০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

নেতৃত্ব সঙ্কটে ব্রাজিল

ফুটবল
নেতৃত্ব সঙ্কটে ব্রাজিল - ছবি: সংগৃহীত

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল মাঠে নামলো মার্সেলোর নেতৃত্বে। ১-১ এ ম্যাচ শেষ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই ভিন্ন চিত্র। এবার থিয়েগো সিলভার হাতে আর্মব্যান্ড। কোস্টারিকার বিপক্ষে ২-০তে জয় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। সার্বিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে আগের দুইজনের কেউই অধিনায়কত্বে নেই। অথচ আছেন একাদশে। কোচ তিতে নেতৃত্বের ভার তুলে দেন মিরান্ডার হাতে। দলও জয় পেল ২-০ গোলে। এবং স্থান গ্রুপ সেরা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে। এখন দেখা যাক মেক্সিকোর বিপক্ষে কার ভাগ্যে জোটে এই সম্মান। অবশ্য থিয়েগো সিলভাকে ক্যাপ্টেন্সি দেয়ার পর বিতর্ক মাথা চাড়া দেয়। এর নেপথ্য, গত বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে তিনি চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকার শট নিতে অস্বীকার করেছিলেন। যা একজন অধিনায়কের কাছে কাম্য নয়।

তিতে যেভাবে এর আগে তার ক্লাব করিন্থিয়ান্স চালিয়েছেন ঠিক সেভাবেই তিনি চালাচ্ছেন রাশিয়া বিশ্বকাপে তার দলকে। একেক দিন একেক জনকে দিচ্ছেন ক্যাপ্টেন্সি। অর্থাৎ কারো উপরই নেতৃত্বের আস্থা রাখতে পারছেন না কোচ। অথচ ব্রাজিল অতীতে কখনই এইভাবে বিশ্বকাপ জয় করেনি। নিদিষ্ট এক জনই পুরো টুর্নামেন্টে টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। কিন্তু তিতে এবার তার দলে প্রতিদিনই নেতৃত্বে বদল আনছেন। অবশ্য তার কাছে এটা পুরোনো বিষয়। মনে হচ্ছে কে মাঠে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তা তার কাছে মুখ্য নয়। ২০১৬ সালে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নেয়ার আগে করিন্থিয়ান্স ক্লাবের কোচ ছিলেন তিতে। সে সময় এক সিজনে তিনি ১৭ জনকে বিভিন্ন ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সির আর্মব্যান্ড দিয়েছিলেন।

এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অধিনায়ক হওয়ার কথা ছিল দানি আলভেজের। ইনজুরিই সে সম্মান থেকে বঞ্চিত করে ২০১০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে খেলা আলভেজকে। হাঁটুর ইনজুরি বিশ্বকাপের আগেই বাদের তালিকায় ফেলে দেয় তাকে। ফলে এখন একেক দিন একেক জন দলের অধিনায়ক হওয়ার সম্মান পাচ্ছেন।

ব্রাজিল দলের অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য নেইমার। বেশ কয়েকম্যাচ এই দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০১৬ অলিম্পিক গেমস পুরুষ ফুটবলে ব্রাজিল স্বর্ন জেতার পর নেইমার নিজ থেকেই দলপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তখন বক্তব্য ছিল, আমার পক্ষে নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব নেয়া সম্ভব নয়। তিতে জাতীয় দলের কোচ হওয়ার পর নেইমারকে ক্যাপ্টেন হওয়ার অনুরোধ জানান। কোচকে খুশী করতে এক ম্যাচেই আর্মব্যান্ড পরেছিলেন নেইমার। তা গত বছর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে।

ব্রাজিল সব সময়ই এক অধিনায়কের অধীনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৫৮ সালে তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয় অধিনায়ক বেল্লিনির অধীনে। ১৯৭০ সালে তিনবারের মতো জুলেরিমে ট্রফি জয়ের সময় নেতৃত্বে ছিলেন কার্লোস আলবার্তো পেরইেরা। নিয়মিত অধিনায়ক রাই ফর্মহীনতায় এবং ইনজুরিতে ভোগায় ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপের মাঝপথে অধিনায়কত্ব দেয়া হয় কার্লোস ডুঙ্গার হাতে। এরপরের কাহিনী সবার জানা। ২৪ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার ব্রাজিলের। ২০০২ সালে তাদের পঞ্চম ট্রফি জয়ের দলপতি ছিলেন কাফু।

