ব্রাজিলের চেনা প্রতিপক্ষ মেক্সিকো
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ জুলাই ২০১৮, ১১:২৬, আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮, ১২:০০
রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছে তারা। ফলাফল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নর্ক আউটে পৌঁছা। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় তারা মুখোমুখি হবে মেক্সিকোর। উত্তর আমেরিকার এই দেশ খুবই পরিচিত প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের। বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশন ও প্রীতি ম্যাচে মিলিয়ে মোট ২৯ বার মুখোমুখি হয়েছে দল দুটি। ২০১৪ বিশ্বকাপেও মেক্সিকোর মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেই ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। তবে আজ নিশ্চয়ই সেলেকাও এবং এল ট্রায়োরা এই ফলাফলের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাইবে না। কারণ দ্বিতীয় পর্বে একটি দলকে জয়ী হতেই হবে। সেটি টাইব্রেকারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলেও।
কিন্তু তিতের ব্রাজিল তাদের খেলায় যে গতি ফিরে পেয়েছে সেটিকে ধরেই মেক্সিকানদের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়েই জয়ী হতে চায়। নিজেদের শেষ ম্যাচে পরাজিত হয়ে নিজেদের সব ভালো কাজকেই যেন ধ্বংস করে দিয়েছে মেক্সিকো। জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জয়ী হয়ে তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথেই ছিল কিন্তু শেষ ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়ে গ্রুপ এফ থেকে দ্বিতীয় স্থান নিয়েই তারা শেষ ষোলতে জায়গা করে নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জার্মানি জয় পেলেই হুয়ান কার্লোস অসারিও দলের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হয়ে জার্মানি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হলে মেক্সিকো রাউন্ড সিক্সটিনে জায়গা করে নেয়।
মেক্সিকান অধিনায়ক গুয়ার্দাদো মনে করছেন, দ্বিতীয় পর্বে তাদের দেশ খুব একটা অপরিচিত এবং শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি। ব্রাজিল যে তাদের অনেক চেনা প্রতিপক্ষ এবং নেইমারের দলের বিপক্ষে তাদের জয়ের রেকর্ডও আছে। সেলেকাওরা গ্রুপ পর্বে খুব একটা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ পায়নি কিন্তু তারপরও পেলের ব্রাজিল সুইজারল্যান্ড ও কোস্টারিকার বিপক্ষে গড়পড়তা খেলা দেখিয়ে তাদের ভক্ত-সমর্থকদের বেশ হতাশই করেছে। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার আশায় থাকা এবং ইউরোপের উঠতি ফুটবল শক্তিগুলোর একটি সার্বিয়ার বিপক্ষে বেশ ভালো পারফরম করে ২-০ গোলের জয় দিয়ে রাউন্ড অব সিক্সটিন নিশ্চিত করে হাফ ছেড়ে বাঁচে।
রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে ব্রাজিলের হয়ে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তাদের সুপারস্টার নেইমার। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে এখনো তার ঝলক তেমনভাবে দেখা যায়নি এবং আঘাতের অভিনয় ও কান্না দেখিয়ে ইতোমধ্যেই নিজেকে কিছুটা বিতর্কিত করে ফেলেছেন বিশ্বরেকর্ড ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যোগ দেয়া নেইমার। তার অভাবটা বেশ ভালোভাবেই চলতি বিশ্বকাপে পূরণ করে চলেছেন লিভারপুল থেকে গত মওসুমেই অনেকটা নীরবেই কাতালান ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দেয়া ফিলিপে কুতিনহো। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলের হতাশজনক ড্রয়ের ম্যাচে একমাত্র গোলটি ছিল কুতিনহোরই। কোস্টারিকার বিপক্ষে একটি গোল এবং সার্বিয়ার ম্যাচে পাওলিনহোকে গোল করতে সহায়তা করে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের সমকক্ষতা অর্জন করেছেন কুতিনহো। পরপর তিন ম্যাচে গোল অথবা গোলে সহায়তা করে ১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপ থেকেই এই রেকর্ডের একক মালিক ছিলেন পেলে। কোস্টারিকার বিপক্ষে ডেডলক ভঙ্গ করার কৃতিত্বও কুতিনহোরই। বর্তমানের ন্যু ক্যাম্প ও বার্সেলোনায় খেলা ও সাবেক লিভারপুলের এই তারকা সেলেকাওদের হয়ে সর্বশেষ সাত ম্যাচের ছয়টিতেই গোল করেছেন। ব্রাজিলের হয়ে নেইমার থাকলেও মেক্সিকোর বিপক্ষে আলোচনায় থাকবেন কুতিনহোও।
