউথগেটকে আরো একটু বেশি ভাবতে হবে বা মনোযোগী হতে হবে। বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপ পর্বে থ্রি লায়ন্সরা এই নিয়ে পরপর ১৫ ম্যাচে কিন শিট বা গোলশূন্য অবস্থায় শেষ করতে পারল না। যদিও ইংলিশরা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। কারণ কলম্বিয়ার ক্যাম্পে তাদের সেরা ফুটবলার হামেশ রদ্রিগেজের ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে এবং রাউন্ড অব সিক্সটিনে তিনি না-ও খেলতে পারেন মঙ্গলবারের লড়াইয়ে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে টটেনহাম হটস্পারের হয়ে খেলা ডেলে আলি বলেন, ‘বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচটিতে আমাদের একাদশ কিছুটা দুর্বল ছিল। অনেকটা যেন ‘এ’ দলের মতো। কিন্তু আমরা সবাই একসাথে আছি। বেলজিয়ামের বিপক্ষে আমাদের ছেলেরা ভালোই খেলেছে। আমাদের কোচ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং আমরা তাকে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করেছি। আমরা নিজেদের খেলার ধারা বা গতি হারাইনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বেলজিয়ামের বিপক্ষে পরাজয়টিকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। তারা বেশ শক্তিশালী দল। আমরাও তাই।’
হ্যারি কেনকে বেলজিয়ামের বিপক্ষে বিশ্রুাম দিয়েছিলেন সাউথগেট। কলম্বিয়ার বিপক্ষে জন স্টোনসের খেলা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে কারণ বেলজিয়ামের বিপক্ষে তিনি কিছুটা আঘাত পেয়েছিলেন।
কলম্বিয়া, ইংল্যান্ডের কঠিন পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত। যদিও তারা রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদেরকে তেমনভাবে মেলে ধরতে পারেনি। হিট এবং মিস এভাবে খেললেও তারা গ্রুপ এইচের শীর্ষস্থান নিয়েই রাউন্ড অব সিক্সটিন নিশ্চিত করেছে। পোল্যান্ডকে তারা গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। যারা গ্রুপ এইচের ফেভারিট ছিল। জাপানের বিপক্ষে তারা দশজনের দল নিয়ে ২-১ গোলে পরাজিত হয় এবং সেনেগালের সাথে খুব একটা ভালো না খেলেও ১-০ গোলে জয় লাভ করে। হামেশ রদ্রিগেজের ইনজুরি পেকারম্যানের জন্য একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেনেগালের বিপক্ষে মাংশপেশিতে কিছুটা ব্যথা পেয়েছিলেন বায়ার্ন মিউনিখ ও কলম্বিয়ার এই তারকা ফুটবলার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি একাদশে থাকছেন কি থাকছেন না এটি কলম্বিয়ার শিবির থেকে পরিষ্কার করে বলা হয়নি। যদি তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে না খেলতে পারেন তাহলে রাদামাল ফ্যালকাও আক্রমণভাগে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন। যদিও তিনি একা নন। লুইস মুরিয়েল থাকছেন তার সাথে। ‘এল টিগগ্রের’ আক্রমণভাগ যেন খেলার সময় বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায় তাই এই ব্যবস্থা কোচ পেকারম্যানের।
লা লিগায় সেভিয়ার আক্রমণভাগের এই তারকা বলেন, ‘কোচ আমাদেরকে নিশ্চিত করতে বলেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফ্যালকাও যেন একা না হয়ে পড়েন। আমি তার সঙ্গী হবো। সে যেন প্রতিপক্ষের চার ডিফেন্ডারকে একাই সামলে শক্তি ক্ষয় না করে। আমরা একে অপরের খেলা ভালোভাবে বুঝি এবং ঈশ্বরের ইচ্ছায় ম্যাচ যত সামনে যাবে আমাদের খেলা তত ভালো হবে আশা করছি।’
কোচ পেকারম্যান মাঝমাঠে আবেল এগুয়েলরকেও ডাকতে পারেন একাদশে। কারণ মাঝমাঠে বিশ্বস্ত এডাকটরকে এই ম্যাচে ইনজুরির জন্য পাওয়া যাবে না। এই বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কেড়েছেন হুয়ান ফার্নান্দ কুইনটারো। আর্জেন্টিনার ঘরোয়া লিগের জায়ান্ট রিভার প্লেটের হয়ে খেলা এই ফুটবলারের পাস করার ক্ষমতা দিয়ে চিন্তা এনে দিতে পারেন ইংলিশ শিবিরে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কথা আসলেই একজনের চেহারা সামনে ভেসে আসে তিনি হচ্ছে টটেনহাম হটস্পারের স্ট্রাইকার হ্যারি কেন। যিনি পাঁচ গোল দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সবার আগে আছেন। গ্রুপ পর্বে নিজেকে বেশ ভালোভাবে মেলে ধরা হ্যারি কেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে কেমন করেন সেটাই দেখার বিষয়। সাউথগেট একাদশ নিয়ে একটু পরীক্ষা করতে ভালোবাসেন এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। পানামার বিপক্ষে জয়ী দলের নয়জন খেলোয়াড়কে তিনি এরপর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়েছেন। বেলজিয়ামের বিপক্ষে মার্কাস রাশফোর্ড ও জেমি ভার্ডিকে দেখা গেলেও কলম্বিয়ার বিপক্ষে হ্যারি কেন এবং জেসে লিঙ্গারডেরই থাকার কথা। তাদের সাথী হবেন রাহিম স্টার্লিং।
ইনজুরি নিয়ে সাউথগেটের কোনো চিন্তা নেই। কলম্বিয়া ৪-২-৩-১ ফরমেশনে এবং ইংল্যান্ডকে ৩-৫-২ ফরমেশনে খেলাতে পারেন কোচ পেকারম্যান এবং সাউথগেট। ইংল্যান্ড ও কলম্বিয়া এই নিয়ে চারবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ইংলিশরা এই লড়াইয়ে এগিয়ে আছে। তারা একবারো পরাজিত হয়নি এবং দু’টি ম্যাচে জয়ী হয়েছে এবং একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। লেস ক্যাফেটারস বা কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপেও জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড।