ডিফেন্স নিয়ে সমস্যা স্পেনের
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ০১ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৯
২০১০ এর বিশ্ব চাম্পিয়ন তারা। দলে আছেন দুই বিশ্বখ্যাত ক্লাবে বার্সেলোনা রিয়ার মাদ্রিদের নামকরা ডিফেন্ডাররা। সার্জিও রামোস, জেরার্ড পিকে, কারভাহাল, জর্ডি আলভারা আছেন এই তালিকায়। দল হিসেবে ফেবারিটের তালিকায়। মানে সম্ভাব্য শিরোপা জয়ী তারা। অথচ এই স্পেনই এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তিন খেলায় হজম করেছে ৫ গোল। পর্তুগালের বিপক্ষে এই জন্যই জয়ের দেখা মেলেনি তাদের। শেষ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তো মরক্কো দুই দফা লিডে পায় তাদের বিপক্ষে। ইনজুরি টাইমে সমতা এনে কোনো মতে দ্বিতীয় রাউন্ডে কোয়ালিফাই করা স্প্যানিশদের। ডিফেন্সের এই ভুলেই তাদের হালির উপর গোল হজম। আজ নক আউট পর্বে রাশিয়ার সামনে এই ভঙ্গুর রক্ষণ লাইনের স্পেন। প্রথম রাউন্ডের এই সমস্যা উৎরাতে না পারলে হয়তো অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে রাশিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হতে পারে সাবেক বিশ্বসেরাদের। অঘটন বলা হলো এই কারণে যে, স্পেনের র্যাঙ্কিং ১০। আর রাশিয়ার ৭০।
স্বাগতিকরা এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছে দারুণভাবে। প্রথম ম্যাচে ৫-০তে উড়েয়ে দেয় সৌদি আরবকে। পরের ম্যাচে ৩-১ এ জয় মিসরের বিপক্ষে। তাদের ডেনিশ চেরিসেভ তিন ম্যাচে করেছেন তিন গোল। এর মধ্যে সৌদি আরবের বিপক্ষে বল জালে পাঠান দুই বার। মিসরের বিপক্ষে একবার। আরতেম জুবার একটি করে গোল এই দুই দলের বিপক্ষে। উরুগুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে অবশ্য দলে কিছু পরিবর্তন আনেন রুশ কোচ। ফলে উরুগুয়ের কাছে হার ৩-০তে। সুতরাং দারুণ ফর্মে থাকা এই দুই রুশ আজ মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে স্প্যানিশ রক্ষণভাগের জন্য। শেষ ষোলতে আসা দলগুলোর মধ্যে রাশিয়া সেরা তিন দলের একটি যারা প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্পেনের ডিফেন্ডার দানি কারভাহালও স্বীকার করলেন তাদের রক্ষণভাগের দুর্বলতার কথা। তার বক্তব্য, আমরা গ্রুপ পর্বে যে গোলগুলো আমরা হজম করেছি এর মধ্যে পর্তুগালের দুই গোল ছিল সেট পীস থেকে। বাকি গোলগুলোতে প্রতিপক্ষের কৃত্বিতের চেয়ে ভুল ছিল আমাদের রক্ষণভাগের। আমরাই তাদের সহজে গোল করার রাস্তা করে দিয়েছি। তার মতে, এই ভুলগুলো হয়েছে মূলত মনযোগের অভাব। যোগ করেন, এখন নক আউট পর্বে এই সমস্যার সমাধান না হলে বিদায় নিতে হতে পারে আমাদের।
কোচ ফার্নান্ডো হিয়েরোও এই বিষয়ে সতর্ক করলেন তার শিষ্যদের। মরক্কোর সাথে ম্যাচে পর তিনি জানান, আমরা তিন ম্যাচে পাঁচ গোল খেয়েছি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি খেলোয়াড়দের বলেছি এই ভুলের পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে আসর থেকে বিদায় নিতে হবে।
রুশ ডিফেন্ডার ইলা কুতেপভ অবশ্য মনে করেন না সমস্যা অব্যাহত থাকবে তাদের আজকের প্রতিপক্ষদের রক্ষণ প্রাচীরে। জানান, তাদের তো বার্সেলোনা এবং রিয়ার মাদ্রিদে খেলা অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার আছে। ঠিকই সংশোধন করে নেবে তারা।
উল্লেখ্য, স্পেন ২০০৮ ও ২০১২ এর ইউরো এবং ২০১০ বিশ্বকাপেও এতো গোল খায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিশ্বজয়ের নেপথ্য ছিল দুর্ভেদ্য ডিফেন্স লাইন। এবার পর্তুগালের সাথে ম্যাচের আগে গত দুই বছরে স্পেন মাত্র তিন গোল হজম করেছিল। গত নভেম্বরে এই রাশিয়াই তাদের জালে বল পাঠায়।
এবারের বিশ্বকাপে স্পেনের মতোই গ্রুপ পর্বে পাঁচ গোল হজম করেছে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড, কোস্টারিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং পোল্যান্ড। এছাড়া মিসর ছয়, সৌদি আরব সাত তিউনিশিয়া আট এবং সর্বাধিক ১১ গোল খেয়েছে পানামা।
আরেকটি তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নই তাদের ট্রফি জয়ের পথে চারটির বেশি গোল খায়নি।
আরো পড়ুন : আয়োজক রাশিয়া ‘চ্যালেঞ্জ’ স্পেনের
