যে ক্ষেত্রে মেসিরা ফ্রান্সের চেয়ে এগিয়ে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৯ জুন ২০১৮, ২১:৫০, আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮, ০০:২৯
আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হওয়ার গৌরব রয়েছে দুই দলেরই। এই দুই দলের খেলা দিয়েই শনিবার শুরু হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর লড়াই। সাবেক দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে পরিসংখ্যান অবশ্য আর্জেন্টিনারই পক্ষে। এখন পর্যন্ত ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, আর্জেন্টিনা জিতেছে ছয়বার, তিনবার ড্র এবং দুটি ম্যাচে ফ্রান্স জিতেছে।
শুধু তাই নয়, কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এখনো জিততে পারেনি ফ্রান্স। যে দুটি ম্যাচ জিতেছে ফ্রান্স, দুটিই আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ।
ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপে। সেবার আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জিতেছিল। ৩৫ বছর পর ১৯৬৫ সালে আবার দুই দল মুখোমুখি হয় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে, সোবার অবশ্য গোলশূন্য ড্র হয়েছিল।
১৯৭১ সালে আবার প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুই দল, অবশ্য সেবার ৪-৩ গোলে জেতে ফ্রান্স। একই বছর দ্বিতীয় ম্যাচে দুই দলের লড়াইয়ে অবশ্য আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে জিতেছিল।
এ ছাড়া ১৯৭২ সালে ড্র, ১৯৭৪ সালে আর্জেন্টিনার জয়, ১৯৭৭ সালে ড্র এবং ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জিতেছে। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে ফ্রান্স জিতেছে এবং ২০০৭ ও ২০০৯ সালে জিতেছে আর্জেন্টিনা।
এবারের বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াইটি কেমন হয় সেটাই এখন দেখার। অবশ্য গ্রুপ পর্বে থেকে শেষ ষোলোতে আসতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। মেসিরা ‘ডি’ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে এবং ফ্রান্স বেশ দাপট দেখিয়ে ‘সি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বে ওঠে।
আরো পড়ুন : টপ টেনে নেই মেসি
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শেষে খেলোয়াড়দের র্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। এতে শীর্ষে যথারীতি পর্তুগালের তারকা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পাওয়ার র্যাংকিংয়ের ২ এ আছেন ব্রাজিলের সারা জাগানো ফুটবলার ফিলিপ কুটিনহো। নেইমার নাম্বার থ্রীতে।
শুক্রবার স্কাই স্পোর্টস বিশ্বকাপ রাশিয়া ২০১৮ এর প্রকাশিত ৫০ জনের ওই পাওয়ার র্যাংকিংয়ে লিওনেল মেসিকে খুঁজে বের করতে বেশ কষ্ট পেতে হবে। টপ ফাইভ তো দুরে থাক, টপ টেনেও নেই তিনি। এবার মেসির যে পারফরমেন্স তাতে তাকে নিয়ে গেছে ১৯ এ। চার নাম্বারে বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার লুকাকু। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেন আছেন ৫ এ। কলম্বিয়ার ইয়ারি মিনা আছেন ৬ এ। তারকা ফুটবলারদের অন্যান্যদের মধ্যে লুইস সুয়ারেজ আছেন ১১ তে। স্পেনের থিয়াগো কস্তা ১৬ তে। তবে পয়েন্ট প্রাপ্তিতে রোনালদো সবার ধরাছোয়ার বাইরে থেকেই শীর্ষে রয়েছেন। তার প্রাপ্ত পয়েন্ট ১০৮১০। ২ নাম্বারে থাকা কুটিনহোর পয়েন্ট ৯১৮৪। নেইমারের ৮৯৩০। হ্যারি কেনের ৮১০২। লিওনেল মেসির পয়েন্ট ৬২৮৬।
আরো পড়ুন : সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে পারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা একটি স্পন্দনের নাম। যা শিহরিত হয় স্বপ্নের মাঝেও। এই দুই দল একদিন বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলবে সেই স্বপ্ন অনেক দিনের। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু পরেও অনেকে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনালের সম্ভাবনার কথা বলে ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে দ্বিতীয় রাউন্ড ও কোয়ার্টার অতিক্রম করতে পারলে সেমিফাইনালে প্রিয় দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ থাকছে, সাথে ফুটবলপ্রেমীদেরও সুযোগ রয়েছে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের ‘গ্রেটেস্ট’ অংশটুকু দেখবার।
রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই এবার রহস্যময়তা দেখা। শেষ ষোলো নির্ধারণ হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার রাতেই। দুর্ভাগ্যবশত গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে বাদ দিয়েই নির্ধারণ যায় রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা ষোলোটি দল। সেরা ষোলোটি দলে অনেক নাটকীয়তার পরও জায়গা করে নিয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা, নেইমার জুনিয়রের ব্রাজিল। পাশাপাশি আছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।
বর্তমান বিশ্বের সেরা তিনজন ফুটবলার যদি চান, তাহলে তারা তাদের দল নিয়ে মুখোমুখি হতে পারেন নিজেদের। এর জন্য রয়েছে কিছু অপ্রিয় সমীকরণ। শনিবার রাত ৮টায় আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্সের এবং রাত ১২টায় উরুগুয়ে মুখোমুখি হচ্ছে পর্তুগালের। রাত ৮টার ম্যাচে আর্জেন্টিনা অথবা ফ্রান্সকে বিদায় নিতে হবে শেষ ষোলো থেকেই। রাত ১২টার ম্যাচেও তাই, রোনালদোর পর্তুগাল অথবা দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে, যেকোনো এক দলকে বিদায় দেবে রাশিয়া।
এখানেই চলে আসে সমীকরণ। যদি আর্জেন্টিনা জিতে যায় ফ্রান্সের সাথে এবং পর্তুগাল জিতে যায় উরুগুয়ের সঙ্গে, তাহলে তারা মুখোমুখি হবে শেষ আটে, অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনালে। বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের ক্লাসিকো ফুটবল বিশ্ব অনেকবার দেখেছে, ক্লাবের জার্সি পরে সেখানে রথের আসনে বসে ছিলেন মেসি ও রোনালদো। যদি সেটা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে হয়, তাহলে কেমন জমবে, সেটিই দেখার জন্য মুখিয়ে ফুটবল বিশ্ব। অন্যদিকে নেইমার বা ব্রাজিল দল যদি চায় তাহলে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা অথবা পর্তুগালের সঙ্গে।
সে ক্ষেত্রে ২ জুলাই রাত ৮টার ম্যাচ জিততে হবে মেক্সিকোর সাথে। শুধু তাই নয়, সেদিন রাত ১২টায় মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম বনাম জাপান, সেই বেলজিয়াম অথবা জাপান যে কারো সাথেই কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হতে হবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ব্রাজিল যদি কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষকে হারাতে পারে, তবেই সেমিফাইনালে দেখা হতে পারে আর্জেন্টিনা অথবা পর্তুগালের সঙ্গে। অর্থাৎ মেসি-নেইমার-রোনালদো তিন লিভিং অসামনেসরই সুযোগ রয়েছে নিজেদের দল নিয়ে নিজেদের মুখোমুখি হওয়ার। আর ফুটবলপ্রেমীদেরও সুযোগ রয়েছে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের 'গ্রেটেস্ট' অংশটুকু দেখবার। এর জন্য সমর্থকদের করতে হবে অপেক্ষা আর খেলোয়াড়দের করতে হবে তিতিক্ষা।