এখন ব্রাজিল দলে এমন একজন নেতা দরকার যিনি পারবেন সব কিছু সামলিয়ে দলকে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে। বিজয়ের হাসি ফোটতে।

আরো পড়ুন :

যে কারণে ব্রাজিল এবার সবচেয়ে ফেবারিট
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২৯ মে ২০১৮
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিজ আঙ্গিনায় জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার স্মৃতি এখনো দুঃস্বপ্ন হয়ে চোখে ভাসে ব্রাজিল ভক্তদের চোখে। অথচ এই দলটির পাঁচবার বিশ্বকাপ ঘরে নেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার কাছেই জার্মানির সাথে হারের লজ্জাটা পাত্তা পাচ্ছে না সাম্বা নৃত্যের কাছে। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে ফেবারিট দল ব্রাজিল।

এর কারণ ব্রাজিলের দুর্দান্ত স্কোয়াড। ২০০২ সালের বিশ্বকাপের পর ব্রাজিলের এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডই সম্ভবত সবচেয়ে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ। গোলকিপিং থেকে শুরু করে ডিফেন্স, মিডফিল্ড, ফরওয়ার্ড লাইন—সব ক্ষেত্রেই বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের উপস্থিতি। বিশ্বকাপ জিততে যেটি অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, সেটি হলো শক্তিশালী বেঞ্চ। এখানেও দুর্বলতা নেই ব্রাজিলের। ব্রাজিলের বেঞ্চ দিয়েই আরেকটি একাদশ গড়ে ফেলা সম্ভব।

ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর ভরসা এমন অনেক খেলোয়াড় ব্রাজিলের প্রথম একাদশে জায়গা পাবেন না। সেই তালিকায় থাকতে পারেন এডারসন, ফিরমিনহো, ফার্নান্দিনহো, উইলিয়ান, ডগলাস কস্তার মতো তারকারও। ফলে প্রথম একাদশে যাঁরা খেলবেন, তারাও নিজেদের উজাড় করে দিতে চাইবেন। প্রতিটি জায়গার জন্য একটা দলে যখন তীব্র লড়াই হয় বেঞ্চ বনাম মূল একাদশের সঙ্গে, সেটি একটি দলের ভেতর থেকে বের করে আনে সেরাটা।

এছাড়া ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়রা এখন রয়েছেন দারুণ ফর্মে। এবার ব্রাজিল দলে ডাক পাওয়া প্রত্যেকেই নিজেদের ক্লাবের হয়ে দেখিয়েছেন দারুণ নৈপুণ্য। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে এসেছেন কাসেমিরো, মার্সেলোরা। রানার্সআপ হয়েছেন ফিরমিনহো। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন জেসুস, ফার্নান্দিনহো, দানিলো, এডারসনরা। বার্সেলোনাকে জোড়া শিরোপা জিতিয়েছেন ফিলিপে কুতিনহো, পাউলিনহো। নেইমার তো পিএসজিতে গিয়ে কী আলোটাই ছড়ালেন। এই ক্লাবেই খেলেন মারকুইনহোস, থিয়াগো সিলভা। দানি আলভেজ অবশ্য চোট নিয়ে ছিটকে গেছেন।

