৯ নম্বর জার্সির মান রাখতে পারছেন না জেসুস
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ, রাশিয়া থেকে
- ২৮ জুন ২০১৮, ২০:৩৮, আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮, ২০:৫২
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের এই ৯ নম্বর জার্সিই গায়ে উঠেছিল রোমারিও, রোনালন্ডো, লুইস ফ্যাবিয়ানো, ফ্রেডদের। এবার এই জার্সি কোচ তিতে দিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। আথচ কোচ কেন, সবার প্রত্যাশার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন জেসুস। রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ শেষ করে ফেলেছে ব্রাজিল। কিন্তু ৯ নম্বর জার্সি গায়ে জেসুসের পক্ষে এখনও গোলের দেখা পাওয়া সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গটা এল এ কারনেই, ৯ নম্বর জার্সি পরে রোনালন্ডো, ফ্যাবিয়ানো, ফ্রেড, রোমারিও সবাই গোল পেয়েছেন বিশ্বকাপে। পারছেন না শুধু জেসুসই। তাই তাকে বাদ দিয়ে রবার্তো ফিরমিনোকে প্রথম একাদশে জায়গা দেয়ার জোর দাবি উঠেছে।
চলমান বিশ্বকাপে ফিফার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তিন ম্যাচে জেসুস মাত্র চার বার গোলে শট নিতে সক্ষম হন। এর কোনোটিই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছায়নি। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়ে গোল করাবেন তাতেও তেমন সাফল্য পাচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত সাফল্য বলতে কোস্টারিকার বিপক্ষে তার পাস থেকে গোল করেন কৌতিনহো। অথচ এরপরও জেসুসকে ম্যাচের পর ম্যাচ প্রথম একাদশে জায়গা দিয়ে যাচ্ছেন কোচ তিতে।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে এই ৯ নম্বর জার্সি পরে ক্রমাগত গোলের উৎসব করেছিলেন রোমারিও। ১৯৯৮ ও ২০০২ এ এই জার্সি গায়ে নিয়মিত গোল পেয়েছেন রোনালন্ডো লুইস। ২০০৬ সালে আদ্রিয়ানো ও ২০১০ সালে লুইস ফ্যাবিয়ানো হেঁটেছেন রোমারিও, রোনালন্ডোদের পথে।। এমনকি ২০১৪ বিশ্বকাপেও হতাশ করেননি ফ্রেড। দেখা পেয়েছেন গোলের। ব্যাতিক্রম শুধু এই জেসুস।
জেসুসের উপর কোচ তিতের আস্থার একটা কারণও আছে। ব্রাজিল জাতীয় দলে যখন কোচ তিতের অভিষেক হয় তখন এই জেসুসই তার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বছর বয়স নিয়েও জেসুস সেদিন জোড়া গোল করেছিলেন ইকুয়েডরের মাটিতে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক উচ্চতার মাঠে অনুষ্ঠিত খেলা এই প্রতিকূলতার মধ্যেও সেই ম্যাচে জয়ও ছিল তিতে- জেসুসদের।
গ্রুপ পর্ব শেষ। এখন মেক্সিকোর বিপক্ষে নক আউট পর্বের ম্যাচ। এই ম্যাচেও জেসুস গোল খরায় ভুগলে সে সুবিধা নেবে প্রতিপক্ষরা। সুতরা তাকে সেই ম্যাচে গোল করতেই হবে। অন্যথায় দল যেমন বাদ পড়ার শংকায় থাকবে তেমনি দল কোর্য়াটারে গেলেও একাদশে স্থান হারাবেন জেসুস। প্রথম দুই ম্যাচে অবশ্য ম্যাচের মাঝখানে কোচ মাঠ থেকে তুলে নিতে বাধ্য হন জেসুসকে; কিন্তু সার্বিয়ার বিপক্ষে তাকে পুরো নব্বই মিনিটই মাঠে রাখা হয়।
ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় দলে আছেন। ১৯ খেলায় গোল করেছেন ১০টি। আর ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ৩৯ ম্যাচে ২০ গোলের মালিক।
