তবুও জেসুসকে একাদশে রাখছেন তিতে
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ০৩ জুলাই ২০১৮, ১২:০৭, আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮, ১২:১৫
তার গায়ে ৯নং জার্সি। খেলে যাচ্ছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। অথচ গোলের দেখা পাচ্ছেন না। গ্রুপ পর্ব এবং নকআউট পর্ব মিলে এই পর্যন্ত চার ম্যাচ খেলে ফেললেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। অথচ একটিবারের জন্যও পারেননি প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকে পরাস্ত করতে বা বল জালে পাঠাতে। ফলে তার বিকল্প রবার্তো ফিরমিনহোকে একাদশে জায়গা দেয়ার দাবি উঠেছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে গোল করেছেন তিনি। এরপরও জেসুসকে আগামী ম্যাচে প্রথম ১১ জনের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্তে অটল ব্রাজিলের কোচ তিতে। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জেসুস প্রসঙ্গে বলেন, সে গোল পেলো কি পেলো না তা বড় বিষয় নয়। সে নিয়মিত খেলেবে এটাই মূখ্য।
ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড একমাত্র ব্রাজিলিয়ান যে ৯নং জার্সি গায়েও গোলের দেখা পাননি বিশ্বকাপের গত চার ম্যাচে। যেখানে এই জার্সি গায়ে বিশ্বকাপে গোল পেয়েছেন রোনাল্ডো, রোমারিও, আদ্রিয়ানো, লুইস ফ্যাবিয়ানো এবং ফ্রেডরা। কিন্তু গোলের ভাগ্য খুলছেনা জেসুসের।
কাল বদলি হিসেবে নেমেই গোলের দেখা পান ফিরমিনহো। লিভারপুলের এই ফুটবলারের গোল পাওয়া মানে একাদশে তার জায়গা হওয়ার পক্ষে দাবি জোরালো হওয়া। কিন্তু কোচ তিতের মানসিকতা এখনও জেসুসের পক্ষে। ফলে মাঠের বাইরেই বদলি খেরোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ফিরমিনহোকে।
অতীতে ব্রাজিলের আক্রমণভাগ বিপক্ষ রক্ষণপ্রাচীরে কাঁপন ধরিয়ে দিতো রোনাল্ডো, রিভালদো, রোনালদিনহো, আদ্রিয়ানোদের নিয়ে। এবার তাদের ফরোয়ার্ড লাইনে নেইমারের পাশে কুতিনহো, জেসুস, পাওলিনহোরা।
সেলেকাওরা গ্রুপ পর্ব পার হয়েছে কুতিনহো, পাওলিনহো, নেইমার এবং থিয়েগো সিলভার গোলের উপর ভর করে। মেক্সিকো হার্ডল ডিঙ্গালো নেইমার এবং ফিরমিনহোর পায়ের ছোঁয়ায়।
এর ইতিবাচক দিক হলো, সর্বশেষ ২০০২ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়াদের উদ্ধার করার জন্য কেউ না কেউ আছেন। সুতরাং এখানে জেসুস গোল না পেলেও সমস্যা নেই। দলীয় সমন্বয় তো থাকছে।
আরো পড়ুন : বিশ্বকাপের আকর্ষণ টিকিয়ে রাখলেন নেইমার
‘মেসির বিদায় হয়েছে। রোনালদোও চলে গেছে। এবার পালা নেইমারের।’ ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামের বাইরে মেক্সিকান সমর্থকরা এভাবেই ব্রাজিলের সমর্থকদের উত্যক্ত করছিল। সামারার ৩৬ ডিগ্রী তাপমাত্রার অসহ্য গরমের মধ্যেও থামছিল না তারা। আর একটু পরপরই মেক হি কো মেক হি কো বলে বলে নিজ দলকে সমর্থন জানাচ্ছিল। ম্যাচ শেষে তারা একেবারেই চুপ। উল্টো ব্রাজিলের সমর্থকদের উৎসবের সময় স্টেডিয়ামে তাদের সাথে বিবাদে জড়ায় তারা। মস্কো থেকে ১০২০ কিলো মিটার দূরের এই