এল ট্রায়োরা জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে নিজেদের গ্রুপ থেকে দারুণ সূচনা করেছিল কিন্তু সুইডেনের বিপক্ষে ০-৩ গোলের পরাজয় তাদের রাউন্ড অব সিক্সটিনে আসাটাকেই অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু জার্মানির পরাজয় কোরিয়ার বিপক্ষে তাদের শেষ ষোলতে নিয়ে এসেছে। ১৯৫৪ বিশ্বকাপের পর থেকে জার্মানির দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার রেকর্ডটিও ভেঙে গেল।
ব্রাজিলের কোচ তিতে তার প্রথম একাদশে খুব একটা পরিবর্তন আনবেন না। পাওলিনহো ও ফার্ন্দাদোনহিকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামাতে পারেন তিতে। মার্সেলো আঘাত পাওয়ার তার বদলি খেলোয়াড় পাওয়াটা তিতের জন্য কঠিনই হয়ে দাঁড়াল। ড্যানিলোর ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বে খেলেছিলেন ফ্যাঙ্গনার। তাকেও মেক্সিকোর বিপক্ষে দেখা যেতে পারে। ব্রাজিল মেক্সিকোর বিপক্ষে ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলবে।
হুয়ান কার্লোস অসারিও দলের ইনজুরি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই এবং সুইডেনের বিপক্ষের প্রথম একাদশই দেখা যেতে পারে ব্রাজিলের বিপক্ষে। আক্রমণভাগে লোজানো, ভেলা এবং হারনানদেজ গ্রুপ পর্বে নিজেদের সব ম্যাচেই খেলেছে এবং ব্রাজিলের বিপক্ষেও তাদের দেখা যাবে। কোচ অসারিও দলকে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলাবেন। সামারা এরিনায় সোমবার এই দুই দল ২৯তম বার মুখোমুখি হবে। চার বছর আগে নিজেদের দেশে ব্রাজিল মেক্সিকোর সাথে গোলশূন্য ড্র করেছিল। সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিল ২-০ গোলে জয়ী হয়েছিল উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর বিপক্ষে। এর আগের ২৮ লড়াইয়ে সেলেকাওরা জয় পেয়েছে ১৬ ম্যাচে। মেক্সিকানরা আট ম্যাচে জয়ী হয়েছে এবং চারটি ম্যাচ দুই দেশের মাঝে ড্র হয়েছে। দুই দেশ একে-অপরের পরিচিত প্রতিপক্ষ হলেও এবং নিজেরা একে-অপরের বিপক্ষে এগিয়ে রাখলেও সোমবার সামারা এরিনায় যে দল ভালো খেলবে তাদেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আরো পড়ুন : ডু আর ডাই ম্যাচ নিয়ে ব্রাজিল কোচের টেনশন
ব্রাজিলের কোচ তিতে ব্যাস্ত এখন দল সাজানো নিয়ে। ইনজুরি রয়েছে দলে। এতে কিভাবে দল সাজাবেন ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ মেক্সিকোর বিপক্ষে সেটা নিয়ে টেনশন রয়েছে। এর মধ্যে ভাল খবরও যেমন রয়েছে। তেমনি আছে দুশ্চিন্তাও।
রাইটব্যাক ড্যানিয়েল দানিলো সেরে উঠেছেন। মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলতে পারবেন তিনি। তবে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মারসেলোকে নিয়ে টেনশন রয়ে গেছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে তাকে নামানো যাবে কি-না এটাই তিতে’র বড় টেনশন।
ডগলাস কস্তা ইতিমধ্যে সাইড লাইনে চলে গেছেন। রোববার দলের ডাক্তার দিয়েছেন এ সকল খবর।
টিম ডাক্তার রডরিগো লাসমার জানিয়েছেন,‘দানিলো তার থাই ইনজুরিটা ইতিমধ্যে কাভার করতে সক্ষম হয়েছেন। তাকে নিয়ে আর টেনশন নেই। কোচ চাইলে মেক্সিকোর বিপক্ষে শুরু থেকেই তাকে রাখা যাবে। তবে মার্সেলোর সমস্যা রয়েছে। তার ব্যাপারে এখনও কোনো ক্লিয়ারেন্স দেয়া যাচ্ছেনা।
সার্বিয়ার বিপক্ষে খেলে ওই সমস্যা হলেও সে বেশ ভালই রিকাভারিং করছেন। কিন্তু অবস্থা সেভাবেই এখনও উন্নত না। তার ফিটনেসের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। জুভেন্টাসের উইংগার কস্তা খুব ভালই উন্নতি করছেন। কিন্তু মেক্সিকোর বিপক্ষে সামারাতে অনুষ্টিত ম্যাচে তাকে আশা করা যাবেনা।
মারসেলো অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন বটে। তার অবস্থাও আগের চেয়ে বেশ ভাল। আমরা আশা করছি তাকে ওই ম্যাচে খেলানো যাবে- কলেছেন টিম ডাক্তার। তবে সেটা কতক্ষন সেটা বলেননি।
একজন ফুটবলার শতভাগ ফিট না থাকলে তার উপর সেভাবে আস্থা রাখা যায়না। কিন্তু হারলেই যেখানে বিদায় এমন ম্যাচে অভিজ্ঞ ফুটবলারদেরও বড্ড প্রয়োজন। ম্যাচের আসে সর্বশেষ পর্যবেক্ষন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে। ব্রাজিল ‘ই’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মেক্সিকোকে পাচ্ছে শেষ ১৬ তে। যেখানে প্রতিপক্ষ দলটি ‘এফ’ গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে উঠেছে।