০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

আর্জেন্টাইনদের ধুয়ে দিলেন ম্যারাডোনা

ডিয়াগো ম্যারাডোনা - ছবি : এএফপি

আগেই বলেছিলেন, এই দল প্রথম রাউন্ডের গণ্ডি পার হতে পারবে না। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ‘মরতে মরতে বেঁচে গেছে’ লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা; কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েই দেখা গেছে তাদের আসল চেহারা। তাইতো ডিয়াগো ম্যারাডোন এবার রীতিমতো ধুয়ে দিলেন আর্জেন্টিনা দলকে।

শনিবার ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে পরাজিত হওয়ার পর শেষ হয়ে হয়েছে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। দেশটির ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ফুটবল ঈশ্বর খ্যাত ডিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘লিওনেল মেসিকে ছাড়া এই দলটা আর্জেন্টিনাই নয়, (যেন অন্য কোন সাধারণ টিম)।

এর আগেও সাম্পাওলির দলের খেলোয়াড়দের সামর্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ম্যারাডোনা। বারবারই বলেছন, এই দলে মেসি ছাড়া অন্যদের ওপর তেমন ভরসা রাখতে পারছেন না তিনি। কাজানে ফ্রান্সের কাছে হারার পর টেলেসার টিভি চ্যানেলকে ম্যারাডোনা বলেন, চমকে দেয়ার মতো কিছুই দেখা যায়নি এই ম্যাচে। তিনি বলেন, মাঠে নয়, আমরা যেন সিনেমা দেখতে এসেছি। যেখানে মৃত্যুর ঘোষণা পাঠ করা হবে এবং তাই ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘ফ্রান্স মেসিকে ও আর্জেন্টিনার মাঝমাঠকে বোতলবন্দী দকরে রেখেছে। তাই সে তাদের কাছ থেকে সাপোর্ট পায়নি। মেসিকে ছাড়া এই দলটা যেন আর্জেন্টিনাই নয়। আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম তাই ঘটেছে। আমরা যা ভাবতাই তাই হয়েছে।
ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার শিরোপা খরা নিয়ে বলেন, ‘আরো একটি বিশ্বকাপ শেষ হলো এবং আমরা খালি হাতে বিদায় নিলাম। এটা খুবই খারাপ কথা যে, আর্জেন্টিনা সুসংহত দল হয়ে খেলতে পারলো না।

সাম্পাওলি খেলার কৌশলের ধরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, আমরা দেখেছি পাভোন, মেসি ও ডি মারিয়াকে আক্রমণে রাখা হয়েছে। তারা হয়তো ভালো প্লেমেকার কিন্তু তারা প্রকৃত স্ট্রাইকার নয়’।

আরো পড়ুন : তারপরেও কেন পারলেন না মেসি

ক্লাব ফুটবল যত জনপ্রিয়ই হোক সেটা বিশ্বকাপের ধারে কাছেও না। কারণ চার বছর পরপর শুধু একটি মৌসুমেই পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ ফুটবলের খোঁজ রাখেন। কারণ বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সেরা লড়াই দেখার মঞ্চ এই বিশ্বকাপ। আর এখানে এসেই লিওনেল মেসি নামটা একটু নিস্প্রভ। ক্লাব ফুটবলে তিনি যতটা ডানা মেলে উড়ে বেড়ান, বিশ্বকাপের মঞ্চে এসে তেমনটা দেখা যায় না। ২০০৬ থেকে ২০১৮ সময়ে টানা চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন এই তারকা। এরমাঝে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু তার নামের মতো খেলা তিনি কখনো বিশ্বকাপের মঞ্চে উপহার দিতে পারেননি। এই অবস্থায় বরাবরই যুক্তি ছিল মেসি তার সতির্থদের সহযোগিতা তেমন পাননি।

কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ আর্জেন্টিনার বর্তমান কোচ। শনিবার ফ্রান্সের সাথে ৪-৩ গোলে হেরে রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর হোর্হে সাম্পাওলি বলেন, বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির সেরাটা বের করে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক কৌশলে চেষ্টা করেছি…তাকে ঘিরে, তার জন্য জায়গা তৈরি করে…সে যা করতে পারে তাকে তা করতে দেওয়ার জন্য আমরা সবকিছু ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি।’

‘মাঝে মধ্যে আমরা তা করতে পেরেছি, মাঝে মধ্যে পারিনি।’

গ্রুপে প্রথম দুই ম্যাচে ১ পয়েন্ট পাওয়ার পর কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে সাম্পাওলি ও তার শিষ্যরা। শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে নকআউট পর্বে ওঠার মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছিল দলটি। তবে পথচলাটা দীর্ঘ হলো না।

টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার পেছনে নিজের পাশাপাশি খেলোয়াড়দেরও কিছু দায় দেখছেন সাম্পাওলি। তার মতে, খেলোয়াড়দের ‘পরিষ্কার ধারণা' ছিল না যে তারা কি করছে। অবশ্য এখনই এসব নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি কোচ।

মাত্র ১৯ বছর বয়সে জার্মানি বিশ্বকাপ আসরে অভিষেক হয় আর্জেন্টাইন সেরা তারকা মেসির। তিন ম্যাচে অংশ নিয়ে আর্জেন্টাইন তারকা গোলের দেখা পেয়েছেন একটি, সঙ্গে একটি অ্যাসিস্টও ছিল। দল বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই।

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে অংশ নিয়ে মাত্র একটি গোলের দেখা পেয়েছেন মেসি। পূর্বের আসরের মতো দল বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে।

২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে মেসি কাটিয়েছেন দারুণ একটি আসর। সাত ম্যাচে চার গোল ও এক অ্যাসিস্টের মাধ্যমে দলকে পাইয়ে দিয়েছিলেন ফাইনালের টিকেট। যদিও ফাইনাল ম্যাচে শেষ মুহূর্তে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা জয়ের স্বাদ অপূর্ণ থেকে যায় মেসির কাছে। তবে টুর্নামেন্ট-সেরা হয়েছেন মেসিই।

২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পথচলা থেমে গেছে নকআউট পর্বে ফ্রান্সের কাছে হেরে। এই টুর্নামেন্টে মেসি পেয়েছেন মাত্র এক গোলের দেখা, সঙ্গে অ্যাসিস্ট ছিল দুটি।


আরো সংবাদ



premium cement