ফর্মে নেই নেইমার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৭ জুন ২০১৮, ১৫:৪৮
ব্রাজিলের কোচ তিতে নেইমারের কাঁধে "দলের পুরো দায়িত্ব" চাপিয়ে না দিতে ব্রাজিল সমর্থকদের কাছে অনুরোধ করেছেন।
২৬ বছর বয়সী নেইমার পায়ের ইনজুরিতে প্রায় তিন মাস মাঠের বাইরে থেকে সম্প্রতি খেলায় ফিরেছেন।
ব্রাজিলের প্রথম দুই বিশ্বকাপ ম্যাচের পারফরমেন্সের জন্য দারুণ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে পিএসজি ফরোয়ার্ডকে।
তিতে বলেন, "তিনি সহজাত প্রতিভাসম্পন্ন একজন খেলোয়াড়। কিন্তু এবার নিজের মান অনুযায়ী খেলতে পারছেন না বলেই এভাবে খেলছেন। চোট কাটিয়ে এখনো পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি তিনি।"
কোচ তিতে বলেন, "শেষ দুই ম্যাচে নেইমারের 'হিট ম্যাপ' দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন তিনি কীভাবে ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। তার পারফরমেন্স ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।"
তিতে বলেন, "হয়তো পরের ম্যাচে নেইমার তার সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলাটা খেলতে পারবেন। কিন্তু দলের পুরো দায়িত্ব তার ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিৎ হবে না।"
২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন নেইমার। ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি ওই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, যে ম্যাচে ব্রাজিল জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে ধরাশায়ী হয়।
এবারের আসরে কোস্টারিকার বিপক্ষ জয়ের পর মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কান্না নিয়েও নানাধরণের সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
তিতে বলেন, "অনেক সময় মাঠে ঠাণ্ডা মাথায়, অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করে আচরণ করতে হয়।"
"খেলোয়াড়রা কতটা চাপের মধ্যে থাকেন এবং তাদের মধ্যে কতটা আবেগ কাজ করে তা সম্পর্কে আমরা জানি। আবেগের সাথে যুক্তির সমন্বয় করে মাঠে খেলা চালিয়ে যেতে হয়। কিন্তু অতিরিক্ত আবেগ থাকা মানেই যে সেই খেলোয়াড় ভারসাম্যহীন - এই বিশ্বাস একেবারেই ঠিক নয়।"
গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষম্যাচে ব্রাজিল খেলবে সার্বিয়ার বিপক্ষে। গ্রুপের আরেক ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের প্রতিপক্ষ কোস্টারিকা।
গ্রুপ ই'র সমীকরণ
- সার্বিয়ার বিপক্ষে ড্র করলেই নক আউট পর্ব নিশ্চিত হবে ব্রাজিলের।
- ব্রাজিল আর সুইজারল্যান্ড একই ব্যবধানে নিজ নিজ ম্যাচে জয় পেলে গ্রুপ সেরা নির্ধারিত হতে পারে কার্ডের হিসেবে। ব্রাজিলের হলুদ কার্ড তিনটি, সুইজারল্যান্ডের চারটি। দুই দল যদি একই ব্যবধানে হেরে যায় তাহলে দ্বিতীয় স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় আসবে কার্ডের হিসেব।
- ব্রাজিল সার্বিয়াকে হারালে কোস্টারিকার সাথে ড্র করলেই পরের পর্ব নিশ্চিত হবে সুইজারল্যান্ডের।
- সুইজারল্যান্ডে এক গোলে হারলে এবং সার্বিয়া ড্র করলে দ্বিতীয় স্থান নির্ধারিত হবে কারা বেশি গোল করেছে সেই ভিত্তিতে। সেই হিসেবে দুই দল সমান হলে সুইজারল্যান্ড পরের পর্বে যাবে কারণ তারা সার্বিয়াকে গ্রুপ ম্যাচে হারিয়েছে।
- ব্রাজিলকে হারালে পরের পর্বে যাবে সার্বিয়া। সুইজারল্যান্ড এক গোলের বেশি ব্যবধানে কোস্টারিকার কাছে হারলে ড্র করলেই নিশ্চিত হবে সার্বিয়ার পরের পর্ব।
আরো পড়ুন : নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে পারছে না নেইমাররা