ব্রাজিল দলকে যারা সমর্থন করেন, সবারই যুক্তি হলুদ দলটি ছোট পাসে শৈল্পিক খেলা উপহার দেন দর্শকদের। কিন্তু ২০১৪ সালে সেটাই ছিল অনুপস্থিত। সাম্বা নৃত্যের দলটি কেমন যেন খাপছাড়া হয়ে খেলেছিল। চিরচেনা ছন্দের ফুটবল খেলতে দেখা যায়নি ব্রাজিলকে। আশার কথা হলো, বর্তমান কোচ তিতের ফুটবল দর্শন ক্ল্যাসিক্যাল ব্রাজিলীয় ঘরানার। বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলে বিশ্বকাপে এসেছে ব্রাজিল। খেলেছে দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল। ১৮ ম্যাচের দীর্ঘ বাছাইপর্বে যেখানে প্রতিটি ধাপে ধুঁকেছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল হেরেছে এক ম্যাচে। বাছাইপর্বে ৪১ গোল করেছে ব্রাজিল। ১১ গোল খেয়েছে, ১১ ম্যাচে দল কোনো গোল খায়নি। তিতে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মাঝপথে। তিনি আসার পর ১১ ম্যাচে একটিতেও হারেনি দল। এর আগে ৭ ম্যাচে ৬টিতে জিততে পারেনি ব্রাজিল। তিতে আসার পর ব্রাজিল বাছাই পর্বে গোলই খেয়েছে মাত্র তিনটি। কী আক্রমণ, কী মাঝমাঠ, কী রক্ষণ! একই সঙ্গে তিতে ব্রাজিলের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশিয়েছেন আধুনিকতা। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছেন। তাকে অনেকে বলে ল্যাপটপ কোচও।

দু-একটি পরিবর্তন ছাড়া কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি দলে। যার অর্থ, গত বিশ্বকাপের পর আরও চার বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে দলটি। যেই অভিজ্ঞতার অভাবই গতবার ডুবিয়েছিল তাদের। এবারের দলে অভিজ্ঞতা, তারুণ্য কিংবা দলীয় রসায়ন বা বোঝাপড়া, অভাব নেই কোনো কিছুরই। এই দল আরও পরিণত, প্রতিজ্ঞ। ক্লাব ফুটবলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে আসা। এই দলটাই বাছাইপর্বের বেশির ভাগ ম্যাচ খেলেছে। বাকি দলগুলো যেখানে প্রাথমিক স্কোয়াড দিতেই হিমশিম, ব্রাজিল কোচ তিতে সবার আগে ঘোষণা করে দিয়েছেন বিশ্বকাপের ২৩ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াড়! লক্ষ্য কতটা পরিষ্কার!

সবচেয়ে বড় কথা, যে দলে একজন নেইমার খেলেন, সেই দল অন্যদের থেকে এমনিতেই এগিয়ে থাকে। তবে নেইমার একা নন, বিশ্বকাপ জিততে হলে পুরো ব্রাজিল দলকেই জ্বলে উঠতে হবে। যদি যোগ্য সমর্থন নেইমার পান, তাহলে ব্রাজিলের তুরুপের তাস তিনিই হতে যাচ্ছেন। পেলে, গারিঞ্চা, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহোদের উত্তরসূরি হিসেবে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখানোর জন্য এটিই নেইমারের সবচেয়ে ভালো সুযোগ।


আরো সংবাদ



premium cement
লাল কার্ডে মাঠের বাইরে ভিনিসিয়াস ৭ বছর পর লন্ডনে মা ও মাতৃস্নেহ বঞ্চিত ছেলের সাক্ষাৎ রাশিয়ার সু-৩৪ সুপারসনিক বোমারু বিমানের ইউক্রেনের শক্তিশালী অবস্থান কুরস্ক সীমান্তে হামলা মাদুরোর শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে বিক্ষোভ ও সমাবেশের প্রস্তুতি বেনজীরের স্ত্রী-মেয়ের আয়কর নথি জব্দের আদেশ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরাইলি বন্দীদের পরিবারগুলোর মামলা ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব নিয়ে স্বৈরাচারের দোসরদের অপপ্রচারের প্রতিবাদ গ্রামীণ ব্যাংকে কমতে পারে সরকারি মালিকানার অংশীদারিত্ব একেনেকে ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন থিকসানার হ্যাটট্রিকেও জিততে পারল না শ্রীলঙ্কা সাবেক ডিবি প্রধান হারুন ও তার ভাইয়ের আয়কর নথি জব্দের আদেশ

সকল