সামারায় নেইমারের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স সুসংবাদ বয়ে আনতো মেক্সিকানদের জন্য। রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতো ব্রাজিল। আর মধ্য আমেরিকান দেশটির ঠাঁই হতো কোয়াটারে। কিন্ত বড় ক্ষতি হয়ে যেত বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই ২১তম আসরের। তারকা শূন্য হতে যেত আসর। সেটি হতে দেননি নেইমার। যেন টুর্নামেন্টের যাবতীয় আকর্ষণ টিকিয়ে রাখার সব দায়িত্ব নিজ কাঁধে একাই নিয়ে নিলেন এই প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের ফরোয়ার্ড।
গোল করে এবং আরেকটি গোলে উৎস হয়ে দলকে যেমন টিকিয়ে রেখেছেন প্রতিযোগিতায় তেমনি মুখ বন্ধ করে দিলেন সমালোচকদের। এখন তার ভাণ্ডারে দুই গোল। সব মিলিয়ে তার বিশ্বকাপ গোল এখন ছয়টি। কাল দ্বিতীয় রাউন্ডের এই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়েরর পুরস্কারও দখলে নিয়ে গেছেন তিনি।
ব্রাজিলের বিপক্ষে মেক্সিকোর সাম্প্রতিক রেকর্ড ভালো। সর্বশেষ ১৫ খেলার সাতটিতে জয় তাদের। পাঁচটিতে জিতিছে ব্রাজিল। এই পরিসংখানের বিপরীতে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানো জন্য অতি প্রয়োজন ছিল নেইমারের ছন্দে ফেরা। সে কাজটিই করলেন সাবেক বার্সেলোনর এই তারকা। ৫১ মিনিটে নিজে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা গোল করলেন। এরপরও পাঁচাবারের বিশ্ব সেরাদের টেনশন দুর হচ্ছিল না। প্রতিপক্ষ মেক্সিকো বলে কথা। যারা জানে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে। এই কঠিন সময়ে আবার নেইমার ঝলক। মেক্সিকানদের ঘুরে দাঁড়ানোর সব প্রচেষ্টা নিষ্ফল করে দিলেন সেই নেইমার। ৮৮ মিনিটে নিজেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে গতিতে ঢুকে পড়লেন বিপক্ষ সীমানায়। তার সামনে তখন শুধু তখন পুরোনো পাহাড় সব দেয়াল গোলরক্ষক ওচোয়া। গত বিশ্বকাপে যিনি খুবই হতাশ করেছিলেন নেইমারকে।
আড়াআাড়ি পজিশনে থাকা ওচোয়াকে পরাস্ত করেত নিজেই শট নিলেন পোস্টে। হাতের আলতো ছোয়ায় তা রুখেও দেন মেক্সিকান শেষ প্রহরী। কিন্তু ছুটে আসা ফিরমিনহো তাতে পা লাগিয়ে টিনশন মুক্ত করেন ব্রাজিলকে।
নেইমারের এই উজ্জ্বল পারফরম্যান্স এখন শুধু ব্রাজিল সমর্থকদেরই আসরে টিকিয়ে রাখেনি সাথে পুরো টুনামেন্টেরও। আর্জেন্টিনার বিদায় এই বিশ্বকাপ থেকে মেসি পর্ব শেষ। উরুগুয়ের কাছে পর্তুগালের হারের ফলে রোনালদোকেও আর দেখা যাওয়ার সুযোগ নেই এই বিশ্বকাপে। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের ফলে টমাস মুলারের খেলা দেখা থেকেও বঞ্চিত নক আউট পর্বের দর্শকরা। রাশিয়ার কাছে স্পেনের হারে দিয়েগো কস্তা, ইনিয়েস্তাদের পর্ব শেষ।
এখন নেইমারের ব্রাজিল বিদায় নিলে দর্শকরা কার খেলা দেখতে টিভির সামনে বসতো বা স্টেডিয়ামে আসতো। নিজে ফর্মে ফিরে নেইমার সবার চাহিদা পূরণ করলেন। শুধু মেক্সিকান এবং ব্রাজিল বিরোধীদের ছাড়া।
ম্যাচ শেষে এই ব্রাজিলের সুপার স্টারের বক্তব্য, এই খেলায় বেশ স্বাচ্ছ্ন্দ্য বোধ করছিলাম আমি। আমার কাজই তো হলো দলের জন্য খেলা এবং নিজেকে উজাড় করে দেয়া।