ডু আর ডাই ম্যাচ নিয়ে ব্রাজিল কোচের টেনশন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০১ জুলাই ২০১৮, ১৯:৫৩
ব্রাজিলের কোচ তিতে ব্যাস্ত এখন দল সাঝানো নিয়ে। ইনজুরি রয়েছে দলে। এতে কিভাবে দল সাঝাবেন ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ মেক্সিকোর বিপক্ষে সেটা নিয়ে টেনশন রয়েছে। এর মধ্যে ভাল খবরও যেমন রয়েছে। তেমনি আছে দুশ্চিন্তাও।
রাইটব্যাক ড্যানিয়েল দানিলো সেরে উঠেছেন। মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলতে পারবেন তিনি। তবে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মারসেলোকে নিয়ে টেনশন রয়ে গেছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে তাকে নামানো যাবে কি-না এটাই তিতে’র বড় টেনশন।
ডগলাস কস্তা ইতিমধ্যে সাইড লাইনে চলে গেছেন। রোববার দলের ডাক্তার দিয়েছেন এ সকল খবর।
টিম ডাক্তার রডরিগো লাসমার জানিয়েছেন,‘দানিলো তার থাই ইনজুরিটা ইতিমধ্যে কাভার করতে সক্ষম হয়েছেন। তাকে নিয়ে আর টেনশন নেই। কোচ চাইলে মেক্সিকোর বিপক্ষে শুরু থেকেই তাকে রাখা যাবে। তবে মার্সেলোর সমস্যা রয়েছে। তার ব্যাপারে এখনও কোনো ক্লিয়ারেন্স দেয়া যাচ্ছেনা।
সার্বিয়ার বিপক্ষে খেলে ওই সমস্যা হলেও সে বেশ ভালই রিকাভারিং করছেন। কিন্তু অবস্থা সেভাবেই এখনও উন্নত না। তার ফিটনেসের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। জুভেন্টাসের উইংগার কস্তা খুব ভালই উন্নতি করছেন। কিন্তু মেক্সিকোর বিপক্ষে সামারাতে অনুষ্টিত ম্যাচে তাকে আশা করা যাবেনা।
মারসেলো অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন বটে। তার অবস্থাও আগের চেয়ে বেশ ভাল। আমরা আশা করছি তাকে ওই ম্যাচে খেলানো যাবে- কলেছেন টিম ডাক্তার। তবে সেটা কতক্ষন সেটা বলেননি।
একজন ফুটবলার শতভাগ ফিট না থাকলে তার উপর সেভাবে আস্থা রাখা যায়না। কিন্তু হারলেই যেখানে বিদায় এমন ম্যাচে অভিজ্ঞ ফুটবলারদেরও বড্ড প্রয়োজন। ম্যাচের আসে সর্বশেষ পর্যবেক্ষন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে। ব্রাজিল ‘ই’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মেক্সিকোকে পাচ্ছে শেষ ১৬ তে। যেখানে প্রতিপক্ষ দলটি ‘এফ’ গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন: ব্রাজিলকে হারিয়ে নক আউটের খরা কাটাতে চায় মেক্সিকো
পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে শেষ ১৬’র লড়াইয়ে আগামীকাল মাঠে নামছে মেক্সিকো। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও রানার্স-আপ আর্জেন্টিনার বিদায়ে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিলকে পরাজিত করে নক আউট পর্বের খরা কাটানোর এর থেকে ভাল সুযোগ আর হতে পারে না বলেই বিশ্বাস করেন মেক্সিকান অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার আন্দ্রেস গুয়ারড্রাডো।
কালকের ম্যাচে জিততে পারলে অন্তত ২৪ বছর পরে মেক্সিকানরা নিজেদের কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস পাবে। আগের ৬টি বিশ্বকাপেই এল ত্রি’রা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল। বিশেষ করে চার বছর আগে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষের দুই মিনিট আগ পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও ইনজুরি টাইমে ২-১ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার স্মৃতি মেক্সিকো এখনো ভুলতে পারেনি।
এর আগে ১৯৭০ ও ১৯৮৬ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছিল মেক্সিকো, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের তাদের সেরা পারফরমেন্স। তবে ১৯৭০’র আসরে ইতালির কাছে ৪-১ ও ৮৬’ সালে পশ্চিম জার্মানির সাথে নির্ধারিত সময় গোলশূন্য ড্র করেই পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৪-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে শেষ আট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
