ডেনমার্কের চেয়ে এগিয়ে ক্রোয়েশিয়া
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০১ জুলাই ২০১৮, ১২:৫৯
বার্সেলোনা ও ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল তারকা ইভান রেকিটিচ সাবধানতা থেকেই মনে করছেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের ডেনমার্ক প্রথমবারের মতো ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে রাউন্ড অব সিক্সটিনেই। এই দুই দেশ একে অপরের মুখোমুখি হবে দ্বিতীয় পর্বে নিজহনি নভোগ্রাদে ১ জুলাই রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়। জালাটকো ডালিচের জন্য নিজহনি নভোগ্রাদ একটি সুখকর ভেন্যু। কারণ এখানেই আর্জেন্টিনাকে তারা ৩-০ গোলে হারিয়েছিল গ্রুপ পর্বে।
দ্বিতীয় পর্বে আত্মবিশ্বাসী ক্রোয়েশিয়া এবং কার্যকরী ডেনমার্কের লড়াইটি একেবারে সমানে সমান হওয়ার কথা। যদিও এই লড়াইয়ে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা ক্রোয়েশিয়াকে কিছু ব্যবধানে এগিয়ে রাখছেন কারণ তারা গ্রুপ পর্বে নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা এবং আইসল্যান্ডকে হারিয়ে শতভাগ জয়ের রেকর্ড নিয়ে রাউন্ড অব সিক্সটিনে এসেছে।
অপর দিকে ডেনমার্ক গ্রুপ পর্ব থেকে লড়াই করে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে এসেছে ফ্রান্সের পেছনে থেকে। ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় তারকা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে টটেনহাম হটস্পারের হয়ে খেলা ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন গ্রুপ পর্বে লেস ব্লুস নামে পরিচিত ফ্রান্সের বিপক্ষে কোনো গোলই করতে পারেননি এবং খেলাটিও গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডেনমার্কের ১-১ গোলের ড্রয়ে এরিকসন তার দেশের হয়ে দারুণ গোল করেছিলেন। রেকিটিচ মনে করেন মাঝমাঠে তারই পজিশনে খেলা এরিকসেনের দিকে তাদের একটু বেশি দৃষ্টি দিতে হবে নিজেরা রাউন্ড অব সিক্সটিন পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিতে।
রেকিটিচ বলেন, ‘ডেনমার্ক বেশ সুগঠিত। প্রতিপক্ষকে কিভাবে রুখতে হয় সেটা তাদের ভালো করেই জানা আছে। গ্রুপ পর্বে তারা বিপক্ষ দলকে কিছু সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে তারা সেই ভুল করবে না। ইউরোপ ও ফুটবলবিশ্বে বর্তমান সময়ে সেরাদের একজন এরিকসেন তাদের দলে আছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি বড় কারণ রয়েছে যেজন্য আমরা এক মাস ধরে পরিবারের বাইরে আছি। আমরা এই বিশ্বকাপে সব কিছু করতে চাই যেন ক্রোয়েশিয়া শিরোপা জয় করে।’
ডেনমার্ক গ্রুপ পর্বে মাত্র একটি জয় পেয়েছে পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলে যদিও তারা একটি প্রাণবন্ত দল। তাদের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বে একটি মাত্র গোল হয়েছে পেনাল্টি থেকে মাঠের খেলা বা আক্রমণ থেকে নয়। ডেনমার্কের মাঝমাঠের খেলোয়াড় টমাস ডিলানে মনে করেন এরিকসেন তার একটি শক্তিশালী আবহ নিয়ে আসতে পারবে যেন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এবং সেটা তাদেরকে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয় পেতে সাহায্য করবে। তিনি আরো বলেন, ‘গ্রুপ পর্বের প্রথম দুটি ম্যাচে আমরা কিছু কষ্ট ভোগ করেছি এবং এরিকসেন আমাদের থেকে আরো একটু বেশি।’
ক্রোয়েশিয়া রাশিয়া বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স। ক্রোয়েশিয়া রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সামনে এগিয়েছে তারা ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণ করেই তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল। ডেনমার্কের বিপক্ষে জয়ী হয়ে রেকিটিচ, মডরিচ ও মান্দজুকিচের দলের শেষ আটে জায়গা করে নেয়ার বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে। কারণ ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান দলটিকে বলা হচ্ছে তাদের ফুটবল ইতিহাসের শক্তিশালী দল ১৯৯৮ সালের দলটির মতো। এই বিশ্বকাপে তারা বেশ কয়েকটি গোল করেছে এবং তাদের রক্ষণভাগও বেশ শক্তিশালী ছিল।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের তিন ম্যাচে মাত্র একটি গোল তাও পেনাল্টি থেকে হজম করেছে ডেনমার্ক। রাউন্ড অব সিক্সটিনে তাই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রতিপক্ষ থেকে আরো একটি কিন শিট আশা করছে ডেনমার্ক। ডেনমার্ক বেশ শক্তিশালী এবং সুগঠিত দল কিন্তু খেলার শেষ ভাগে তাদের চাপ কমিয়ে দেয়ার অভ্যাস আছে, যা ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তাদের বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই দুটি দেশই তাদের গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ থেকে মাত্র একটি মাত্র গোল খেয়েছে। এবং সেই দুটি গোলও এসেছে পেনাল্টি থেকে। গোল রুখতে এবং করতে মরিয়া এই দুই দেশের লড়াই অনেকটাই তাদের মাঝে ট্যাকটিকাল বা কৌশলের লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে। কে প্রথমবারের মতো সেটি করতে পারে সেটিই এখন মূল প্রশ্ন। কোনো খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত মুন্সিয়ানা কিংবা কোনো বড় ভুল দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। যদিও দুই দেশের মাঝে গোল উৎসব আশা করা হচ্ছে না। কম গোলই হবে তাদের মাঝে এবং বিজয়ী দল অল্প গোলের ব্যবধানেই জয়ী হতে পারে। এই দুই দলের লড়াইকে তাই আত্মবিশ্বাসী ক্রোয়েশিয়া এবং কার্যকরী ডেনমার্কের লড়াই বলাই যেতে পারে।
৯০ মিনিটের বা এর পর খেলা যতটুকু গড়ায় সেই সময় পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর খেলা আশা করা হচ্ছে। ইভান রেকিটিচ, মডরিচ কিংবা মান্দজুকিচের মতো সেরা তারকা ক্রোয়েশিয়া দলে থাকলেও রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্বে তাদের সাথে আরো একটি নাম যোগ হতে পারে ইভান পেরিসিচ। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সে জয়সূচক গোলটি করে। আক্রমণভাগের এই তারকার গতি ও ক্ষিপ্রতা চোখে পড়ার মতো। এরিকসেনে বাইরে ডেনমার্কের হয়ে আরো একজন নজর কাড়তে পারেন তার নাম আন্দ্রেয়াস কর্নিলিয়াস। মাঝমাঠে তার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ ডেনমার্কের বেশির ভাগ গোলই আসতে পারে প্রতিপক্ষের ডি বক্সের ভেতর থেকে তাই এরিকসেনের কাছে বল জোগান দেয়ার ব্যাপারে কর্নিলিয়াসের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এবার নিয়ে এই দুই দেশ একে অপরের বিপক্ষে ষষ্ঠবারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ক্রোয়েশিয়া এবং ডেনমার্ক উভয়ই দুটি করে জয় পেয়েছে এবং একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।