‘মেসির তো দুই পা’ই সমান’
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ রাশিয়া থেকে
- ২৭ জুন ২০১৮, ১৯:৩১, আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮, ১৯:৪০
বাম পায়ের খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। তার যত গোল কিংবা নিখুঁত পাস- বেশির ভাগই বাম পায়ে। তবে ডান পায়েও ভালো তিনি। এই পায়ে গোলও আছে। দিতে পারেন চমৎকার পাসও। মঙ্গলবার সেন্ট পির্টাসবার্গে তার এই ডান পায়ের নিশানাভেদী শটেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচে অন্যদের মতো হয়তো গোলের সময় তাকে মার্কিংয়ে রাখা নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষক ভেবেছিলেন ডান পায়ে শট নিবেননা মেসি। অথচ সবাই কে বিস্মিত সেই ডান পায়েই চমৎকার শট নিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। আর তাতে পরাস্ত বিপক্ষ দলের শেষ প্রহরী ফ্রান্সিস উজোহো। অবশ্য আগেই মেসির গতির কাছে পিছিয়ে পড়েন ডিফেন্ডার কেনেথ ওমেরু। মেসির এই ডান পায়ের গোল প্রসঙ্গেই নাইজেরিয়ার জার্মান কোজ গারনট রোর বললেন, আমরা সবাই জানি মেসি বাম পায়ের ফুটবলার। আসলে তার তো দুই পা’ই সমান। সে একজন গ্রেট ফুটবলার। সে ছিল সুযোগে অপেক্ষায়। চান্স পাওয়া মাত্রই বল জালে পাঠিয়েছে।
মেসিকে মার্কিংয়ে রাখা ডিফেন্ডোর কেনেথ ওমেরুর কোনো দোষ দিলেন না নাইজেরিয়ান কোচ। তার মতে, ‘ওমেরু সাধ্য মতো চেষ্টা করেছে; কিন্তু মেসির গতি আর স্কিলের কাছে হার মারতে বাধ্য হয়েছে সে। আমি কোনোভাবেই এই লেফট ব্যাকের দোষ দেবো না।’ কেনেথ ওমেরুসহ অন্য ফুটবলাদের প্রশংসা করলেন রোর। তার মতে, ‘আমি এই ফুটবলারদের নিয়ে গর্বিত। এরা অধিকাংশই তরুণ। তারা বেশ ভালো খেলেছে। শেষ কয় মিনিটের ভুলেই হেরে বিদায় নিতে হলো নাইজেরিয়াকে। অথচ আমাদের স্বপ্ন জিইয়ে ছিল নক আউট পর্বে যাওযার।’ ‘ডি’ গ্রুপকে টাফ হিসেবেও উল্লেখ করলেন তিনি। আরো জানান ,গালারি ভর্তি আজেন্টাইন দর্শকদের সামনে খেলা মানে ১২ জনের বিপক্ষে ১১ জনের ম্যাচ। এরা সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি গান গেয়ে দলকে উৎসাহ দেয়।
তবে এই নাইজেরিয়ান কোচের আফসোস- এবার আফ্রিকান দলগুলোর পারফরম্যান্সে। মরক্কো, তিউনিসিয়া ,মিসর ও নাইজেরিয়ার নকআউট পর্বে যেতে না পারার জন্য। সুযোগ ছিল নাইজেরিয়ার; কিন্তু নষ্ট হলো তা। বললেন, আসলে অন্যদের সাথে আফ্রিকান দেশগুলোর পার্থক্য স্পষ্ট হয়েছে। তার মতে, নাইজেরিয়ার যে পেনাল্টির দাবী রেফারি ভিডিও দেখে বাতিল করছেন তা আসলেই পেনাল্টি ছিল না। আর্জেন্টাইন ওই ডিফেন্ডার তো বল ইচ্ছে করে হাতে লাগায়নি।
এদিকে দলের হার ও বিদায়ের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেন নাইজেরিয়ান ফুটবলার ওডিওন ইগালু। তার মতে, এটা ফুটবল। আমাদের সুযোগ ছিল আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়ার। এমনকি ড্র করলেও হতো; কিন্তু তা করতে পারলাম না। এজন্য ক্ষমা চাচ্ছি দেশবাসীর কাছে।
পেনাল্টি থেকে সমতা আনা ভিক্টোর মোসেজের বক্তব্য, গোলের সুযোগ মিসের খেসারত দিয়েই আমরা বিদায় নিলাম। সাথে পিছু নিয়েছিল ভুল। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারলে দেশের ফুটবলের উপকার হতো। এখন আমাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যত নিয়ে। আমাদের আনেক প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে। সামনে আছে আফ্রিকান নেশসন কাপ। সেখানে সম্ভাবনা রয়েছে শিরোপা জেতার।
দলের আরেক সদস্য সিমিয়ন এন ওয়ানকো নাইজেরিয়ার বিদায়কে আপসেট বলে অবিহিত করলেন। জানান, আমরা তো ড্র করলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতাম।
আরো পড়ুন : ‘আমাদের ছেড়ে যেওনা, সালাহ’
চেচনিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের পরই সংবাদ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে- মিসর দলকে গুডবাই জানাতে পারেন সুপারস্টার মোহাম্মাদ সালাহ। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের একটি রিপোর্টের সূত্রেই এই খবরটি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এরপরই সালাহ ভক্তরা তার প্রতি অনুরোধ করেছেন যাচ্ছেন এমন ‘অমানবিক সিদ্ধান্ত’ না নিতে।