বিপরীতে ব্রাজিল শেষ ছয় আসরে অন্তত শেষ আট পর্যন্ত খেলেছে। এর মধ্যে তিনটির ফাইনালে পৌঁছে দুটির শিরোপা জয় করেছে। রাশিয়ায় ষষ্ঠবারের মত শিরোপা জয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই তিতের দলকে সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে মানা হচ্ছে। কিন্তু সেলেসাওদের বিপক্ষে নিজেদের প্রত্যাশাকে প্রাপ্তিতে রূপ দেয়ার স্বপ্নে বিভোর মেক্সিকানরা।
জয় ভিন্ন অন্য কোন কিছুই ভাবছে না পুরো দল, এমন আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়ে গুয়ারড্রাডো বলেছেন, ‘এখানে আমরা কোনো ধরনের কারণ দেখাতে চাচ্ছি না। আমরা যদি জিততে পারি তবে সবকিছুই আমাদের পক্ষে আসবে। আমরা যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ১৬’তে সুইজারল্যান্ডের মোকাবেলা করতাম, (সুইসদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি) তাদেরকে হারালে মানুষ ততটা উচ্ছ্বসিত হতো না, যতটা ব্রাজিলকে হারালে হবে। সে কারণেই ব্রাজিলের বিপক্ষে একেবারে সঠিক সময়ে আমরা মাঠে নামছি। তারা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন, ম্যাচটা দারুণ উপভোগ্য হবে। ফুটবল আমাদের সামনে যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা নিয়ে আমরা দারুণ উত্তেজিত। এর থেকে ভাল সুযোগ আর হতে পারে না।’
ম্যাচ পূবর্বতী সংবাদ সম্মেলনে গুয়ারড্রাডো বিশেষ করে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারকে সামনে নিয়ে এসেছেন। তার মতে নেইমার নিজের থেকেই ফাউলকে কাছে টেনে আনে ও মাঠে পড়ে যান। তবে ব্রাজিলের রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কাসেমিরো বলেছেন সব ধরনের চাপ ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করেই নেইমার মাঠে নামেন। তারকা এই মিডফিল্ডার বলেন, ‘নেইমারই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেন। প্রথম ম্যাচে সবাই যেখানে নিয়মমাফিক ম্যাচ খেলেছে সেখানে নেইমার বারবার নিজেদের প্রমাণ করেছেন। সার্বিয়ার বিপক্ষেও সে দারুণ পারফর্ম করেছে। সে জানে কিভাবে চাপের মধ্যেও স্বাভাবিক ভাবে খেলতে হয়। সে কারণেই সে নেইমার, ব্রাজিলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। দীর্ঘ সময় ধরে সে সুপারস্টার থাকবে।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে সুইডেনের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়ে এফ-গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে নক আউট পর্বে গেঠে মেক্সিকো। বহিষ্কারাদেশের কারণে তাদের দলে থাকছে না সেন্টার ব্যাক হেক্টর মোরেনো। অন্যদিকে সার্বিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১০ মিনিট পরে কাঁধের পেশীর টানের কারণে মাঠ ত্যাগ করা মার্সেলোকে নিয়ে এখনো দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে ব্রাজিল।
বেশিরভাগ মেক্সিকান নেইমার ও কুতিনহোকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তাদের ভুলে গেলে চলবে না ব্রাজিলে আছেন পাওলিনহো। সার্বিয়ার বিপক্ষে তার গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল সেলেসাওরা।
এর আগে ব্রাজিল ও মেক্সিকো একে অপরের বিপক্ষে ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাজিল জিতেছে ২৩ বার ও মেক্সিকো ১০ বার। এর আগে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে চারটি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি মেক্সিকো। ওই চার ম্যাচে মেক্সিকানরা একটি গোলও করতে পারেনি। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারেনি ব্রাজিল। এ পর্যন্ত গত ১৪টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে সেলেসাওরা। ২০১৭ সালের জুনে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তারা সর্বশেষ পরাজিত হয়েছিল (১-০)। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (৫৬) খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখনো শিরোপা জিততে পারেনি মেক্সিকো।