'ই' গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ মস্কোর স্পাটার্ক স্টেডিয়ামে সার্বিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। আজকের ম্যাচে শুধু ড্র করলেই নক আউটে পৌছে যাবে ব্রাজিল। তবে দুশ্চিন্তার ব্যাপার হলো, যদি সার্বিয়া জিতে যায়! অঘটন ঘটতে কতক্ষণ? ইতোমধ্যে অনেক অঘটন তো ঘটেছেই। তাই নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে পারছে না নেইমাররা। তবে তাদের লক্ষ্য বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া। যাতে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে মাঠে নামতে পারে সেলেকাও ব্রিগেড।
কোচ তিতেও চান তার দল দ্বিতীয় রাউন্ডের আগে কমপক্ষে একটা ম্যাচ বেশি গোলের ব্যবধানে জিতুক। গত দুটি ম্যাচে সেই কাঙ্খিত বড় জয় এখনও আসেনি। ফুটবল নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের বাঁধন ছেঁড়া আবেগ অনেক ক্ষেত্রেই অতীতে সাম্বা ব্রিগেডকে কাঁদিয়েছে।
আগের ম্যাচে অনেক চেষ্টার পর ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন নেইমার। আর তার পরেই তিনি আনন্দাশ্রুতে ভেসে যান। নতজানু হয়ে জার্সি দিয়ে মুখ ঢেকে নেইমার ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন।
কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ব্রাজিল দুটি গোলই করেছিল শেষ মুহূর্তে। প্রথম ম্যাচে সুইসদের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে উপভোগ্য পাসিং ফুটবল খেলেও ১-১ ড্র সাম্বা ফুটবলপ্রেমীদের হতাশ করেছিল।
ব্রাজিলের স্বপ্ন এখন আবর্তিত হচ্ছে ফিলিপে কুতিনহো ও নেইমারকে কেন্দ্র করে। কুতিনহো প্রথম দুটি ম্যাচেই ব্রাজিলের হয়ে গোলের খাতা খুলে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। সুইসদের বিরুদ্ধে তার প্রথম গোলটি ছিল এক কথায় অসাধারণ। আর কোস্টারিকার বিরুদ্ধে রোমারিওর স্টাইলে বুটের ডগা দিয়ে কুটিনহোর করা গোলটি প্রখর উপস্থিত বুদ্ধির ফসল। নেইমার ও কুতিনহো দু’জনেই গোল পেয়ে এখন চাপমুক্ত। ডগলাস কস্তার চোট রয়েছে। কোচ তিতে তাই রবার্তো ফারমিনোকে প্রথম একাদশে রাখতেই পারেন। পাওলিনহোর জায়গায় ফার্নান্দিনহো এবং রেনাতো অগাস্টোর কথাও মাথায় ঘুরছে কোচ তিতের। মাঝমাঠে উইলিয়ান মন্দের ভালো। রাইট ব্যাকে চোট পাওয়া ড্যানিলোর জায়গায় অনভিজ্ঞ ফাগনার কিংবা মার্কুইনহোস খেলবেন। বাকি তিন ডিফেন্ডার যথারীতি মার্সেলো, থিয়াগো সিলভা ও মিরান্দা। গোলে অবশ্যই অ্যালিসন। মাঝে থিয়াগো সিলভার সাথে মনোমালিন্য হয়েছিল নেইমারের।
এই প্রসঙ্গে থিয়াগো সিলভা বলেছিলেন, ‘নেইমার আমার ছোটো ভাইয়ের মতো। ওকে সৎ পরামর্শই দিয়ে থাকি। তবে ওর অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত পায়ে বল রাখা, বিপক্ষ প্লেয়ারদের ফাউল করতে আমন্ত্রণ জানানো এবং প্লে-অ্যাকটিং আমার ঘোর অপছন্দ।’
ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ সার্বিয়া যথেষ্ট শক্তিশালী দল। দুই উইং ব্যাকে কোলারভ ও ইভানোভিচ প্রচুর বড় ম্যাচ খেলেছেন। এছাড়া দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার অ্যালেকজান্ডার মিত্রোভিচ শূন্যে ও জমিতে ফাঁকায় বল ফেলে নেট ছিঁড়ে দিতে পারেন। তিন বছর আগে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে গ্যাব্রিয়েল হেসাস সহ ব্রাজিল দলকে ২-১ গোলে হারিয়ে সার্বিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই দলের পাঁচজন বুধবার খেলবেন। এই জয়ই সার্বিয়ার অনুপ্রেরণা। সেই দলের ডুসান ট্যাডিচ ও মিলিঙ্কোভিচ আজ খেলবেন। উভয়েই টপ ক্লাস ফুটবলার। তবে ইউরোপিয়ান দেশের বিরুদ্ধে একটা সুযোগ পেলেই তা ব্রাজিলকে গোলে পরিণত করতে হবে।