এবারের বিশ্বকাপটি ভালো কাটেনি ‘মিসরীয় সম্রাট’ মোহাম্মাদ সালাহ’র। লিভারপুল এফসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ইনজুরিতে পড়ার কারণে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি। দল হেরে গেছে উরুগুয়ের কাছে। দ্বিতীয় ম্যাচে হাফ-ফিট সালাহ মাঠে নামলেও দলকে জেতাতে পারেননি রাশিয়ার বিরুদ্ধে। তৃতীয় ম্যাচেও সৌদি আরবের কাছে হেরে গেছে মিসর। ফলে ব্যক্তিগত ভাবে দুই ম্যাচে দুটি গোল করলেও দলীয়ভাবে কোন অজর্নই নেই সালাহ’র। ২৮ বছর পর খেলতে এসে খালি হাতে মিসর বিদায় নিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে।
তবে রাশিয়ার চেচনিয়া প্রদেশের প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভের সাথে ছবি তোলার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে সালাহ’র। রমজান কাদিরভ সালাহর ইমেজ ব্যবহার করে মুসলিম বিশ্বের কাছে নিজের ভাবমূর্তি বাড়াতে চান বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এরপরই ওঠে সালাহ’র অবসরের গুঞ্জন। চেচনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতা করে মস্কোর সাথে আতাতের ভিত্তিতে চেচনিয়ার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন রমজানের বাবা। বাবার মৃত্যুর পর রমজান হয়েছে প্রেসিডেন্ট। তাই মুসলিম বিশ্বের কাছে রমজান কাদিরভের রয়েছে নেতিবাচক ইমেজ। কাদিরভের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীমত দমনের ব্যাপক অভিযোগ আছে। মস্কোর সহায়তায় স্বাধীনতাপন্থীদের ওপর তার দমন-নিপীড়ন কারো অজানা নয়।
একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে,সালাহ ফুটবলের বাইরে অন্য কোন বিষয়ে জড়াতে চান না। এবং কারো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারও হতে চান না। আর এ কারণেই তিনি অবসর নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিন্তু সালাহ ভক্তরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রিয় তারকার জাতীয় দল ছাড়ার এই খবর। যদিও এখন পর্যন্ত এর সত্যতা মেলেনি, তবু তারা সরব হয়েছেন এর বিরুদ্ধে। সবাই সালাহকে অনুরোধ করছেন মিসরের হয়ে খেলা অব্যাহত রাখতে। টুইটারে ইতোমধ্যেই ‘আই অ্যাম উইথ সালাহ’ হ্যাশ ট্যাগ চালু হয়েছে। ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ক্যাম্পেইনটি। ভক্তরা সালাহর ইমেজের এই অপব্যহারের জন্য দুষছে মিসরীয় ফুটবল ফেডারেশনকে। তারা মনে করছেন মিসরীয় ফুটবল ফেডারেশন রমজান কাদিরভকে সালাহ’র ইমেজ ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে।
এসরা এম আয়মান নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘সালাহ আমাদের ছেড়ে যেওনা। এই দেশের সেরা সম্পদ তুমি, তুমি ছাড়া আমরা অর্থহীন।’ জিজো ভিক নামে আরেক সালাহ ভ্ক্ত লিখেছে, ‘বুঝতে পারছি কেন তুমি আর মিসরের হয়ে খেলতে চাওনা। যারা তোমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে সব সময় আমাদের পাশে পাবে। একশো মিলিয়ন লোকের স্বপ্ন তুমি।’
নাসরিন মুসা নামের এক নারীভক্ত লিখেছেন,‘তিনি শুধু ফুটবল খেলতে চান। আমরা তোমার সাথে আছি সালাহ’। বদি কিনাওয়ে নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘সালাহ শুধুমাত্র একজন ফুটবলার। তাকে রাজনীতিতে জড়ানো বন্ধ করুন’।
করিম জিদান নামে একজন এই ঘটনার জন্য ফিফা ও মিসরীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দুষছেন। তিনিও মনে করেন সালাহকে রাজনীতির হাতিয়ার বানানো হয়েছে।
মিসরীয় ফুটবল ফেডারেশন অবশ্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সালাহ দলের সাথেই সার্বক্ষণিক আছেন। কাজেই তিনি অবসরের সম্ভাবনার কথা বা এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত ফেডারশনকে জানানি।