নেইমারকে তুলোধুনো করলো ব্রাজিলের মিডিয়া
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ জুলাই ২০১৮, ১৩:৩১, আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮, ১৫:০১
'নেইমার ব্রাজিলকে তৃপ্তি দিয়েছেন, কিন্তু বিশ্বকে বিরক্ত করেছেন'। মেক্সিকোকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার পর ব্রাজিলের স্থানীয় পত্রিকা গ্লোবো এই শিরোনাম করেছে। মাঠে নেইমারের 'কাণ্ডকারখানা'র কয়েকটি ছবি দিয়ে করা প্রতিবেদন এমনটাই বলেছে। তাদের মতে, 'নেইমারের কীর্তি ছিল নিখুঁত কিন্তু বিরক্তিকর।'
যদিও এ মূহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়টির নাম নেইমার আর কোনো তর্ক ছাড়াই বলতে হয় লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর বিশ্বকাপে টিকে থাকা একমাত্র সুপারস্টার।
পারফরমেন্সের কারণেই সোমবারের খেলায় তিনিই ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি দলের ২-০ গোলের দারুণ বিজয়েও তার অবদানই বেশি।
তারপরেও নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের মধ্যে এখনো মোটেও জনপ্রিয় নন নেইমার।
তবে দলের জয়ে অসাধারণ অবদান তারই। বল নিয়ে কসরত দেখিয়ে জায়গা বের করা দেখিয়েছেন তিনি। গতির সাথে স্কীল, বুদ্ধিমত্তার সাথে পেছনে পাস দেয়ার মাধ্যমে প্রথম গোলটির ক্ষেত্র তিনিই তৈরি করেছেন সোমবার সন্ধ্যায়।
কিন্তু সেখানে কিছুটা বিরক্তিও আর নাটকও ছিল যদিও এটা হতে পারে সামান্য সুবিধা আদায়ের চেষ্টা, যা সত্যিই ফুটবল মূল্যবোধের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে অনেকে মনে করেন।
মেক্সিকোর ফুল ব্যাক মিগুয়েল লায়ুন যখন ভদ্রভাবেই তার গোড়ালিতে পা রাখলেন তখনি নেইমার শুরু করলেন গড়াগড়ি, যেনো প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েছেন তিনি।
এটা সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার টীম মেটস, মেক্সিকোর খেলোয়াড়, রেফারি ও সহকারীরা, কর্মকর্তাসহ সবাই জড়িয়ে পড়েন এ ঘটনায়।
প্রেস বক্সে বিবিসি সাংবাদিকের পাশে থাকা এক জার্মান সাংবাদিকের নির্ভার মন্তব্য ছিলো, "এটা নেইমার"।
আর এই নেইমার ও ব্রাজিলই শুক্রবার শেষ আটের খেলায় মুখোমুখি হবে বেলজিয়ামের। এবং ২৬ বছর বয়সী এই পিএসজি তারকাই খেলার সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন।
সে কারণে পরে সাক্ষাতকার দিতে আসার পর এ বিষয়ক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে, তবে এর উত্তর দিয়েছেন কোচ তিতে।
"তারা তাকে পা দিয়ে মাড়িয়েছে। আমি বড় পর্দায় দেখেছি।"
পরে নেইমার প্রশ্নকর্তাকে বলেন, "এটা আমাকে ছোটো করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।"।
তিনি বলেন, "সমালোচনা বা প্রশংসাকে আমি পরোয়া করি না। গত দুটি ম্যাচের পর আমি প্রেসের সাথে কথা বলিনি, কারণ আমি সেটি চাইনি।"
"আমাকে শুধু খেলতে হবে, টীম-মেটদের সহায়তা করতে হবে ও দলকে সাহায্য করতে হবে"।
কিন্তু সবাই বিষয়টিকে এতো সহজ করে দেখছেন না।
বিবিসি রেডিও ফাইভে অ্যাস্টন ভিলার সাবেক খেলোয়াড় ডিওন ডাবলিন বলেছেন, "নেইমারের জন্য আমি বিব্রত।"
"তিনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। কিন্তু তিনি যখন মাঠে গড়াগড়ি খান সেটা মেনে নিতে পারি না।"
নেইমারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "কাম অন ইয়াংম্যান। তুমি এর চেয়ে ভালো খেলোয়াড়। উঠে আসো এবং খেলো।"
নিঃসন্দেহে নেইমার বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। আর সেটা বোঝার জন্য নিচের কিছু তথ্যই যথেষ্ট।
এবারের বিশ্বকাপে নেইমার :
- ২৩বার শট নেয়ার চেষ্টা করে ১২টিই নিতে পেরেছেন গোলবার লক্ষ্য করে
- সবচেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করেছেন (১৬টি)
- সবচেয়ে বেশি ড্রিবলিং
- সবচেয়ে বেশি বার ফাউলের শিকার হয়েছেন (২৩টি)
মেক্সিকোর বিরুদ্ধে গোলসহ বিশ্বকাপে তার ষষ্ঠ গোল করেছেন তিনি। আর এসব গোল পেতে তিনি গোলে শট নিয়েছে ৩৮টি অথচ এজন্য মেসিকে নিতে হয়েছে ৬৭ ও রোনারদোর ৭৪ শট।
নেইমারকে নিয়ে প্রতিক্রিয়া
মেক্সিকোর সাথে ম্যাচের পর নেইমারকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রায় দশ কোটি ফলোয়ার আছে তার ইন্সটগ্রামে এবং খেলার পরই তার পোস্টে লাইক পড়েছে দশ লাখ।
কিন্তু সুইজারল্যান্ডের সাথে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর তার মাঠে নাটকীয় গড়াগড়ির ছবিই বেশি শেয়ার হয়েছে টুইটারে।
কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ইনজুরি টাইমের গোলে জয়ের পর নেইমার কেনো কাঁদলেন সেটিও নিয়ে নানা কথা আছে।
এটা কি চাপ থেকে মুক্তির জন্য? নাকি নিছক আবেগ?
