০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬
`

গ্যালারিতে সার্বদের ওপর ব্রাজিল সমর্থকদের হামলা

সেই মারামারির দৃশ্য - ছবি : এএফপি

মাঠে যখন নেইমার, কৌতিনহোরা সার্বিয়ার গোল পোস্টে একের পর এক হানা দিয়ে যাচ্ছিল, তখন মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামের গ্যালরিতে চলছিলো অন্য কাণ্ড। কয়েক সার্বিয়ান সমর্থকের ওপর চড়াও হয়েছে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা।

তবে মাঠে সার্বিয়া গোল হজম করলেও মারের জবাবে তাঁরাও মার ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক জানিয়েছে, গ্যালারিতে ঠিক কী কারণে এই মারপিট শুরু হয়েছিল, তা জানা যায়নি। তবে দুই দলের সমর্থকদের এই মারামারির মধ্যে পড়েছিলেন এক নারী ফুটবলপ্রেমী। ব্রাজিলের জার্সি পরিহিত কয়েক সমর্থক তাঁকে আঘাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তাকর্মীদের হস্তক্ষেপে থেমেছে এই মারপিট।

সার্বিয়ান দর্শকদের ওপর হামলা ব্রাজিলিয়ানদের

আগের দিন ক্রোয়েশিয়া-আর্জেন্টিনা ম্যাচ চলাকালে স্টেডিয়ামের মধ্যে কয়েক ক্রোয়াট সমর্থককে পিটিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো। প্রতিবেশী ব্রাজিলিয়ানরাও হয়তো তাই দেখিয়ে দিয়েছে একচোট। তবে পাশ থেকে আরো কিছু ব্রাজিলিয়ান সাপোর্টার এসে নিবৃত করে আক্রমণকারী সাপোর্টারদের। নিরাপত্তাকর্মীরাও ছুটে এসেছে পরিস্থিতি শান্ত করতে। দুই দলের সমর্থকদের এই মারামারির মধ্যে পড়েছিলেন এক নারী সার্বিয়ান সমর্থক। ব্রাজিলের জার্সি পরিহিত কয়েক সমর্থক তাঁকে আঘাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে এ ঘটনায় পুলিশ কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কী না তা জানা জায়নি।

আরো পড়ুন :  নেইমারের অতি অভিনয় বিপদে ফেলবে ব্রাজিলকে!
পোলিশ রেফারি স্জিমন মারচিনিয়াক শনিবারের জার্মানি ও সুইডেনের উত্তেজনাকর ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজানোর পর সামাজিক মাধ্যমে মানুষের আনাগোনা দারুণভাবে বেড়ে যায়। প্রায় সবার পোস্ট, টুইট বা মন্তব্যেই টনি ক্রুসের শেষ মিনিটের ফ্রি কিকের কথা লেখা হয়। এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয়েও পোস্ট করে মানুষ। 'নেইমারের মত কান্না' করেননি বলে প্রশংসা করা হয় ক্রুসের।

পরের দিনই ইনজুরি সময়ের গোলে জয় পাওয়ায় ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ব্রাজিল সমর্থকরাও সেদিন সামাজিক মাধ্যমে অসহানুভূতিশীল মন্তব্যই করেছেন। আর এ থেকেই এবারের বিশ্বকাপে নেইমারের অবস্থাটা বোঝা যায়।

এবারের বিশ্বকাপে সবাই বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের সমালোচনায় আগ্রহী। গত কয়েকসপ্তাহে নেইমারকে নিয়ে তৈরি করা হাস্যরসাত্মক পোস্টগুলো ছড়িয়ে পরেছে সামাজিক মাধ্যমে। যে বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা চলছে সেটি হলো, ফাউল আদায় করতে নেইমারের অতি অল্পতেই পড়ে যাওয়া ও আহত হওয়ার ভান করা।

সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে রিও ডি জেনিরো'র একটি পানশালায় এমনও ঘোষণা দেয়া হয় যে, 'নেইমারের প্রতিটি ডাইভের জন্য একটি করে পানীয়' দেয়া হবে বিনামূল্যে।

গত বছর দুই শ' মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের বিনিময়ে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যোগ দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হন নেইমার। বিলাসবহুল জীবনযাত্রার কারণে অনেকেই তাকে কিছুটা নেতিবাচকভাবে দেখেন। যদিও ব্রাজিলে আরো অনেকে মিলিয়নিয়ার ফুটবলারই আছেন।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই নেইমার তার মেজাজ হারান। কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর মাঠে তার কান্নার সমালোচনার জবাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইন্সটাগ্রাম পোস্টে লেখেন, "টিয়া পাখিও কথা বলতে পারে।"

কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচে রেফারির সাথে অসদাচরণের কারণে হলুদ কার্ড দেখেন নেইমার। ভিডিও অ্যাসিস্টান্ট রেফারির রিভিউর পর তার একটি পেনাল্টি আবেদন নাকচ হয়ে যায়। যেখানে নাটকীয় ব্যবহারে রেফারিকে প্ররোচণার চেষ্টার অপরাধে লাল কার্ডও দেখতে পারতেন তিনি। তবে ওই ম্যাচে গোল করে অনেক সমালোচনারই জবাব দেন তিনি।

কোস্টারিকার বিপক্ষে ওই গোলটি ছিল নেইমারের ৫৬তম আন্তর্জাতিক গোল। এর ফলে ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন তিনি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী রোমারিওকে টপকে তিনি এই স্থান দখল করেন।

এই অর্জনের পর নেইমারের প্রশংসাই করেছেন রোমারিও। ইন্সটাগ্রামে এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার লিখেছেন, " নেইমার তুমি যা পারো আর যা করতে সক্ষম তা এই বিশ্বকাপে এখনো দেখাতে না পারলেও আমি বিশ্বাস করি তুমি পারবে।"

১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ও ব্রাজিলের অন্যতম সম্মানিত ফুটবল বিশেষজ্ঞ টোস্টাও মনে করেন অতি অভিনয়ের কারণে নিজেকে ও দলকে বিপদে ফেলতে পারেন নেইমার। কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর টোস্টাও লেখেন, "তিনি মাঠে অভিযোগ করতেই থাকেন আর মেজাজও প্রদর্শন করেন। এরকম ক্ষেত্রে সবসময়ই কার্ড দেখার সম্ভাবনা থাকে।"

"ওর মাঠের বাইরের কাজকর্মের চেয়ে মাঠের ভেতরের আচরণ আমাকে বেশি ভয় পাওয়ায়।"

সমস্যা হলো নেইমার যাই করেন তা নিয়েই বিশ্লেষণ শুরু হয়ে যায়। কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর তার কান্না নিয়ে মনোবিশারদ থেকে শুরু করে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্ট, সবাই নানাবিধ আলোচনা করেছেন ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যমে। এমনকি ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা ডা'সিলভা, যিনি বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন, ব্রাজিলের একটি টেলিভিশনের ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বার্তা পাঠান।

লুলা লেখেন, "নেইমারের কান্নার দৃশ্য থেকেই তার মানসিক অবস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়।"


আরো সংবাদ



premium cement