আরো পড়ুন : সার্বিয়ার কোচের চোখে আধুনিক ফুটবলের পরাশক্তি ব্রাজিল
সার্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ব্রাজিলকে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছিল। কেননা কোন কারণে ম্যাচটিতে হেরে গেলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা ছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ানদের। কিন্তু বুধবার দিবাগত রাতে মাঠে নামার পর একবারের জন্যও ব্রাজিলের বুকে কাঁপুনি তুলতে পারেনি সার্বিয়ানরা। বরং দুর্দান্ত খেলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হয়ে ব্রাজিল বিদায় জানিয়েছে সার্বিয়াকে।
এই হারের পর, প্রতিপক্ষ ব্রাজিল বলে নিয়তিটা মেনেই নিয়েছেন সার্বিয়া কোচ ম্লাদেন ক্রাস্তাইচ। স্বীকার করে নিয়েছেন ‘আধুনিক ফুটবলের পরাশক্তি’ ব্রাজিলের সাথে তাদের ব্যবধান অনেক।
বুধবার ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরে রাশিয়ার আসর থেকে ছিটকে যায় সার্বিয়া। নকআউট পর্বে উঠতে হলে জিততে হতো সার্বিয়াকে। কিন্তু পাউলিনিয়ো ও চিয়াগো সিলভার গোলে সে আশা গুঁড়িয়ে যায়। ম্যাচ শেষে ব্রাজিলের সাথে সার্বিয়ার ব্যবধান তুলে ধরেন ক্রাস্তাইচ।
‘ব্রাজিলের গোল করার মুহূর্তটি ছাড়া প্রথমার্ধে আমরা এগিয়ে ছিলাম। এ মুহূর্তগুলোতেই খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যটা বেরিয়ে আসে।’
‘আমরা একটা আধুনিক ফুটবলের পরাশক্তির বিপক্ষে জয়ের জন্য নেমেছিলাম এবং আমরা সেটা পারিনি। তবে আমি আমাদের খেলোয়াড়দের তাদের সাহসী প্রচেষ্টা, সার্বিয়ার ব্যাজ এবং জার্সির প্রতি তাদের মনোভাবের জন্য অভিনন্দন জানাই।’
‘আমরা ওপরে উঠে খেলেছি এবং দ্বিতীয়ার্ধে ঝুঁকি নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ব্রাজিলের মতো ফুটবল পরাশক্তিদের বিপক্ষে এমন একটি ম্যাচ খেলা খুবই কঠিন।’
‘ফুটবলে এটাই হয়। আমাদেরকে নিজেদের খেলার মান ওপরে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা আরও বেশি ঝুঁকি নিয়েছিলাম। আমরা আমাদের সুযোগ পেলাম কিন্তু আমরা শাস্তি পেলাম।’
ম্যাচের ৬৮তম মিনিটে নেইমারের কর্নারে সিলভা ব্যবধান দ্বিগুণ করার আগ মুহূর্তে ব্রাজিলকে ভীষণ চাপে রেখেছিল সার্বিয়া। কিন্তু ওই গোলের পর সার্বিয়াকে কোণঠাসা করে ফেলে তিতের দল। ক্রাস্তাইচ ব্রাজিলের রক্ষণের প্রশংসাও করেছেন।
‘যখন আপনি রক্ষণ সামলাবেন, আপনাকে শৃঙ্খল হতে হবে। এবং এটা শুধু দেখিয়েছে আসলেই ব্রাজিল কতটা শক্তিশালী।’
গত অক্টোবরে দায়িত্ব পাওয়া ম্লাদেনের অধীনে রাশিয়ার আসরে খেলতে আসা সার্বিয়া গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের দুটিতে হেরেছে; একটিতে জিতেছে। ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থেকে ছিটকে গেছে। তবে কোচের দাবি, দল তাদের সবটুকুই দিয়েছে।
‘ছেলেরা তাদের সবটুকু দিয়েছিল। আট বছর বড় টুর্নামেন্টে খেলতে না পারার পর বিশ্বকাপে এসে আমরা আমাদের সত্যিকারের জাতটা দেখাতে চেয়েছিলাম। আমাদের পারফরম্যান্সে আমরা তৃপ্ত হতে পারি।’
‘আমরা জানি ব্রাজিল কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। যা হয়েছে, হয়ে গেছে। আমরা ২-০ গোলে হেরেছি। এটাই জীবন।’