১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বকাপের আকর্ষণ টিকিয়ে রাখলেন নেইমার

বিশ্বকাপ, নেইমার
গোলের পর নেইমারের উদযাপন - সংগৃহীত

‘মেসির বিদায় হয়েছে। রোনালদোও চলে গেছে। এবার পালা নেইমারের।’ ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামের বাইরে মেক্সিকান সমর্থকরা এভাবেই ব্রাজিলের সমর্থকদের উত্যক্ত করছিল। সামারার ৩৬ ডিগ্রী তাপমাত্রার অসহ্য গরমের মধ্যেও থামছিল না তারা। আর একটু পরপরই মেক হি কো মেক হি কো বলে বলে নিজ দলকে সমর্থন জানাচ্ছিল। ম্যাচ শেষে তারা একেবারেই চুপ। উল্টো ব্রাজিলের সমর্থকদের উৎসবের সময় স্টেডিয়ামে তাদের সাথে বিবাদে জড়ায় তারা। মস্কো থেকে ১০২০ কিলো মিটার দূরের এই সামারায় নেইমারের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স সুসংবাদ বয়ে আনতো মেক্সিকানদের জন্য। রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতো ব্রাজিল। আর মধ্য আমেরিকান দেশটির ঠাঁই হতো কোয়াটারে। কিন্ত বড় ক্ষতি হয়ে যেত বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই ২১তম আসরের। তারকা শূন্য হতে যেত আসর। সেটি হতে দেননি নেইমার। যেন টুর্নামেন্টের যাবতীয় আকর্ষণ টিকিয়ে রাখার সব দায়িত্ব নিজ কাঁধে একাই নিয়ে নিলেন এই প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের ফরোয়ার্ড।

গোল করে এবং আরেকটি গোলে উৎস হয়ে দলকে যেমন টিকিয়ে রেখেছেন প্রতিযোগিতায় তেমনি মুখ বন্ধ করে দিলেন সমালোচকদের। এখন তার ভাণ্ডারে দুই গোল। সব মিলিয়ে তার বিশ্বকাপ গোল এখন ছয়টি। কাল দ্বিতীয় রাউন্ডের এই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়েরর পুরস্কারও দখলে নিয়ে গেছেন তিনি।

ব্রাজিলের বিপক্ষে মেক্সিকোর সাম্প্রতিক রেকর্ড ভালো। সর্বশেষ ১৫ খেলার সাতটিতে জয় তাদের। পাঁচটিতে জিতিছে ব্রাজিল। এই পরিসংখানের বিপরীতে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানো জন্য অতি প্রয়োজন ছিল নেইমারের ছন্দে ফেরা। সে কাজটিই করলেন সাবেক বার্সেলোনর এই তারকা। ৫১ মিনিটে নিজে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা গোল করলেন। এরপরও পাঁচাবারের বিশ্ব সেরাদের টেনশন দুর হচ্ছিল না। প্রতিপক্ষ মেক্সিকো বলে কথা। যারা জানে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে। এই কঠিন সময়ে আবার নেইমার ঝলক। মেক্সিকানদের ঘুরে দাঁড়ানোর সব প্রচেষ্টা নিষ্ফল করে দিলেন সেই নেইমার। ৮৮ মিনিটে নিজেই কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে গতিতে ঢুকে পড়লেন বিপক্ষ সীমানায়। তার সামনে তখন শুধু তখন পুরোনো পাহাড় সব দেয়াল গোলরক্ষক ওচোয়া। গত বিশ্বকাপে যিনি খুবই হতাশ করেছিলেন নেইমারকে।

আড়াআাড়ি পজিশনে থাকা ওচোয়াকে পরাস্ত করেত নিজেই শট নিলেন পোস্টে। হাতের আলতো ছোয়ায় তা রুখেও দেন মেক্সিকান শেষ প্রহরী। কিন্তু ছুটে আসা ফিরমিনহো তাতে পা লাগিয়ে টিনশন মুক্ত করেন ব্রাজিলকে।

নেইমারের এই উজ্জ্বল পারফরম্যান্স এখন শুধু ব্রাজিল সমর্থকদেরই আসরে টিকিয়ে রাখেনি সাথে পুরো টুনামেন্টেরও। আর্জেন্টিনার বিদায় এই বিশ্বকাপ থেকে মেসি পর্ব শেষ। উরুগুয়ের কাছে পর্তুগালের হারের ফলে রোনালদোকেও আর দেখা যাওয়ার সুযোগ নেই এই বিশ্বকাপে। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের ফলে টমাস মুলারের খেলা দেখা থেকেও বঞ্চিত নক আউট পর্বের দর্শকরা। রাশিয়ার কাছে স্পেনের হারে দিয়েগো কস্তা, ইনিয়েস্তাদের পর্ব শেষ।