গত বিশ্বকাপেই নিজেদের মাটিতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে পরাজয়ের পর এবারের কোয়ার্টার ফাইনাল ব্রাজিলের অনেকের কাছেই এমন আবেগের। এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেছে দলটি।
দেখা যাক, পরের খেলায় কী করেন নেইমার।
আরো পড়ুন : আবারো আলোচনায় নেইমারের 'নাটক'
এক নেইমারের কাছেই হেরে গেল মেক্সিকো। স্বপ্ন পূরণ হলো না তাদের শেষ আটে যাওয়ার। ব্রাজিল বিশ্বকাপে এই নেইমারের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে মেক্সিকোকে এক পয়েন্টে এনে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক গুইলেরমো ওচোয়া। সেবার লড়াইটা হয়েছিল মূলত নেইমার এবং ওচোয়ার মধ্যে। গতকাল সামারায়ও প্রথমার্থে ব্রাজিলের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ান এই কিপার। কিন্তু বিরতির পর ডিফেন্ডারদের ভুলে দুটি গোল হজম এবং দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় দুইবারের বিশ্বকাপের আয়োজকদের। দুটি গোলেই অবদান নেইমারের। এই ব্রাজিলিযান সুপারস্টার নিজে করেছেন এক গোল। এরপর অপর গোলে তার অবদান। সাথে মাঠে নেইমারের অভিনয়ও ছিল ফাউলের ক্ষেত্রে। তাই ম্যাচ পরবর্তী মিক্সড জোনে মেক্সিকান কিপারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল নেইমার প্রসঙ্গে। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো কথাই বললেন না বেলজিয়াম লিগে খেলা ওচোয়া।
নেইমারকে নিয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকার করলেন স্ট্রাইকার জাভিয়ের হার্নানদেজও। নেইমারের অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তার জবাব, ‘এ জন্য তো রেফারি ছিলেন। রেফারি তার কাজ করেছেন।’ সংবাদ সম্মেলনে নেইমারকে নিয়ে কথা বললেও মিক্সড জোনে কোনো কথা বলেননি। হাসি মুখে আর সতীর্থদের সাথে দুষ্টামি করতে করতে পার হন মিক্সড জোন।
তবে সংবাদ সম্মেলনে মেক্সিকেরা কোচ তার বিরুদ্ধে অভিনয়ের যে অভিযোগ করেছিলেন তার জবাবে নেইমার বলেন, ‘মাঠে আমি কোনো অভিনয় করি না। যা সত্য তাই করি।’
মেক্সিকোর কোচ হুয়ান কার্লোস ওসারিও অভিযোগের সুর, মাঠে নেইমার যে অভিনয় করেন তা থেকে নতুন প্রজন্ম ভালো কিছু শিখবে না।
নেইমার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও ওচোয়া সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে। তার বক্তব্য, আমি আমার পারফরম্যান্সে খুশি। কিন্তু দলতো জিততে পারেনি। এই হারকে আমি বলবো দুঃখজনক। এরপর যোগ করেন, আমি ভালো খেললেও তো তা পরাজয় ঠেকোনো জন্য যথেষ্ট ছিল না।
মিডফিল্ডার গুয়ারদাদোর মতে, আমরা প্রথম পর্বে জার্মানিকে হারিয়েছি। এই নিয়ে আত্মতুষ্টিতে থাকলে চলবে না। নতুন ফুটবলার তৈরিতে হাত দিতে হবে দেশের ফুটবল ফেডারেশনকে।