৬ ম্যাচের একটিতেও জেতেনি রাশিয়া। ৪টিতেই জয় স্পেনের। ড্র হয়েছে দল দু’টির মধ্যকার অন্য দুই খেলা। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে স্পেনের বিপক্ষে জয়শূন্য রাশিয়া। তাদের মধ্যে বিগ আসরের সর্বশেষ খেলায়ও একচ্ছত্র আধিপত্যে জয়োৎসব স্প্যানিশদের। ২০০৮ সালের ইউরোয় তারা ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় রাশানদের। সঙ্গত কারণেই দলটির বিপক্ষে রাউন্ড অব সিক্সটিনের খেলায় হট ফেবারিট স্পেন। আজ মাঠের লড়াইয়ে নামছে দল দু’টি। মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রাশিয়া মুখোমুখি হচ্ছে ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে দল দু’টির মধ্যকার দ্বৈরথ।
আয়োজক হিসেবে ইতোমধ্যে ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে স্বাগতিক রাশিয়া। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউটে খেলার গৌরব অর্জন দলটির। মূল টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি প্রত্যাশিত না হলেও এ গ্রুপের প্রথম ২ ম্যাচ শেষেই নিশ্চিত হয় রাশানদের ঐতিহাসিক নক আউটের অংশগ্রহণ। গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের পারফরম্যান্স কিছুটা হলেও হতাশ করেছে ভক্তদের। তবে উরুগুয়ের কাছে তাদের ৩-০ গোলের অসহায় হারের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ ভূমিকায় প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই দশজনের দলে পরিণত হওয়ার ঘটনা।
গ্রুপের শেষ খেলার দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেলে আজ ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ রাশানদের সামনে। যদিও তারা আন্ডার ডগ হিসেবে মুখোমুখি হচ্ছে স্পেনের। শক্তি ও দলীয় ভারসাম্য বিচারে আয়োজক রাশিয়ার চেয়ে ঢের এগিয়ে স্প্যানিশ ফুটবল। সহজ জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার রেসেও দলটি হট ফেবারিট। তবে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপে আয়োজকদের বাজিমাত করার দীর্ঘ ইতিহাস বাড়তি প্রেরণা হবে রাশানদের। স্থানীয় দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে স্বাগতিক ফুটবলারদের সর্বোচ্চ নৈপুণ্য উজাড় করে দেয়ায়। সর্বোপরি ইতোমধ্যে প্রত্যাশার গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে রাশিয়ার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স। রাউন্ড অব সিক্সটিনের খেলায় কিছুই হারানোর নেই দলটির ফুটবলারদের। স্নায়ুচাপ মোকাবেলার বাড়তি টেনশনও থাকছে না রাশান ড্রেসিংরুমে।
নিজেদের শ্রেষ্ঠ ফুটবল ম্যাচ খেলার টার্গেটেই স্বাগতিকেরা মাঠে নামবে স্পেনের মোকাবেলায়। গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচের নৈপুণ্যে নক আউট নিশ্চিত হয় রাশিয়ার। ২ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৮ গোল প্রবেশের রাশান উৎসব সবাইকে হতবাক করেছে।
আক্রমণভাগে আয়োজক রাশিয়ার বাজির ঘোড়া অ্যাটাকার চেরিশেভ। গ্রুপ পর্বে তিন গোল করা তারকার ওপর কড়া নজর রাখতে ব্যর্থ হলে মাশুলও গুনতে হবে স্প্যানিশদের। মন্দ নয় রাশিয়ার রক্ষণভাগের ভারসাম্যও। প্রথম দুই খেলায় ১ গোল হজম করেছে দলটি। অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আকিনেভ কঠিন মুহূর্তে পারফর্ম করার যোগ্যতা রাখেন।
সবার ফেবারিট স্পেনের গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্স প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি ভক্তদের।
৩ মাচের দু’টিতে ড্র ও একটিতে জয়ের পরও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ইউরোপের লা রোজা খ্যাত স্পেন। শেষ ষোলোয় দলটির পারফরম্যান্সের উন্নতি দেখতে মুখিয়ে ভক্তরা। অঘটন থেকে রক্ষায় পারফেক্ট ফুটবলের কোনো বিকল্প নেই স্প্যানিশদের সামনে। দলটির জন্য স্বস্তির হচ্ছে আক্রমণভাগে প্লে-মেকার ইসকো ও স্ট্রাইকার কস্টার মধ্যকার দারুণ বোঝাপড়া। লা রোজা জার্সিতে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৩ গোলও করেছেন কস্টা। তাকে কড়া নজরে রাখার প্ল্যানে সাফল্য-ব্যর্থতায় অনেকাংশেই নির্ধারিত হবে আয়োজক রাশিয়ার বিশ্বকাপ ভাগ্য!