নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে পারছে না নেইমাররা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৭ জুন ২০১৮, ১২:৪৭, আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮, ১২:৫৮
'ই' গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ মস্কোর স্পাটার্ক স্টেডিয়ামে সার্বিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। আজকের ম্যাচে শুধু ড্র করলেই নক আউটে পৌছে যাবে ব্রাজিল। তবে দুশ্চিন্তার ব্যাপার হলো, যদি সার্বিয়া জিতে যায়! অঘটন ঘটতে কতক্ষণ? ইতোমধ্যে অনেক অঘটন তো ঘটেছেই। তাই নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে পারছে না নেইমাররা। তবে তাদের লক্ষ্য বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া। যাতে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে মাঠে নামতে পারে সেলেকাও ব্রিগেড।
কোচ তিতেও চান তার দল দ্বিতীয় রাউন্ডের আগে কমপক্ষে একটা ম্যাচ বেশি গোলের ব্যবধানে জিতুক। গত দুটি ম্যাচে সেই কাঙ্খিত বড় জয় এখনও আসেনি। ফুটবল নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের বাঁধন ছেঁড়া আবেগ অনেক ক্ষেত্রেই অতীতে সাম্বা ব্রিগেডকে কাঁদিয়েছে।
আগের ম্যাচে অনেক চেষ্টার পর ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন নেইমার। আর তার পরেই তিনি আনন্দাশ্রুতে ভেসে যান। নতজানু হয়ে জার্সি দিয়ে মুখ ঢেকে নেইমার ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন।
কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ব্রাজিল দুটি গোলই করেছিল শেষ মুহূর্তে। প্রথম ম্যাচে সুইসদের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে উপভোগ্য পাসিং ফুটবল খেলেও ১-১ ড্র সাম্বা ফুটবলপ্রেমীদের হতাশ করেছিল।
ব্রাজিলের স্বপ্ন এখন আবর্তিত হচ্ছে ফিলিপে কুতিনহো ও নেইমারকে কেন্দ্র করে। কুতিনহো প্রথম দুটি ম্যাচেই ব্রাজিলের হয়ে গোলের খাতা খুলে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন। সুইসদের বিরুদ্ধে তার প্রথম গোলটি ছিল এক কথায় অসাধারণ। আর কোস্টারিকার বিরুদ্ধে রোমারিওর স্টাইলে বুটের ডগা দিয়ে কুটিনহোর করা গোলটি প্রখর উপস্থিত বুদ্ধির ফসল। নেইমার ও কুতিনহো দু’জনেই গোল পেয়ে এখন চাপমুক্ত। ডগলাস কস্তার চোট রয়েছে। কোচ তিতে তাই রবার্তো ফারমিনোকে প্রথম একাদশে রাখতেই পারেন। পাওলিনহোর জায়গায় ফার্নান্দিনহো এবং রেনাতো অগাস্টোর কথাও মাথায় ঘুরছে কোচ তিতের। মাঝমাঠে উইলিয়ান মন্দের ভালো। রাইট ব্যাকে চোট পাওয়া ড্যানিলোর জায়গায় অনভিজ্ঞ ফাগনার কিংবা মার্কুইনহোস খেলবেন। বাকি তিন ডিফেন্ডার যথারীতি মার্সেলো, থিয়াগো সিলভা ও মিরান্দা। গোলে অবশ্যই অ্যালিসন। মাঝে থিয়াগো সিলভার সাথে মনোমালিন্য হয়েছিল নেইমারের।
এই প্রসঙ্গে থিয়াগো সিলভা বলেছিলেন, ‘নেইমার আমার ছোটো ভাইয়ের মতো। ওকে সৎ পরামর্শই দিয়ে থাকি। তবে ওর অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত পায়ে বল রাখা, বিপক্ষ প্লেয়ারদের ফাউল করতে আমন্ত্রণ জানানো এবং প্লে-অ্যাকটিং আমার ঘোর অপছন্দ।’
ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ সার্বিয়া যথেষ্ট শক্তিশালী দল। দুই উইং ব্যাকে কোলারভ ও ইভানোভিচ প্রচুর বড় ম্যাচ খেলেছেন। এছাড়া দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকার অ্যালেকজান্ডার মিত্রোভিচ শূন্যে ও জমিতে ফাঁকায় বল ফেলে নেট ছিঁড়ে দিতে পারেন। তিন বছর আগে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে গ্যাব্রিয়েল হেসাস সহ ব্রাজিল দলকে ২-১ গোলে হারিয়ে সার্বিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই দলের পাঁচজন বুধবার খেলবেন। এই জয়ই সার্বিয়ার অনুপ্রেরণা। সেই দলের ডুসান ট্যাডিচ ও মিলিঙ্কোভিচ আজ খেলবেন। উভয়েই টপ ক্লাস ফুটবলার। তবে ইউরোপিয়ান দেশের বিরুদ্ধে একটা সুযোগ পেলেই তা ব্রাজিলকে গোলে পরিণত করতে হবে।
আরো পড়ুন : কুতিনহোয় ভরসা কাকার
