০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬
`

ইতালি স্পেনের পর জার্মানি

আগের বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা প্রথম রাউন্ডেই বাদ - ছবি : সংগ্রহ

টানা তিন আসরে একটি অদ্ভুত ঘটনার স্বাক্ষী হলো বিশ্বকাপ ফুটবল। ঘটনাটি কী? আগের বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা প্রথম রাউন্ডেই বাদ। আর এই শতাব্দীতে এমন ঘটনা হলো চারবার। আর এই প্রতিটি ঘটনার শিকার ইউরোপ অঞ্চলের দেশ।

প্রতি বিশ্বকাপেই কিছু না কিছু অঘটন হয়ে থাকে। কখনো বড় হল আচমকা হেরে বিদায় নেয়,কখনোবা কোন কম শক্তির দল পৌছে যায় অনেক দূর। কিন্তু আগের বারের চ্যাম্পিয়ন দলটি প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেবে সেটা কি কেউ ভাবতে পারে। ভাবাটা এখন বুঝি আর কষ্টের নয়, কারণ ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নরা হরহামেশাই এটা করছে।

এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিল এশিয়ান জায়ান্ট দক্ষিণ কোরিয়া। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করে দিল কোরিয়া। অথচ এই ম্যাচে নামার আগে অনেকটা নির্ভার ছিল জোয়াকিম লোর শিষ্যরা। এই ম্যাচে নূন্যতম ব্যবধানে হারাতে পারলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যেতে পারতো তারা। ১৯৩৮ সালের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিল জার্মানি।

এর আগের দুই বিশ্বকাপে একই পরিণতি দেখেছে স্পেন আর ইতালি। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইতালি ২০১০ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়। ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনও ইতালির পথ ধরে ২০১৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। সেই পথেই হাঁটলো বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্স ১৯৯৮ সালে নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতার পর ২০০২ সালে জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ডের দুই ম্যাচ হেরে।

এক বিশ্বকাপে কাপ নিয়ে পরের বার গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ গেছে এমন ঘটনা কম না। একটু পেছন ফিরে তাকালে এই তালিকায় আসবে ব্রাজিলের নাম। ১৯৬২তে কাপ জয়ী ব্রাজিল পরের বার বরণ করেছে একই পরিণতি। তালিকায় দুইবার আছে একমাত্র ইতালির নাম। ২০১০ সালের আগেও একবার তারা এই পরিণতি বরণ করেছিলো। সেটা ১৯৫০ সালে।

জার্মানির লজ্জাজনক বিদায়
অপেক্ষাকৃত দুর্বল দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নের মতো খেলতে পারলোনা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। বারবারই হোচট খেয়েছে কোরিয়ান সীমানায়। তাতেই কপাল পুড়লো জার্মানির। সারা ম্যাচে একটি গোলের দেখা না পাওয়া জার্মানি পুড়লো হতাশায়। বরং অতিরিক্ত সময়ে কোরিয়া ২ গোল করে জার্মানির পরাজয় আরো সুনিশ্চিত করলো। শেষ ষোলোয় যাওয়ার পথে আরো বড় বাধা হয়ে দাড়ালো গ্রুপের অন্য ম্যাচে থাকা সুইডেন।

তারা ৩-০ গোলে হারালো আগেই ছয় পয়েন্ট পাওয়া মেক্সিকোকে। তাতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তিন গোল ব্যাবধানে এগিয়ে থেকে গ্রুপ সেরা সুইডেন। সমান পয়েন্ট নিয়ে মেক্সিকো রানার্স আপ। বিদায় নিলো জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়া।

কাজানে প্রথমার্ধে জার্মানি যেভাবে খেলল তেমনটা দ্বিতীয়ার্ধেও অব্যাহত থাকলো। গ্যালারিভর্তি দর্শকদের হৈ হুল্লোড়ে আনন্দদায়ক উল্লাস করতে পারেনি একবারও। শুধু আফসোসেরই শব্দ উচ্চারিত হলো পুরোটা সময় জুড়ে। শেষ ষোল নিশ্চিত করার ম্যাচে জার্মানরা চ্যাম্পিয়নের মতো খেলতে পারেনি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ৫টি পরিবর্তন নিয়েও প্রাধান্য বিস্তার করে খেলতে পারেনি। তাতে ‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য। ওদিকে একাতেরিনবার্গে গ্রুপ লিডার মেক্সিকোর বিপক্ষে সুইডেনের ম্যাচের প্রথমার্ধের ফলও তাই।

১৯৯০ বিশ্বকাপ থেকে সবসময়ই গ্রুপপর্বেও শেষ ম্যাচটা জিতেছে জার্মানি। শুরু থেকেই আক্রমণে তারা। দক্ষিণ কোরিয়া এসময় রক্ষনাত্মক ভুমিকায়। মাঝে মাঝে আক্রমনে যাচ্ছিল এশিয়ার দেশটি। ১৪ মিনিটে জার্মানির প্রথম আক্রমণ। কিন্তু রেয়াস বায়ে ওয়ের্নারকে বল না দিয়ে ডানে গোরেজকাকে দিলেন। ওই ক্রস কোরিয়ান রক্ষণে লেগে কর্নারে পরিণত।

১৯ মিনিটে ফ্রি-কিকের পর বিপদ ঘটতে যাচ্ছিল জার্মানির। জাংয়ের শট গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ার ধরতে গিয়ে ঠিক মতো পারলেন না। বলের ফ্লাইট মিস করলেন। বক্সের ৬ গজের মধ্যেই বল। ফিরে আসা ওই বলকে সন জালে জড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ। ৩৯ মিনিটে কোরিয়ার ভুলে এগিয়ে যেতে পারতো জার্মানি। কিম একটি সুযোগ উপহার দিলেন প্রতিপক্ষকে। ওয়েরনারের শট প্রতিপক্ষেও খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে বাইরে।

বিরতির পর আটঘাট বেধে নামলেও সুবিধা করতে পারেনি কোন দলই। তবে আক্রমনে অনেকগুন বেশি এগিয়ে ছিল মুলার বাহিনী। রক্ষনভাগের কৌশলেই মুলত পিছিয়ে যাচ্ছিল জার্মানির ফরোয়ার্ডরা। মাঝে মাঝে পাল্টা আক্রমনে জার্মানিকে কিছুটা কাপিয়ে দিচ্ছিল কোরিয়া। কিন্তু গোল নামক বস্তুটি থেকে দুরেই ছিল। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের পর যোগ করা সময়ে (৯০+২) কিম ইয়ং গোন জটলা থেকে গোল করেন। কিন্ত অফসাইডের সিগন্যাল। তবে ভিএআর পদ্ধতিতে জয়ী হয় কোরিয়া (১-০)।

এসময় জার্মানি কীপার সহ উপরে উঠে আসলে ৯০+৬ মিনিটে অতি চালাকিতে কোরিয়ার ডিফেন্ডার জু বল সজোরে উড়িয়ে মারেন জার্মানি সিমানায়। সন হিউয়েং মিন দৌড়ে এসে বল জড়ান জালে (২-০)। তাতেই হৃদয় ভাঙ্গে জার্মানির। তিন ম্যাচে এক জয় নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে কোরিয়া।


আরো সংবাদ



premium cement