আর আর্জেন্টিনা দলে খেলবেন না মাচেরানো
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ জুন ২০১৮, ২২:৩৮, আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮, ২২:৪৩
ফ্রান্সের সাথে হেরে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে আর্জেন্টিনা। এই পরাজয়কে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেননি আর্জেন্টিনার মাঝ মাঠের কাণ্ডারি হাভিয়ের মাচেরানো। তাই ম্যাচ শেষের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আর্জেন্টিনার জাতীয় দলকে বিদায় জানালেন তিনি।
‘এখন জাতীয় দলকে বিদায় জানানোর সময়। কোন একদিন হয়তো এই ছেলেগুলোই আর্জেন্টিনার হয়ে কিছু জয় করবে’, কান্নাভেজা কণ্ঠে ম্যাচ শেষে টিওয়াইসি স্পোর্টসে বলেন মাচেরানো।
২০০৩ সালে উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক হয় মাচেরানোর। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। দ্রুতই আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের কাণ্ডারি হয়ে ওঠেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ১৪৬টি ম্যাচ খেলে ৩টি গোল করেছেন সাবেক এই বার্সা তারকা।
আরো পড়ুন : আর্জেন্টিনার মতো দলকে হারানো বিশেষ কিছু : ফ্রান্স
ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনার মধ্যকার হাই ভোল্টেজ ম্যাচ দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের নক আউট পর্ব শুরু হচ্ছে আজ। কাজানে অনুষ্ঠিত ম্যাচটির মাধ্যমে অতীত অভিজ্ঞতা ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় ফ্রান্স। এর আগে বিশ্বকাপে কিংবা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করতে পারেনি ফ্রান্স। কিন্তু সমালোচকদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে পেছনে ফেলে নিজেদের প্রমাণে এবার বদ্ধ পরিকর লেস ব্লুজরা।
যদিও এ পর্যন্ত রাশিয়া বিশ্বকাপে দিদিয়ের দেশ্যমের দল সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি। তারপরেও অবশ্য তিন ম্যাচে সাত পয়েন্টসহ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই নক আউট পর্বে গেছে ফ্রান্স। মঙ্গলবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে ফ্রান্স ডেনমার্কের সাথে গোলশূন্য ড্র করে প্রথম রাউন্ড শেষ করেছে। আর এতেই গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে ডেনমার্কের পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়েছে।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে ফ্রান্স যে দারুণ সতর্ক অবস্থায় আছে তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সেন্টার ব্যাক স্যামুয়েল উমতিতি। নক আউট পর্বের আগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটা সময়ই উমতিতিতে তার বার্সেলোনা সতীর্থ লিওনেল মেসিকে নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দুই দলের লড়াইয়ে সবার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার। তবে উমতিতি মনে করেন সব কিছুর পরে ফলাফলই মূখ্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নতি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কারণ আমরা জানি এটা আমাদের পক্ষে করা সম্ভব। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ম্যাচে জয়ী হওয়া। অনেকেই আমাদের খেলা নিয়ে সন্তুষ্ট না হলেও ম্যাচে জিততে পারলে তারাও খুশি হবে। আমি আর শুনতে চাই না যে আমাদের মধ্যে ফুটবলীয় দক্ষতার অভাব রয়েছে। আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে সামনে এগিয়ে যাওয়া অবশ্যই পুরো দলকে বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাবে। এখন আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য, সামনে এগিয়ে যাওয়া। আমার কাছে ব্রাজিল, পেরু কিংবা মেক্সিকোকে বিদায় করা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার থেকে আর্জেন্টিনার মত দলকে বাদ দিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়া সত্যিই বিশেষ কিছু।’
ফ্রান্সের নক আউট পর্বটা সহজ হলেও আর্জেন্টিনার জন্য সেটা ছিল দারুণ নাটকীয়। গ্রুপের শেষ ম্যাচে যেখানে জয় ভিন্ন বিকল্প কিছু ছিল না সেখানে ৮৪ মিনিট পর্যন্ত নাইজেরিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র চলছিল। মার্কোস রোহো সেই সময় ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দারুন এক ভলিতে গোল উপহার দিয়ে তিনি জর্জ সাম্পাওলির দলকে নক আউট পর্বে নিয়ে যান।
দারুণ উত্তেজনাকর এক ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার গিওভানি লো সেলসো বলেছেন, ‘আমি এটাকে অকল্পনীয় কোনো ম্যাচ বলব না। তবে নক আউট পর্বে যাওয়ার পথটা মোটেই সহজ ছিল না। অবশ্যই এই মুহূর্তটা কিছুটা অস্বস্তিদায়ক ছিল। কারণ সবকিছুই ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছিল। কিন্তু একটি দল হিসেবে যা যা ব্যবহার করা প্রয়োজন আমরা করেছি। ম্যাচে জয়লাভের জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। এখন ফ্রান্সকে মোকাবেলা করার জন্য আমরা আরো বেশি শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছি।’
ডেনমার্কের বিপক্ষে ফ্রান্সের হতাশাজনক পারফরমেন্সে পরে আবারো মূল একাদশে ফিরেছেন পল পগবা। আর্জেন্টিনার মধ্যমাঠ এখনো সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি। আর সেই সুযোগটাই কাল কাজে লাগাতে পারেন পগবা। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মেসি রাশিয়ায় নিজের পারফরমেন্স দিয়ে সমর্থকদের সন্তুষ্ট করতে না পারলেও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে যে গোলটি তিনি করেছেন তাতে আরো একবার প্রমান হয়েছে কেন মেসি সেরা।
এই নিয়ে ১২বারের মত ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকান জায়ান্টরা ছয়টিতে জয়ী ও দুটিতে ড্র করেছে। আর্জেন্টিনা তাদের শেষ ১৩টি বিশ্বকাপের ১২টিতেই প্রথম পর্ব পার করেছে। শুধুমাত্র ২০০২ সালে নক আউটের আগে তাদের বিদায় ঘটেছিল। শেষ চারটি নক আউট ম্যাচে তারা মাত্র দুটি গোল দিতে পেরেছে। নক আউট পর্বে আর্জেন্টাইন তারকা মেসি এখন পর্যন্ত কোন গোল করতে পারেননি। ফ্রান্সের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে তিনিই গোল করেছিলেন। ২০০৯ সালের প্রীতি ম্যাচটিতে ২-০ গোলে জয়ী হয়েছিল আর্জেন্টিনা।
ফ্রেঞ্চ তারকা অলিভার জিরুদ বড় কোনো টুর্নামেন্টে ৩৫৭ মিনিট কোনো গোলের দেখা পাননি। সর্বশেষ আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ইউরো ২০১৬’র কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি গোল করেছিলেন। এই ম্যাচের মাধ্যমে ফ্রান্সের কোচ দেশ্যমও অনন্য এক রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে সর্বোচ্চ ৮০টি ম্যাচে দায়িত্ব পালনের নতুন রেকর্ডে তিনি আজ পিছনে ফেলবেন রেমন্ড ডমিনিককে।