ফিলিপ কুতিনহোর পারফরম্যান্স ব্রাজিলের রাশান বিশ্বকাপের সাফল্য-ব্যর্থতায় ‘এক্স ফ্যাক্টর’ ভূমিকা রাখবে বলেই দাবি করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক প্লে-মেকার রিকার্ডে কাকা। পুরোপুরি ফিটনেস পুনরুদ্ধার ইস্যুতে সঙ্কটের ফাঁদে আটকা প্যারিস সেন্ট জার্মেই তারকা নেইমারকে আগলে রাখার দায়িত্ব পালনে ব্রাজিলকে এগিয়ে আসার আহ্বানও করেন ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডার। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো-হ্যারি কিনের মতো নেইমারেরও সামর্থ্য রয়েছে লাতিন জায়ান্টদের বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেয়ার। রোববার ইএসপিএনকে দেয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের সাবেক প্লে-মেকার কাকা।
তার মতে, বার্সেলোনা তারকা কুতিনহোর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে মুখ্য ভূমিকা রাখবে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে লাতিন জায়ান্টদের স্বপ্নপূরণের সাফল্য-ব্যর্থতা।
কাকা বলেন, ‘নেইমার আমাদের সেরা ফুটবলার। তাকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়ায় দারুণ পরিপক্বতার স্বাক্ষর রেখেছেন কোচ তিতে। মাঠের পজিশন বেছে নেয়ায় পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছেন সেন্ট জার্মেই তারকা। প্রতিটি নতুন ম্যাচেই দল হিসেবে পারফরম্যান্সের উন্নতির প্রশ্নে তিতের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। বিশ্বকাপের ব্রাজিল অত্যন্ত শক্তিশালী। এখনো পর্যন্ত দলটির জার্সিতে মাঠের ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে উদ্ভাসিত কুতিনহো। ফিফার ২১তম বিশ্বকাপে তার ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ইতোমধ্যে ব্রাজিলের প্রত্যাশিত ফল অর্জনের কেন্দ্রবিন্দু দখলে নিয়েছে।’
মাঠের পজিশনে পুরোদস্তুর মিডফিল্ডার কুতিনহো। তবে গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচেই তিনি দলীয় প্রয়োজনের মুহূর্তে স্ট্রাইকারের দায়িত্ব পালন করেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। ফলে ব্রাজিলও রক্ষা পেয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে। গ্রুপের উদ্বোধনী খেলায় সুইসদের বিপক্ষে কুতিনহোর গোলেই প্রথমে লিড নেয় ব্রাজিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড্র’র ফাঁদে আটকা দলটিকে টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও টেনশন মুক্ত করেন বার্সার প্লে-মেকার। দ্বিতীয়ার্ধের সূচনায় তিনি এগিয়ে দেন সেলেকাও খ্যাত ব্রাজিলকে। টুর্নামেন্টে দলটির প্রথম জয়োৎসবের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় রাশান আসরে নেইমারের বহু-প্রতীক্ষিত অভিষেক গোলে।
কোস্টারিকার বিপক্ষে গোলের সাফল্য সত্ত্বেও ই গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেইমারের কাছ থেকে অতি-মানবীয় নৈপুণ্যের প্রত্যাশার সুযোগ পাচ্ছে না ব্রাজিল। দীর্ঘ ৩ মাসের ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে প্রত্যাবর্তন সুখকর হয়নি সেন্ট জার্মেইয়ের তারকার। সুইসদের বিপক্ষে দশের অধিক ট্যাকল হজম নিশ্চিত করেছে নেইমারের পুরনো ইনজুরি সঙ্কটের প্রত্যাবর্তন। সঙ্গত কারণেই ব্রাজিলের নক-আউটে উন্নীতের প্রশ্নেও কুতিনহোর দৃশ্যপট দখলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তার বিকল্প দেখছেন না ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন কাকা। তার বিশ্বাস, আরেকটু সময় পেলে নেইমারও গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারে পরিণত হবেন ব্রাজিলের স্বপ্নপূরণের সাফল্যে।
কাকা বলেন, ‘প্রতি ম্যাচেই উন্নতি হচ্ছে নেইমারের। আরেকটু সময় পেলেই নিশ্চিত হবে তার স্বরূপে প্রত্যাবর্তন। তার শতভাগ ফিটনেস পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় কুতিনহোর দায়িত্ব নিয়ে খেলার সামর্থ্য হতবাক করেছে আমাকে। বর্তমান দলের প্রতি বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। নক-আউটে উঠতে পারলে নতুন ব্রাজিলের আবির্ভাব সময়ের ব্যাপার মাত্র।’
আজ ই গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ খেলায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মুখোমুখি হবে সার্বিয়ার। দুই দলের জন্যই ম্যাচটি অত্যন্ত অর্থবহ দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার ক্ষেত্রে। কোনোভাবেই হারলে চলবে না ব্রাজিলের। অন্য দিকে একমাত্র জয়ই সার্বিয়ার হাতের মুঠোয় চলে যাবে রাউন্ড অব সিক্সটিন রেসের নিয়ন্ত্রণ।