এখন নেইমারের ব্রাজিল বিদায় নিলে দর্শকরা কার খেলা দেখতে টিভির সামনে বসতো বা স্টেডিয়ামে আসতো। নিজে ফর্মে ফিরে নেইমার সবার চাহিদা পূরণ করলেন। শুধু মেক্সিকান এবং ব্রাজিল বিরোধীদের ছাড়া।

ম্যাচ শেষে এই ব্রাজিলের সুপার স্টারের বক্তব্য, এই খেলায় বেশ স্বাচ্ছ্ন্দ্য বোধ করছিলাম আমি। আমার কাজই তো হলো দলের জন্য খেলা এবং নিজেকে উজাড় করে দেয়া।

 

আরো পড়ুন : তিতের বিশ্বাস রাখলেন নেইমার

রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসে ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছিলেন,‘ড্রেসিংরুমে অনেক আলোচনাই হয়। সব ব্যাপার আমার জানা নেই। সে অনেক ম্যাচ খেলেছে। এবং আমরা জানি সে এ পর্যায়ের পারফরম্যান্সের জন্য কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ক্লাবে সে চমৎকার খেলেছিল। আমি জানি না, সোমবারের ফলাফল কী হবে। আমরা শুধু প্রত্যাশা করতে পারি। সে দারুণ একজন খেলোয়াড়। সে তার সেরা ফর্মে ফিরেছে।’

কোচের এই কথাটুকু বাদ দিলে নেইমারের প্রশংসা এবার খুব কম হয়েছে। বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন নেইমার। একটুতেই পড়ে যাওয়া, কিছুটা অভিনয় ইত্যাদি কারণে বেশ হাসাহাসিও চলছিল ব্রাজিলিয়ান এই তারকাকে নিয়ে। কিন্তু দুর্দান্ত ফুটবল দিয়ে যে তিনি নজর কাড়তে পারেন- সেটাই যেন সোমবার সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন নেইমার। মেক্সিকোর বিপক্ষে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে নিজে করেছেন একটি গোল। সতীর্থকে দিয়ে করিয়েছেন আরেকটি। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল।

মেক্সিকোর বিপক্ষে ব্রাজিলের প্রথমার্ধটা কেটেছিল গোলশূণ্যভাবে। আরও একটি অঘটনের শঙ্কা-সম্ভাবনাই হয়তো তখন উঁকি দিয়েছিল অনেকের মনে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সেলেসাওরা। আর সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন নেইমার। ৫১ মিনিটের মাথায় গোলপোস্টের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকা বলটিতে দ্রুততার সঙ্গে পা ঠেকিয়ে সেটি জালে পাঠিয়েছিলেন।

১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মেক্সিকোকে আরও চেপে ধরেছিল ব্রাজিল। মেক্সিকোর গোলরক্ষক দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে রুখে দিয়েছিলেন অনেক গোলপ্রচেষ্টা। তবে ৮৮ মিনিটের মাথায় আর সফল হতে পারেননি তিনি। আরেকটি গোল করে ব্রাজিলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন বদলি হিসেবে মাঠে নামা ফিরমিনহো। এই গোলেরও নেপথ্য কারিগর ছিলেন নেইমার।

বাঁ প্রান্ত দিয়ে বেশ খানিকটা দৌড়ে বল ঠেলেছিলেন ফিরমিনোর দিকে। সেটা জালে জড়াতে কোনো ভুল হয়নি ফিরমিনোর।

এবারের বিশ্বকাপ থেকে এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা, রোনালদোর পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেনের মতো শক্তিশালী দল। সোমবার শেষ ষোলোর ম্যাচে দারুণভাবে জ্বলে উঠে ব্রাজিলকেও সেদিকে যেতে দেননি নেইমার।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারত থেকে আলু আমদানি করা ছাড়া উপায় ছিল না : বাণিজ্য উপদেষ্টা সুদানের আধাসামরিক বাহিনীর ড্রোন হামলায় নিহত ৩৮ বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান সমন্বয়কদের স্কুলে ভর্তির ডিজিটাল লটারি মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য সিরিয়াকে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড মানবিক সহায়তা দেবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে মহান বিজয় দিবস পালিত চুয়াডাঙ্গায় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ আটক ২ গাজীপুরে জামায়াতের বিজয় র‌্যালি ও সমাবেশ যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করেছে তাদের পরিণতি ভালো হয়নি : রুমিন ফারহানা শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সারদায় প্রশিক্ষণরত ২৫ এএসপিকে শোকজ বিজয় দিবসে আখাউড়ায় বাংলাদেশ-ভারত সেনাবাহিনীর শুভেচ্ছা বিনিময়

সকল